ঈদের দিনে আসা ৮৬ শতাংশ রোগীই ‘মৌসুমি কসাই’
কারও কেটেছে হাত, কারও পা। কারও আবার গরুর আঘাতে ভেঙেছে হাত-পা। আজ সোমবার (১৭ জুন) বেলা ১১টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে গিয়ে এ দৃশ্য দেখা যায়। সকাল থেকে নতুন রোগী এসেছে ৬০ জন। যাদের অন্তত ৫২ জনই মৌসুমি কসাই।
বেলা ১১টার দিকে এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে আলাপকালে ঢামেকের ক্যাজুয়ালিটি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. অরিফ হোসেন নতুন রোগীদের মধ্যে ৮৬ শতাংশই মৌসুমি কসাই বলে জানান। তার ধারণা, সময় যত গড়াবে, এ ধরনের রোগীর সংখ্যা তত বাড়বে।
ডা. অরিফ হোসেন বলেন, ‘আমার ধারণা, সন্ধ্যা পর্যন্ত ২০০ থেকে ২৫০ জন মৌসুমি কসাই গরু জবাইসহ কাটাকাটি করতে গিয়ে আহত হয়ে জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসবেন। কয়েকজনকে দেখলাম গরুর গুতা খেয়ে এসেছেন। হাত-পাও ভেঙেছে অনেকের।’
ডা. অরিফ হোসেন বলেন, ‘এখন থেকে রোগী বাড়তে শুরু করেছে। দুপুর পর্যন্ত এ বাড়তির ধারা থাকবে। বিকেলের দিকে কমে যাবে রোগীর সংখ্যা। এখানে মোট ছয়জন ডাক্তার নিয়মিত চিকিৎসা দিচ্ছেন। এ ছাড়া আমরা দুজন রাউন্ডে যাচ্ছি। আর নার্স রয়েছে অনেকজন। চিকিৎকের কোনো সঙ্কট নেই। এ ধরনের রোগী এ সময় বেশি আসে বলে আমরা সেভাবেই চিকিৎসক বেশি রেখেছি।’
সরেজমিন দেখা গেছে, জরুরি বিভাগের মধ্যে একের পর এক রোগী আসছেন। যাদের অধিকাংশই হাত-পা কাটা রোগী। কারও হাতের অঙুল কাটা পড়েছে। কারও আবার পা কেটে গেছে। জরুরি বিভাগের মধ্যে রোগীর চাপ এত বেশি যে, রোগীর স্বজনকে ভেতরে থাকতে দিতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। এসব রোগীদের কারও অস্ত্রোপচার করা লাগছে। কারও আবার হাত-পায়ের রক্ত পরিষ্কার করে ব্যান্ডেজ দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।
জরুরি বিভাগে আসা অনেকের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তাদের মধ্যে রাজধানীর ধানমণ্ডি থেকে চিকিৎসা নিতে আসা সবুজ হোসেন (৩৫) বলেন, ‘গরু কাটা প্রায় শেষ। দা দিয়ে কোপ দিয়েছি হাড়ে। হঠাৎ হাত থেকে দা সরে স্লিপ করেই পায়ের ওপর এসে পড়েছে। বেঁচে যে আছি সেটাই সৌভাগ্য। তবে, খারাপ লাগছে না একদমই। আল্লাহর সন্তুষ্টির কাজ করতে গিয়ে জখম হয়েছি, আল্লাহই সব ঠিক করে দেবেন।’
কলাবাগান থেকে চিকিৎসা নিতে যাওয়া রশিদ আলম বলেন, ‘গরুর মাংস কাটতে গিয়ে আঙুল কেটে পড়ে গেছে। কখনও এসব করা হয় না বলে এমন ঝামেলা হয়েছে। তাই দেরি না করে দ্রুতই চলে এলাম হাসপাতালে।’
রাজধানীর পুরান ঢাকা থেকে চিকিৎসা নিতে গিয়েছেন নাজমুল আলম। গরুর লাথিতে তার পা ভেঙেছে। তিনি বলেন, ‘গরু জবাই করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম আমরা। এমন সময় খুব জোরে গরু লাথি মারে। এতে আমার পা ভেঙেছে।’