ভারতের সঙ্গে কোনো চুক্তি হয়নি অথচ বিএনপি নেতারা গলা ফাটাচ্ছেন : পররাষ্ট্রমন্ত্রী
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে সমঝোতা স্মারক সইয়ের বিষয়ে বিএনপি নেতাদের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘এ সময় কোনো চুক্তি সই হয়নি অথচ বিএনপি নেতারা গলা ফাটিয়ে বলে যাচ্ছেন চুক্তি সই হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে কিছু সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে, আর কিছু নবায়ন করা হয়েছে। কোনো চুক্তি সই হয়নি। আর সমস্ত সমঝোতা স্মারক দেশের স্বার্থেই করা হয়েছে।’
আজ শনিবার (২৯ জুন) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে ‘গৌরব, ঐতিহ্য, সংগ্রাম ও সাফল্যের ৭৫ বছর উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক সেমিনারে ড. হাছান মাহমুদ এসব কথা বলেন। চট্টগ্রাম উত্তরজেলা আওয়ামী লীগ এই সেমিনারের আয়োজন করে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘মির্জা ফখরুল সাহেব নাকি ঢাকা কলেজে পড়াতেন, বিএনপির আরও কিছু নেতাসহ ড. মঈন খানও শিক্ষিত। চুক্তি আর সমঝোতা স্মারকের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে না পারা বিএনপির শিক্ষিত নেতারা কেন অশিক্ষিতের মতো কথা বলছেন সেটি আমার বোধগম্য নয়।’
ড. হাছান বলেন, ‘তাদের নেত্রী বলেছিলেন সাবমেরিন ক্যাবলের সঙ্গে বাংলাদেশ যুক্ত হলে দেশের সমস্ত গোপনীয়তা ফাঁস হয়ে যাবে, তারা কানেক্টিভিটির মর্ম বোঝার কথা নয়। যেমন নেত্রী তেমন তার সভাসদ, সেজন্যই তারা এসমস্ত আবোল-তাবোল কথা বলছেন, বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন।’
ড. হাছান বলেন, ‘কোনো কোনো পীর সাহেবও দেখছি লাফাচ্ছেন। অথচ গাজায় প্রায় ৩৮ হাজার নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে মিছিল নিয়ে লাফাতে দেখি না। বিএনপি আর জামায়াতও এ নিয়ে একটি শব্দ বলেনি। আমরা ভারতের বুকের উপর দিয়ে নেপাল থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি সই করেছি, ভুটানের সঙ্গেও আলাপ-আলোচনা চলছে। এ অঞ্চলের মানুষের উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির স্বার্থেই সেই কানেক্টিভিটিকে আমরা আরও বাড়াতে চাই। নেপাল ও ভুটানকেও যুক্ত করতে চাই। কিন্তু বিএনপি সেটি নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, বাংলাদেশের সমস্ত অর্জন আওয়ামী লীগের হাত দিয়েই অর্জিত। ৭৫ বছরের কণ্টকাকীর্ণ পথচলায় আওয়ামী লীগ সবসময় অগণতান্ত্রিক ও অপশক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে এবং তাদের চক্ষুশূল হয়েছে।
চট্টগ্রাম-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাছান বলেন, পাকিস্তান আমলে আইয়ুব খান মার্শাল ল জারির পর বঙ্গবন্ধুসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়। ১৯৭০ সালের নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়। স্বাধীনতাযুদ্ধে আওয়ামী লীগের বহু নেতাকর্মী জীবন দিয়েছে। স্বাধীনতার পরও জিয়াউর রহমান ও এরশাদ দুই সামরিক স্বৈরশাসকই আওয়ামী লীগের ওপর অত্যাচার নির্যাতন চালিয়েছে।
২০০৭ সালেও ভিন্ন খোলসে প্রকৃতপক্ষে সামরিক শাসন চলেছে উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, ২০০৭ সালে সমাজে বুদ্ধিজীবী পরিচয় দেওয়া কিছু ব্যক্তিকে ভাড়া করে সামনে দিয়ে প্রকৃতপক্ষে সামরিক শাসনই চালু করা হয়েছিল। সেই সময় দেশ পরিচালনায় ব্যর্থ বিএনপির দুর্নীতি আর দুঃশাসনের অভিযোগ তুলে যেই শাসক এসেছিল, তারা তো প্রথমেই বেগম খালেদা জিয়াকেই গ্রেপ্তার করার কথা। কিন্তু তারা সেটি না করে প্রথমে শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করেছে। অর্থাৎ বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের নেতারা সবসময় অগণতান্ত্রিক ও স্বৈরাচারী শক্তির চক্ষুশূল ছিল।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম এ সালামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমানের সঞ্চালনায় উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অধ্যাপক মো. মঈনুদ্দীন, আবুল কালাম আজাদ, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম, যুগ্ম সম্পাদক দেবাশীষ পালিত বক্তব্য দেন।