রিজার্ভ আর অবৈধ সরকারের পতন ঠেকানো যাবে না : এবি পার্টি
আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির নেতারা বলেছেন, ‘গণতন্ত্র ও সুশাসন নিশ্চিত না করলে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ আর ফাইভ পার্সেন্ট অবৈধ ডামি সরকারের পতন কোনোভাবেই ঠেকানো যাবে না।’
আজ বুধবার (১৫ মে) দুপুরে রাজধানীর বিজয়নগরে এবি পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এ মন্তব্য করেন দলের নেতারা।
অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা, আমদানি-রপ্তানির নামে ডলার পাচার ও উচ্চ দ্রব্যমূল্যে জনগণের চরম ভোগান্তির প্রতিবাদে এই মিডিয়া ব্রিফিংয়ের আয়োজন করে এবি পার্টি। মিডিয়া ব্রিফিংয়ে বক্তব্য দেন দলের আহ্বায়ক সাবেক সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান এ এফ এম সোলায়মান চৌধুরী, সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু ও পার্টির অর্থ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম এফসিএ। এ সময় অন্যান্য নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এ বি পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক বি এম নাজমুল হক, যুগ্ম সদস্য সচিব ও দপ্তর সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন রানা, প্রচার সম্পাদক আনোয়ার সাদাত টুটুল ও মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আলতাফ হোসাইনসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।
এবি পার্টির আহ্বায়ক সোলায়মান চৌধুরী বলেন, ‘দেশে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে, এটা সত্য, কিন্তু আসলে কি উন্নয়ন হয়েছে? নাকি উন্নয়নের নামে লুটপাট হয়েছে? সেটা একটা বিরাট প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
সোলায়মান চৌধুরী বলেন, ‘পাঁচটি ধানে যদি একটি চাল উৎপাদন হয় তাকে আমরা কি উন্নয়ন হিসেবে গ্রহণ করব? কুইকরেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জের নামে দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে, যা সরকারের বিভিন্ন সিন্ডিকেট সদস্যরা করেছে।’
এবি পার্টির এই নেতা আরও অভিযোগ করে বলেন, ‘দেশের মানুষ কাজ পাচ্ছে না, অথচ প্রতিবেশী একটি দেশের হাজার হাজার মানুষ এখানে অবৈধভাবে কাজ করছে, দেশের টাকা বিদেশে নিয়ে যাচ্ছে। ব্যাংকগুলো জবরদখল করে দলীয় লোকজনের মধ্যে বণ্টন করা হয়েছে। এর প্রধান উদ্দেশ্যই ছিল জনগণের আমানত যেনতেনভাবে নিজেদের পকেটে ঢোকানো।’
সোলায়মান চৌধুরী বলেন, ‘রিজার্ভ আজ শূন্য হতে চলেছে। দেশ আজ অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার চোরাবলিতে আটকে গেছে।’ অর্থনৈতিক এই সংকটে দেশের সবাইকে তিনি সচেতন ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।
মিডিয়া ব্রিফিংয়ে দলটির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘এই সরকার কম গণতন্ত্র, বেশি উন্নয়নের স্লোগান দিয়ে দেশের মানুষ ও বুদ্ধিজীবী মহলকে বোঝাতে চেয়েছেন, তারা দেশকে সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ডের মতো উন্নত দেশে পরিণত করবেন। তাদের কাছে গণতন্ত্র, মানবাধিকার গুরুত্বপূর্ণ নয়, তথাকথিত উন্নয়ন গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন মেগাপ্রকল্পের চিত্র তুলে ধরে জনগণকে ধোঁকা দিয়ে নিজেদের সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে সরকার দলীয় লোকজন ও কিছু আমলা। প্রকৃতভাবে এখন আমরা কি দেখতে পাচ্ছি, দেশে রিজার্ভের পরিমাণ এসে দাঁড়িয়েছে ১৩ বিলিয়ন ডলারে, যদিও সরকার বলছে, এর পরিমাণ ১৮ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু আইএমএফসহ আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বলেছে, ব্যবহার যোগ্য রিজার্ভ রয়েছে ১৩ বিলিয়ন ডলার।’
মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘বহু বছর ধরে দেশে ঘাটতি বাজেট দেওয়া হচ্ছে, ব্যাংকগুলো আজ লুটপাট হয়ে গিয়েছে। সিপিডি বলেছে, ৯২ হাজার কোটি টাকা ব্যাংক থেকে লুটপাট হয়েছে দুটি পার্টিকুলার অনিয়মের মাধ্যমে, যা বাংলাদেশের ব্যাংকের গোচরে হয়েছে। খেলাপি ঋণ এখন দাঁড়িয়েছে ৬০ হাজার কোটি টাকার উপরে, যা ২০০৮ সালে ছিল ২২ হাজার কোটি টাকা। এই সরকার ক্ষমতা অবৈধভাবে আঁকড়ে থাকার সুবিধার্থে সরকারি চাকরিজীবীদের খুশি রাখতে তাদের বেতন-ভাতা বাড়িয়েছে। শত শত কর্মকর্তাদের বসিয়ে রেখে জনগণের টাকায় বেতন দেওয়া হচ্ছে, যাদের কোনো কাজ নেই। বিদ্যুৎখাতের লুটপাটের বিষয়েতো পৃথিবীতে অনন্য রেকর্ড গড়ার মতো। এই সকল অব্যবস্থাপনা ও অনিয়মের মূল কারণই হচ্ছে একটি অনির্বাচিত দখলদার সরকারের ক্ষমতায় বসে থাকা। রিজার্ভের পতন ও ডলারের দরপতনের সঙ্গে সঙ্গে এই অবৈধ ডামি সরকারের পতন অনিবার্য হয়ে উঠেছে।’
সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানিয়ে এবি পার্টির অর্থ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম এফসিএ বলেন, ‘দেশের অর্থিক সংকট শুরু হয়েছে রাজনৈতিকভাবে এর সমাধানও রাজনৈতিকভাবে হতে হবে। এই সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই ২০১০ সালে শেয়ার বাজার লুটপাট করা হয়েছে, যার ফলে দেশের মানুষের কান্না আমরা দেখতে পেয়েছি। বর্তমান সব আর্থিক সংকট এই ধরনের রাজনৈতিক লুটপাটের মাধ্যমেই হয়েছে। কাজেই পরিকল্পিতভাবে যারা দেশের মানুষের শেয়ারবাজারের টাকা, ব্যাংকের টাকা, ঋণের টাকা লুটপাট করেছে, তাদের পতন ছাড়া সংকট উত্তরণের কোনো উপায় নেই।’
ব্রিফিংয়ে আরও উপস্থিত ছিলেন এবি পার্টির সিনিয়র সহকারী সদস্য সচিব আব্দুল বাসেত মারজান, যুব পার্টির সদস্য সচিব শাহাদাতুল্লাহ টুটুল, যুব পার্টি মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক হাদিউজ্জামান খোকন, এবি পার্টি ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম আহ্বায়ক গাজী নাসির, যুগ্ম সদস্য সচিব কেফায়েত হোসেন তানভীর, আহমেদ বারকাজ নাসির, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল হালিম নান্নু, যুব পার্টি মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব সেলিম খান, যুব পার্টি মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব শাহিনুর আক্তার শীলা, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মশিউর রহমান মিলু, শরণ চৌধুরী, আমেনা বেগম, সুমাইয়া শারমিন ফারহানাসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগরীর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।