সব লণ্ডভণ্ড করা সেই ছাগলটি এখন সাভারে
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আলোচিত কর্মকর্তা ড. মতিউর রহমানের সাম্রাজ্য তছনছ করে শেষমেষ সাদিক অ্যাগ্রোকেও লণ্ডভণ্ড করা ছাগলকাণ্ডের সেই ছাগলটি এখন সাভারে। নিরীহ এই ছাগলটির ওপরে যেন ক্ষোভের শেষ নেই খামার সংশ্লিষ্টদের! কেউ বলছেন অপয়া। কারও চোখে অলক্ষুণে। কেউ বা আবার অশুভ বলেও চোখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। ১৫ লাখ টাকা দাম হাঁকানো সেই ছাগলটি এখন যেন ‘বোঝা’ হয়ে উঠেছে সবার কাছে।
গত বৃহস্পতিবার (২৮ জুন) সকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের খাল এবং সড়কের জায়গা দখল করে অবৈধভাবে নির্মিত সাদিক অ্যাগ্রোতে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। অবশ্য তার আগেই সেই খামারে থাকা অন্যান্য পশুর সঙ্গে ছাগলটিকেও সরিয়ে নেওয়া হয় অন্যত্র। আলোচিত সেই ছাগলটির সন্ধানে বেরিয়ে খোঁজ মেলে সাভারের ভাকুর্তা ইউনিয়নের ভাঙ্গাব্রিজ এলাকার সাদিক অ্যাগ্রো ফার্মে।
সেখানে গিয়ে দেখা যায়, জনসাধারণের দৃষ্টির আড়ালে রাখতে খামারের একটি অংশে ছাগলটিকে রাখা হয়েছে কাপড় আচ্ছাদিত অবস্থায়। উচ্ছেদের আগের রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের খামার থেকে সরিয়ে আনা পশুসহ গরু-বাছুর মিলিয়ে এই খামারে রয়েছে প্রায় আড়াইশ পশু। এ ছাড়া ১২টি উট ও দুটি ঘোড়াসহ রয়েছে অনেক হাঁস-মুরগি।
ব্যবস্থাপক হিসেবে ফার্মের দায়িত্ব রয়েছেন জাহিদ খান। তিনি জানান, স্থান ছোট হওয়ায় অনেকটা চাপাচাপির মধ্যে রাখা হয়েছে পশুগুলো। মাস দেড়েক আগে দায়িত্ব নিয়ে আসা জাহিদ খান আরও জানান, এই খামার থেকেই প্রতিদিন গড়ে ৬০০ লিটারের মতো দুধ উৎপাদন হয়। দেখভালের জন্য ৩৫জন কর্মী নিয়োজিত রয়েছে। আগে কোনো নিরাপত্তা কর্মী ছিলেন না। তবে পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে এখন নিরাপত্তা কর্মী মোতায়েন করা হয়েছে।
খামারটি ঘুরে কয়েকটি অংশে দেখা গেলো, ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ভাঙা শেড, শীতাতপ যন্ত্রের আউটডোরসহ মোহাম্মদপুরের থাকা খামারটির বেশকিছু মালামাল। আলোচিত ছাগলটি কোথায়? বলতেই নিয়ে জাহিদ খান এ প্রতিবেদককে যান একটি শেডের কাছে। এ সময় খাবারের একজন কর্মচারী বিড়বিড় করে বলতে থাকেন, ‘এই ছাগলডারে এইহানে আনাই ঠিক অয় নাই। দুনিয়াদারি খাইয়া ছাগলটা অহন এইহানে কার কপাল খায় কে জানে!’ বোঝাই গেল, ‘অতি মূল্যবান’ ছাগলটি এদের অনেকের কাছেই এখন যেন এক ধ্বংসের প্রতীক।
এর মধ্যেই হঠাৎ করে গাড়ির আওয়াজ শোনা যায় খামারের বাইরে। হটাৎ মাইক্রোবাস এখানে কেন? দুটি মাইক্রোবাস থেকে মুহূর্তেই নেমে আসতে থাকেন দুর্নীতি দমন কমিশনের জ্যাকেট গায়ে চাপানো ব্যক্তিরা।
আজ সোমবার (১ জুলাই) বিকেলে দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে ৯ সদস্যের একটি এনফোর্সমেন্ট টিম অভিযান চালায় সাভারে সাদিক এগ্রোর এই খামারটিতে। অভিযানে নেতৃত্ব দেন দুদকের সহকারী পরিচালক আবুল কালাম আজাদ। এসময় একটি শেডে তিনটি নিষিদ্ধ ব্রাহমা জাতের গাভী ও সাতটি ব্রাহামার বাছুরের সন্ধান পান তারা। অভিযানে থাকা দুদকের সদস্যরা এসময় কাপড় দিয়ে ঘিরে রাখা ছোট একটি কক্ষে যান। সেখানে ১৫ লাখ টাকা দাম হাঁকানো বিটল জাতের আলোচিত সেই ছাগলটিও প্রত্যক্ষ করেন। এ সময় ছাগলটি লক্ষ্য করে ‘সাব্বাস’ বলেও বাহবা দেন অনেকে।
এ সময় এলাকার এক তরুণকে বলতে শোনা যায়, ‘স্যার দেখেন ছাগলটার কত পাওয়ার! জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য ড. মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে আপনাদের ডিপার্টমেন্ট চারবার অনুসন্ধান করেও কিছু পায়নি। অথচ এই একটা ছাগল দুনিয়াদারি সব লণ্ডভণ্ড করে দিল!’
অভিযান শেষে, দুদকের সহকারী পরিচালক আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের জানান, ব্রাহামা জাতের গরু উৎপাদন পালন ও বিপনন নিষিদ্ধ। আমরা এখানে বেশ কয়েকটি ব্রাহমা জাতের গরু দেখতে পেয়েছি। এখান থেকে গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু নথি জব্দ করা হয়েছে। যেখানে খামার কর্তৃপক্ষ নিজেরাই উল্লেখ করেছে এখানে কতগুলো ব্রাহামা আছে।
পাশাপাশি জবাই করার উদ্দেশ্যে কতগুলো পশু এখান থেকে নেওয়া হয়েছে সেই তথ্যগুলোও আমরা সংগ্রহ করেছি।