‘আমাকে খাবার দেন, বাচ্চাকে খাওয়াবো’
‘ঈদের আগে থেকেই এলাকায় পানি উঠে গেছে। আমরা চার দিন ধরে বন্যায় তলিয়ে আছি। আমাদের কেউ দেখে না। সব জায়গাতে পানি। ঘর থেকে বাইরে যাওয়া যাচ্ছে না। ঘরে খাবার নেই, ওষুধ নেই। আমাদের অসহায়ত্ব দেখার কেউ নেই। আমাদের ত্রাণ লাগবে, খাবার লাগবে। যদি পারেন, আমাকে খাবার দেন। বাচ্চাকে খাওয়াবো।’ ঠিক এভাবেই বলছিলেন সুনামগঞ্জ শহরতলীর বাইরে ইসলামপুর গ্রামের এক অসহায় বাবা ইকবাল হোসেন (৩৫)।
শুধু ইকবাল হোসেন নয়। জেলার লাখো মানুষ এখন পানিবন্দি। প্রায় সবাই এভাবে আকুতি জানাচ্ছে ত্রাণ সহায়তার জন্য। এদিকে জেলা প্রশাসক বলছেন, ইতোমধ্যে জেলার ৫৪১টি আশ্রয়কেন্দ্রে বানভাসি মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।
উজান থেকে নেমে আসা ঢল আর অতিবৃষ্টির কারণে সুনামগঞ্জে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার (১৯ জুন) বিকেল থেকে বৃষ্টি কম হওয়ায় সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ২৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নদী পাড়ের বসতঘর থেকে পানি নামলেও বাড়ছে হাওরের পানি। বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যাচ্ছে হাওর এলাকায়। এতে দুর্ভোগ আর দুর্দশায় আর হতাশায় দিন কাটছে সুনামগঞ্জের মানুষের। গত তিনদিন ধরে জেলার অন্তত ১৫ থেকে ২০ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
সুনামগঞ্জ শহরের সুরমা নদীর পাড় থেকে পানি কিছু কমলেও এখন শহরের বড়পাড়া, তেঘরিয়া, হাজিপাড়া, নতুনপাড়া, বাঁধনপাড়া, হাছননগর, মল্লিকপুর, নবীনগর ও কালীপুর এলাকায় কোমর থেকে হাঁটু সমান পানি রয়েছে। এসব পানি স্থির হয়ে আছে, নড়াচড়া করছে না। এদিকে এখনও সুনামগঞ্জের সঙ্গে ছাতক, তাহিরপুর ও দোয়ারাবাজার উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে জেলার সব পর্যটন স্পট।
সুনামগঞ্জ পৌরশহরের নতুন পাড়া এলাকার দোলন দাস (৪০) জানান, গত তিন ধরে নতুন পাড়ায় শতশত মানুষ পানিবন্দি। কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। কাজ নেই তাই অনেকের ঘরে খাবারও নেই। কেউ এসে দেখেও না মানুষ কতটা অসহায় হয়ে আছে।
একই এলাকার মিঠুন (৩৭) জানান, পানি এখনও হাঁটু সমান আবার কোথাও কোমর সমান পানি রয়েছে। আতঙ্ক কাটছেই না। আবার বৃষ্টিও হচ্ছে। বৃষ্টি হলে পানি আরও বেড়ে যায়।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী জানান, বানভাসি মানুষকে সহায়তা করতে ইতোমধ্যে সরকারি-বেসরকারি ৫৪১টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। মানুষ এসব কেন্দ্রে ইতোমধ্যে আশ্রয় নিয়েছেন। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে সরকারের দেওয়া ত্রাণ সহায়তা পাঠানো হচ্ছে। পাশাপাশি রান্না করা খাবারও দেওয়া হচ্ছে। ইউনিয়নে ইউনিয়নে মেডিকেল দল গঠন করা হয়েছে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার জানান, ২৪ ঘণ্টায় পানি কমার কোনো সম্ভাবনা নেই। ভারী বৃষ্টিপাতের আভাস থাকায় পানি আরও বাড়তে পারে।