র্যাব পরিচয়ে বেতনের টাকা ডাকাতি, গ্রেপ্তার ৫
গাজীপুরের শ্রীপুরের সেলভো কেমিকেল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের বেতনের টাকা তুলে নিয়ে ফেরার পথে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ডাকাতির ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। গতকাল বুধবার রাতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
আজ বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার আরাফাত ইসলাম।
র্যাব জানায়, গত ৬ জুন বিকেলে সাড়ে ১৯ লাখ টাকা ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় শ্রীপুর থানায় করা মামলার তদন্তে নেমে রাজধানীর রামপুরা ও উত্তরা এবং গাজীপুরের টঙ্গীতে অভিযান চালিয়ে । আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিরা হলেন চক্রের মূলহোতা হামিম ইসলাম (৪৫), মো. জিন্নাহ মিয়া (২৭), মো. আমিন হোসেন (৩০), মো. রুবেল ইসলাম (৩৩) ও মো. আশিকুর রহমান (৪২)। সে সময় তাদের কাছ থেকে ডাকাতিতে ব্যবহৃত মাইক্রোবাস, দুটি খেলনা পিস্তল, দুটি হাতে তৈরি র্যাবের জ্যাকেট, দুটি র্যাবের ক্যাপ, একটি হ্যান্ডকাফসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। আসামিদের কাছ থেকে ১ লাখ ৬২ হাজার টাকাও উদ্ধার করা হয়।
কমান্ডার আরাফাত ইসলাম জানান, ৬ জুন বিকেলে গাজীপুরের শ্রীপুরের সেলভো কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের তিন কর্মকর্তা একটি প্রাইভেট ব্যাংক থেকে কারখানার শ্রমিকদের বেতন, ঈদ বোনাস ও পরিবহণ খরচের সাড়ে ১৯ লাখ টাকা নিয়ে প্রাইভেটকারে কারখানায় ফিরছিলেন। তাদের বহনকারী গাড়িটি কারখানার কাছাকাছি এলে একটি মাইক্রোবাস তাদের গাড়ি গতিরোধ করে। এ সময় র্যাবের জ্যাকেট পরিহিত কয়েকজন ব্যক্তি অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে কর্মকর্তাদের অপহরণ করে গাড়িতে তুলে নিয়ে মারধর করে। কর্মকর্তাদের নিয়ে দুর্বৃত্তরা গাজীপুর-ময়মনসিংহ সড়কের বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরি করতে থাকে। পরবর্তীতে সন্ধ্যা ৬টার দিকে টাকা ছিনিয়ে নিয়ে গাজীপুরের হোতাপাড়া এলাকায় তিনজনকে নামিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়।
গ্রেপ্তার ডাকাত সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে কমান্ডার আরাফাত বলেন, ‘ডাকাত দলটির প্রধান হামিম। এই ডাকাত দলে ১০ থেকে ১২ জন সদস্য রয়েছে। এ ছাড়া ডাকাতির কাজে মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন যানবাহন ব্যবহার করতো বলে জানা গেছে। তারা তিন থেকে চার বছর ধরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে গাজীপুর, টঙ্গী, উত্তরাসহ রাজধানীর পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতি করে আসছিল। ডাকাতির কৌশল হিসেব বিভিন্ন সময় নিজেদেরকে র্যাব, পুলিশ, ডিবি, সাংবাদিক ও বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের ভুয়া সদস্য পরিচয় প্রদানসহ ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত গাড়িতে সাংবাদিকসহ বিভিন্ন বাহিনীর লোগো সম্বলিত স্টিকার ব্যবহার করত। দলের কিছু সদস্য ব্যাংকসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নজরদারি করে। বেশি অর্থ উত্তোলনকারী ব্যক্তিকে টার্গেট করে বাইরে অবস্থান নেওয়া চক্রের অন্য সদস্যদের জানিয়ে দিতো। পরবর্তীতে সুবিধাজনক স্থানে টার্গেট করা ব্যক্তির গাড়ির গতিরোধ করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে অস্ত্রের মুখে অপহরণ করে গাড়িতে তুলে নিয়ে যেত। মারধর করে তার কাছে থাকা টাকার ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে নির্জন স্থানে ফেলে পালিয়ে যেত। তারা মাসে দুই থেকে তিনটি ডাকাতি করতো।’
র্যাব জানায়, চক্রটি পবিত্র ঈদ-উল-আযহাকে সামনে রেখে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ভুয়া পরিচয় দিয়ে কয়েকটি সম্ভাব্য স্থানে ডাকাতির পরিকল্পনা করছিল বলে জানা যায়। রুবেল দীর্ঘ দিন ধরে ডাকাতি পেশায় জড়িত। সে চক্রের মূলহোতা হামিমের প্রধান সহযোগী। ডাকাতির কৌশল হিসেবে বিভিন্ন সময় নিজেকে ভুয়া সাংবাদিক ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ভুয়া সদস্য পরিচয় দিতেন। বরিশাল, ফরিদপুর, গাজীপুর, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ভুয়া ডিবি ও র্যাব পরিচয়ে ডাকাতি করেছেন রুবেল।
কমান্ডার আরাফাত ইসলাম জানান, ব্যাংক থেকে বের হওয়ার তথ্য মোবাইল ফোনের মাধ্যমে হামিমকে জানিয়ে দিতেন রুবেল। ডাকাতি মামলা বেশ কয়েকবার গ্রেপ্তার হয়েছে। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ধর্ষণ, মাদক ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মিথ্যা পরিচয়ে ডাকাতির অভিযোগে একাধিক মামলা রয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে আরাফাত ইসলাম বলেন, ‘উৎসবের সময়ে আর্থিক লেনদেন বেশি হয়। অনেকেই প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি প্রয়োজনে টাকা লেনদেন করেন। এই সময়ে আমাদের গোয়েন্দা নজরদারি অনেক বেশি থাকে। ব্যাংকেও আমাদের গোয়েন্দা নজরদারি রয়েছে। পাশাপাশি আমাদের অনুরোধ থাকবে প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজেদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হলে এমন ঘটনা এড়ানো যাবে।’
ঈদকে কেন্দ্র করে র্যাবের গোয়েন্দা নজরদারি রয়েছে। এ ছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে গরু বিক্রি করতে আসা বেপারীদের উদ্দেশ্য র্যাবের এ মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা অনুরোধ করবো বড় অংকের টাকা বহনের সময়ে নিকটস্থ র্যাবকে জানালে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।’
কমান্ডার আরাফাত ইসলাম আরও বলেন, ‘আপনাদের যদি কোনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে কেউ পথরোধ করলে আসল পরিচয় নিশ্চিত হতে হবে। সাদা পোশাকে কাউকে র্যাব গ্রেপ্তার করে না। আমাদের অনুরোধ থাকলো র্যাব, পুলিশ বা অন্য কোনো বাহিনীর সদস্য হলে পরিচয় নিশ্চিত করে নেবেন।’