চট্টগ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, জনজীবনে দুর্ভোগ
ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে রাতভর বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম নগরীসহ জেলার বেশির ভাগ নিচু এলাকা তলিয়ে গেছে। সড়কসহ অলিগলি, বাসাবাড়ি হাঁটু থেকে কোমর সমান পানিতে ডুবে গেছে। জলাবদ্ধতার কারণে দুর্ভোগে পড়েছেন লাখো মানুষ। থমকে গেছে মানুষের জীবনযাত্রা।
চট্টগ্রামে রোবরার (২৬ মে) রাত ১০টার পর থেকে বৃষ্টি শুরু হয়। অবিরাম বৃষ্টির কারণে মধ্যরাত থেকেই শহরের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা তৈরি হতে শুরু করে। ফলে শহরের নিম্নাঞ্চলে বসবাসকারী হাজারো মানুষ নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন।
আজ সোমবার (২৭ মে) সকাল থেকে স্থায়ী রুপ পেয়েছে জলাবদ্ধতা। অফিস ও স্কুলগামী মানুষকে পোহাতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরের চকবাজার, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, বাদুড়তলা, শুলকবহর, মোহাম্মদপুর, কাপাসগোলা, কাতালগঞ্জ, বাঁকলিয়া, চান্দগাঁও, আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকা, চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ, কালারপোল, বড়পোল, হালিশহরসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। এসব এলাকায় বেশিরভাগ রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। দোকানপাট ও বাসাবাড়িতে ঢুকে গেছে পানি। বিপাকে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ। জ্বলছে না রান্নার চুলা। বেসরকারি অফিস, শিল্প ও কারখানা খোলা থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন চাকরিজীবীরা। বাড়তিভাড়া দাবি করছেন রিকশা ও সিএনজি অটোরিকশা চালকরা। উন্মুক্ত নালা ও ফুটপাতের ভাঙা স্ল্যাব পথচারীদের জন্য ঝুঁকি বাড়িয়েছে অনেকটা। মূষলধারা বৃষ্টির কারণে সড়কে যানবাহন কম চলাচল করছে। প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হচ্ছে না মানুষ।
আজ সোমবার সকালে চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার বাসিন্দা আবুল কালাম বলেন, ভোর ছয়টার পর তার ভবনের নিচতলায় পানি প্রবেশ করে। এখন সেটি পুরোপুরি তলিয়ে গেছে। নগরের চকবাজার এলাকার বাসিন্দা একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তা রাকিবুল হাসান জানান, ‘বৃষ্টির পানিতে রাস্তাঘাট সব তলিয়ে গেছে। কীভাবে অফিসে যাব বুঝতে পারছি না।’
অপরদিকে ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাসের কারণে পটুয়াখালী-গলাচিপা সড়কের সুহরি স্লুইসগেটের এপ্রোচ ভেঙে গিয়ে রাত থেকে সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। জেলার বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চল ৫ থেকে ৮ ফুট জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়েছে। ঝড়ো বাতাস ও ভারী বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে জেলাজুড়ে। বিভিন্ন এলাকায় বেরিবাঁধ ভেঙে কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। উপকূলীয় জেলাগুলোতে জলোচ্ছ্বাসের কারণে বিভিন্ন এলাকা তলিয়ে গেছে। সরকারি হিসেবে ৮ লক্ষাধিক মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিলেও আরও কয়ে লাখ মানুষ সহায় সম্বল নিয়ে মানবেতর অবস্থায় আছেন।
ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে উপকূলের বিভিন্ন এলাকার প্রায় ২৬ লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে। উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে ঝোড়ো বাতাসে গাছ পড়ে দুর্ঘটনা এড়াতে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রেখেছে পল্লী বিদ্যুৎ।