পশুর হাটে অস্বস্তি, আজ থেকে বাড়তে পারে বিক্রি
কড়া নাড়ছে ঈদুল আজহা। সারা দেশে বসেছে পশুর হাট। ক্রেতা-দর্শনার্থীতে হাটগুলো পরিপূর্ণ থাকলেও বেচাকেনা তেমন জমে ওঠেনি বলে দাবি বিক্রেতাদের। আর ক্রেতাদের দাবি, দাম বেশি। সামর্থ্যের মধ্যে মনের মতো পশু না পাওয়ায় এখনও কিনছের না তারা। যদিও শনিবার (১৫ জুন) থেকে বিক্রি বাড়তে পারে বলে মনে করছেন বিক্রেতারা।
আষাঢ়ের তৃতীয় দিন, অর্থাৎ ১৭ জুন পালিত হবে পবিত্র ঈদুল আজহা। আছে ঝড়-বৃষ্টির শঙ্কা। এরইমধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজধানীর ২০টি হাটে শুরু হয়েছে পশু বিক্রি। ঈদের আর বাকি আছে দুদিন। সে হিসেবে আগামীকাল শনিবার ও রোববার বিক্রির ‘পিক আওয়ার’, বলছেন বিক্রেতারা। অন্যান্যবারের অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে তারা বলছেন, এ দুদিন বাড়বে বিক্রি।
এদিকে, ‘ব্যবসায়ীরা পশুর অতিরিক্ত দাম হাঁকাচ্ছেন’ উল্লেখ করে নাসিরুল হক নামের এক গরু ক্রেতা এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘বিক্রেতারা গরুর যে দাম বলছেন, তাতে প্রতি কেজি এক হাজারেরও বেশি দাম পড়ে। কেউ কেউ আবার এমন দাম বলছেন, যা কেজিপ্রতি এক হাজার ২০০ টাকারও বেশি পড়ছে। এটা বাড়াবাড়ি।’
কুষ্টিয়ার মেহেরপুর থেকে রানা রায়হান নামের এক ব্যবসায়ী তিনটি বড় গরু এনেছেন গাবতলীর হাটে। রানার দাবি, একটি গরুর ওজন এক টন, আর বাকি দুটি গরুর একেকটির ওজন ২০ মনের মতো।
রানার কাছে জানতে চাওয়া হয়, কেমন দাম হলে বিক্রি করবেন একেকটি গরু? জবাবে তিনি বলেন, দামের কথা পরে। আগে তো ক্রেতা আসতে হবে! আজ (শুক্রবার) তিন দিন এখানে এসেছি, একজন ক্রেতা এসে ঠিকঠাক দরদাম করল না। তবে, হতাশ হচ্ছি না। ঢাকার মানুষের গরু কিনে বাসায় রাখার সুযোগ কম। সেজন্য শনিবার, রোববার ও ঈদের দিন ভোরে ভালো বিক্রি হবে বলে আশা করছি। এক টন ওজনের গরুর দাম ২০ লাখ হলে বিক্রি করব। বাকি দুটো ১৫ লাখ করে।’
রফিকুল ইসলাম নামের আরেক বিক্রেতা বলেন, ‘আমি গত মঙ্গলবার চারটি গরু এনেছি সিরাজগঞ্জ থেকে। ছোট একটি গরু বিক্রি করেছি। এখনও তিনটি গরু আছে। এখনও ক্রেতা আসেনি ঠিকঠাক। অবশ্য প্রতিবার এমনই হয়। আমি কোরবানি উপলক্ষে এখানে নিয়মিত গরু আনি। সাধারণত ঈদের আগের দিন বেশি বেশি গরু বিক্রি হয়। কারণ, ঢাকার অধিকাংশ ক্রেতা একেবারে ঈদের মুখে কোরবানির পশু কিনছে পছন্দ করেন।’
আফছার উদ্দিন ঢাকার ধানমণ্ডির স্থায়ী বাসিন্দা। তিনি ছোটভাইকে নিয়ে গাবতলীর গরুর হাটে যান শুক্রবার দুপুরে। গরু দেখতে দেখতে আফছার এনটিভি অনলাইনকে বলেন, 'মূলত গরু দেখতে এসেছি। খুব পছন্দ আর দরাদামে পটে গেলে নিয়ে যাব, না হলে কাল বা পরশু আসব। শুরুর দিকে বিক্রেতারা দাম বেশি বেশি হাঁকান। শেষের দিকে পশু বিক্রির তাড়া থাকে। তখন একটু দাম কমে। আবার বিপরীত অবস্থাও দেখা যায় মাঝেমধ্যে। দেখা গেল, গরুর দাম অনেক বেড়ে গেল ঈদের আগের দিন। এমনটা হতেই পারে। সব বিবেচনায় আজ আসা। পছন্দ হলে আজ নেব, না হলে পরে নেব।’
আইয়ুব আলী নামের এক ব্যক্তি হাটের ভেতরে ঘোরাঘুরি করছেন, এমন অনেকের কাছে জানতে চাচ্ছেন; গরু কিনবে কি না। আইয়ুব তার হাতে একটি লাঠি রেখে লুঙ্গিটা মাঝ বরাবর তুলে হাটে ঘুরছেন। তার কাছে জিজ্ঞাস করা হয়, আপনার গরু আছে কি না? জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি রাখালের কাজ করি। মানে, গরু-ছাগল কিনে দিই। দরদাম ঠিক করে দিই। ক্রেতা এবং বিক্রেতা খুশি হয়ে আমাকে কিছু টাকা পয়সা দেন।’
দুপুর একটার দিকে আয়ুব আলী বলেন, ‘আজই আমি প্রথম রাখালগিরি করতে এসেছি। এখনও একটাও বিক্রি করতে পারিনি। আগামী তিন দিন হাটে থাকব। ভালো টাকা ইনকাম হবে বলে আশা করছি। শুধু আমি একা না, আমার মতো আরও অনেকে প্রতিবার রাখালগিরি করেন। আমি চার বছর ধরে এ কাজ করছি।’