সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম ভারতে নিখোঁজ, কলকাতায় জিডি
ভারতে চিকিৎসার জন্য যাওয়া ঝিনাইদহ-৪ (কালীগঞ্জ) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের খোঁজ মিলছে না। গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য পশ্চিবঙ্গে যান তিনি। এরপর সেখান থেকে ১৬ মে দিল্লি যাওয়ার কথা বলে নিখোঁজ হন তিনি।
এ বিষয়ে গতকাল শনিবার (১৮ মে) কলকাতার বরানগর থানায় জিডি করা হয়েছে। সংসদ সদস্যের স্বজনরা ভারতে গেছেন। এদিকে পরিবারের সদস্যরা ঢাকায় ডিবি পুলিশের সহযোগিতা চেয়েছেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এমপির ব্যক্তিগত সহকারী (পিএ) আব্দুর রউফ। তিনি (পিএ) জানান, গত ১৩ মে কথা হলেও ১৬ মে মিস কল পেয়েছেন। কল বেকের পরিবর্তে পাঠানো হয়েছে রহস্যজনক একটি মেসেজ। সেই থেকে চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রয়েছেন সংসদ সদস্যের পরিবারের সদস্যরা। স্ত্রী ইয়াসমিন ফেরদৌস ন্যামভবনের (এমপি হোস্টেল) বাসায় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। বড় মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন, ছোট মেয়ে অরিন ফেরদৌস বাবার সন্ধান না পেয়ে ভেঙে পড়েছেন। কালীগঞ্জের নেতাকর্মীরাও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। এ ঘটনায় সরকারের উচ্চ মহলে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
আব্দুর রউফ আরও জানান, আজ রোববার (১৯ মে) সংসদ সদস্যের মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন ঢাকার মিন্টু রোডে ডিবি কার্যালয়ে যান। সঙ্গে ছিলেন তিনিও। সেখানে ডিবির কাছে মৌখিকভাবে সাহায্যর আবেদন জানান তাঁরা।
আব্দুর রউফ বলেন, বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সরকারের উচ্চ মহলে জানানো হয়েছে। গতকাল শনিবার ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার বারইনগর থানায় একটি জিডি করেছেন গোপাল নামের এক ব্যক্তি। বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাওয়ার পরে ওই ব্যক্তির বাড়িতে উঠেছিলেন সংসদ সদস্য আনার।
ওই জিডি সূত্রে জানা যায়, ১২ মে সন্ধ্যা ৭টার দিকে কলকাতার ১৭/৩ মওলপাড়া লেনের বাসিন্দা মৃত ষষ্টীরামের ছেলে গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে গিয়ে উঠেন সংসদ সদস্য আনার। দীর্ঘ ২০-২৫ বছরের পারিবারিক সম্পর্ক তাদের। ১৩ মে বেলা ১টা ৪১ মিনিটের দিকে ডাক্তার দেখানোর জন্য গোপালের বাড়ি থেকে বের হন আনার। এরপর একটি গাড়িতে উঠেন। কলকাতা পাবলিক স্কুলের সামনে বিধান পার্কে যাওয়ার কথা বলেন তিনি। সেময় শুভজিত মান্না নামের এক ব্যক্তি তাঁকে গাড়িতে উঠতে দেখেছেন বলে জিডিত উল্লেখ করা হয়েছে। যাওয়ার সময় বলে যান দুপুরে খাব না। ১৫ মে বেলা ১১টা ২১ মিনিটের সময় দিল্লি পৌঁছিয়ে গেলাম বলে গোপালের হোস্টএপে মেসেস পাঠান সংসদ সদস্য। এই মেসেস পাঠানো হয় তাঁর পিএ রউফসহ পরিবারের কাছেও।
এ বিষয়ে রউফ বলেন, মেসেজটি ভুয়া। কারণ তিনি ওই ধরনের মেসেজ লিখতে পারেন না। গোপালের (ভারত) সঙ্গে ফোনে কয়েক দফা কথা বলেছেন তিনি। এতে সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয়েছে। তাই গতকাল শনিবার ভারতে গেছেন সংসদ সদস্যের কয়েকজন স্বজন। তাঁরা তাঁর বন্ধুদের কাছে খোঁজ নিচ্ছেন।
জানা যায় গত ১২ মে দুপুরের দিকে সংসদ সদস্য আনার দর্শনা ইমিগ্রেশন থেকে জাতীয় পতাকা লটকানো একটি ভ্যানে চড়ে ভারতের গেদে ইমিগ্রেশনের দিকে রওনা হন। এ সময় লাল টি-শার্ট পরা ভ্যানচালক তাঁকে নিয়ে যান। বেটারিচালিত ওই ভ্যানে দেখা যায় একটি লাগেজ। ওই ভ্যানে যাত্রী একাই ছিলেন সংসদ সদস্য। কূটনীতিক পাসপোর্টে গেদে বর্ডার পার হন তিনি (এমপি)।
এ বিষয়ে সংসদ সদস্যের স্ত্রী ইয়াসমিন ফেরদৌস ও বড় মেয়ে ডরিনের মোবাইল ফোনে যোগযোগ করা হলে তাঁরা কথা বলেননি।
কালীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র (এমপির ঘনিষ্ট সহচর) আশরাফুল ইসলাম বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো সংবাদ আমরা পাইনি। ভারতে লোক পাঠানো হয়েছে। পরিবারের সদস্যরা কলকাতায় বাংলাদেশ দুতাবাসে আছেন। আমারা চেষ্টা করছি তার খোঁজ করার। স্ত্রী ও দুই মেয়ে ঢাকায় এমপি হোস্টেলে অবস্থান করছেন। তাঁর নিখোজের খবরের এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। কালীগঞ্জ আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে ভিড় করে আছেন তাঁর সর্মথকরা।
কালীগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ আবু আজিফ এ প্রতিবেদকের ফোন ধরেননি। তবে তিনি আজ দুপুরে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে বলেছেন, ‘সংসদ সদস্য নিখোঁজ থাকার খবর সাংবাদিকদের মাধ্যমে শুনেছি। পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ কিছুই জানায়নি। কেউ অভিযোগও করেনি।’
আনার নিখোঁজের বিষয়টি রহস্যজনক বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে গুরুত্বপূর্ণ গণমাধ্যমের শিরোনামে তাঁর প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে নানা তথ্য উঠে এসেছে। সংসদ নির্বাচনের হলফনামাতেও বেশ কয়েকটি মামলার নম্বর উল্লেখ আছে। যে কারণে নিখোঁজের সমীকরণ কোনো ভাবেই মেলানো যাচ্ছে না।
আনোয়ারুল আজীম আনার ঝিনাইদহ-৪ আসনের বর্তমান সরকারদলীয় সংসদ সদস্য। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে টানা তিনবার আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এক দফায় কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানও ছিলেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন তিনি।