সন্ধ্যার পর আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড় রিমাল, ঝুঁকিতে যেসব জেলা
বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় রিমাল শক্তি বাড়িয়ে ক্রমশ উপকূলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ইতোমধ্যে উপকূলীয় অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি হচ্ছে। আজ রোববার (২৬ মে) বিকেলের পর থেকে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব বৃদ্ধি পেতে পারে এবং সন্ধ্যার পর যেকোনো সময় এটি উপকূলীয় অঞ্চল অতিক্রম করা শুরু করতে পারে বলে আশঙ্কা করছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আবহাওয়া অফিস জানায়, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে দেশের উপকূলীয় ১৫ জেলা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোতে জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া দেশের আট বিভাগেই ভারী বর্ষণ হতে পারে বলেও জানানো হয়। এ ছাড়া পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর এবং কক্সবাজার ও চট্টগ্রামকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ড. আবুল কালাম মল্লিক সংবাদমাধ্যমকে বলেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি ঘূর্ণিঝড় শক্তি অর্জন করছে। রোববার বিকেল ৩টার পর থেকেই এটির প্রভাব বৃদ্ধি পেতে পারে। পরে সন্ধ্যা থেকে রাত ১২টার মধ্যে যেকোনো সময় এটি উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
এদিকে আজ সকালে আবহাওয়াবিদ খো. হাফিজুর রহমান ৯নং বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তার আশপাশের এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’ গতকাল শনিবার দিনগত গভীর রাত পর্যন্ত চট্রগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৪০৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৪০ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩০০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হতে পারে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটার এর মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে। এ অবস্থায় মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত এবং চট্রগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠী, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোতে জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা রয়েছে। এসব জেলার নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩ থেকে ৫ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ু তাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে বলে জানায় আবহাওয়া অধিদপ্তর।
ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নিদেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
গতকাল শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় আবহাওয়াবিদ মো. মনোয়ার হোসেন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়, আজ রোববার (২৬ মে) ঢাকা, রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভঅবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ মাঝারি থেকে মাঝারি ধরনের ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।
এ ছাড়া সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাস পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে।