বিপুল টাকাসহ পাউবোর দুই প্রকৌশলী আটক, পালালেন ঠিকাদার
পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডে (পাইবো) বিপুল অর্থসহ দুই উপ বিভাগীয় প্রকৌশলীকে আটক করেছে পুলিশ। আজ মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) ঠিকাদারের সঙ্গে অবৈধ এ লেনদেনের অভিযোগে তাঁদের আটক করা হয়।
এর আগে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যান ঠিকাদার রাজিবসহ কয়েকজন।
সূত্র বলছে, ঠিকাদার ও কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে বিল-ভাউচারের মাধ্যমে বিপুল অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ অনুসন্ধানে পাবনা পাউবোতে যান সংবাদকর্মীরা। এ সময় তথ্য ও বক্তব্যের জন্য পাউবোর উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী মাসুদ রানার কক্ষে গেলে ওই কক্ষ ভেতর থেকে বন্ধ পান। কয়েকবার নক করার পর মাসুদ রানা দরজা খুললে ঠিকাদার আরিফুজ্জামান রাজিব কমিশনার ও পাউবোর এসডি মোশাররফসহ কয়েকজনকে দেখতে পান সংবাদকর্মীরা। এ সময় টেবিলে বিপুল অর্থও দেখা যায় এবং এর পরই আরেক ঠিকাদার কনক সেখানে হাজির হন। সরকারি অফিসে ঠিকাদারের সঙ্গে বন্ধ কক্ষে কিসের অর্থ লেনদেন হচ্ছে জানতে চাইলে তাঁরা কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। তখন সংবাদকর্মীরা বিষয়টিকে সন্দেজনক মনে করে পুলিশকে জানালে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পুলিশ তাঁদের আটক করে। এ ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশনও (দুদক) তদন্ত শুরু করেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা জানান, ২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পাবনা পাউবোর সদ্য সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী এবং সুনামগঞ্জের হাওড়ে বাঁধ নির্মাণকাজে দুর্নীতির দায়ে বারবার প্রত্যাহার হওয়া নির্বাহী প্রকৌশলী আফসার উদ্দিনের তত্ত্বাবধানে মাসুদ রানা ও এসডি মোশাররফের সহযোগিতায় ডিপিএম ও আরএফকিউ পদ্ধতিতে বিভিন্ন ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে বিল ভাউচারের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা আত্মাসাত করা হয়েছে। রাফি কন্সট্রাকশনের স্বত্বাধিকারী ঠিকাদার আরিফুজ্জামান রাজিব কমিশনার এবং ঠিকাদার কনকের প্রতিষ্ঠানের নামে এসব টাকা উত্তোলন করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা তদন্ত করছে। এসব তদন্তে অনিয়মের মাধ্যমে বিপুল অর্থ আত্মসাতের প্রমাণ মিলেছে বলেও জানান ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তা।
এ ব্যাপারে পাবনা পাউবোর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সুধাংশু কুমার সরকার বলেন, ‘ঘটনাটি আমরা জানতে পেরেছি। দুদক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিষয়টি দেখছেন। কোথাকার টাকা, কীভাবে লেনদেন হলো—সে বিষয়ে খোঁজ নিয়ে সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অর্থ ও প্রশাসন) মাসুদ আলম বলেন, দুই কর্মকর্তাকে আটকসহ টাকাগুলো জব্দ করা হয়েছে। জব্দ করা টাকা দুদকের কর্মকর্তারা গণনা করছেন। টাকার উৎস অনুসন্ধান করা হচ্ছে। আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। দুদকের গণনায় পাঁচ লাখ ৭০ হাজার টাকা জব্দ করা হয়েছে, একই সঙ্গে তাদের আটক করে থানায় নেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে দুদক পাবনা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মোহাম্মদ খাইরুল হক ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘পুলিশ আটক করলেও দুদক আইনে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা হবে।’