প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আদালতের যেন টেলিপ্যাথিক সম্পর্ক : রিজভী
শিক্ষার্থীদের কোটাবিরোধী আন্দোলন ইস্যুতে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘আমাদের কাছে মনে হয়, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আদালতের যেন একটা টেলিপ্যাথিক সম্পর্ক আছে। অর্থাৎ শেখ হাসিনা যেটা ভাবেন, আদালতের রায়ের মধ্য দিয়ে সেটা চলে আসে। এটাই তো আমরা দেখছি। সরকার যেটা চায় সেটা আদালতের রায়ের মধ্য দিয়ে চলে আসে। এই টেলিপ্যাথিক সম্পর্কটা হয় কী করে?’
আজ বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নিখোঁজ ছাত্রদলনেতা আতিকুর রহমান রাসেলের সন্ধানের দাবিতে সংগঠনটি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন রিজভী।
রুহুল কবির রিজভী আরও বলেন, ‘এই যে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা তাদের ক্লাস ছেড়ে প্রতিদিন রাজপথে নেমে আসছে, এটা কি অন্যায়? এটা কি অনায্য?’
ছাত্রদলনেতা আতিকুর রহমান রাসেল নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে রিজভী বলেন, ‘রাসেলের সন্ধানের দাবিতে তার পিতার যে আকুতি আমরা এখানে শুনলাম। এভাবেই বাংলাদেশের আকাশে প্রতিনিয়ত অসংখ্য উল্কাপাত ঘটিয়েছেন এই ডামি সরকার দখলদার সরকারের প্রধানমন্ত্রী। আমরা কোন দেশে বাস করি? এমন একটি দেশ যেখানে মনে হচ্ছে চারিদিকে পাহাড়ের গুহা সেই পাহাড়ের গুহা থেকে দস্যুদল এসে কোমলমতি ছাত্রদেরকে ধরে নিয়ে যাবে, তরুণদেরকে ধরে নিয়ে যাবে, নিরুদ্দেশ করে দেবে।’
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা এমন একটি মাফিয়া সিন্ডিকেটের অধীনে বসবাস করছি, যেখানে প্রতিবাদের ভাষা হয়, যারা প্রতিবাদ করে, তাদেরকে নিরুদ্দেশ করে দেওয়া, অন্যায়ের প্রতিবাদকারীদের রক্তাক্ত লাশ নদীর ধারে, খালের ধারে, নালার ধারে পড়ে থাকে। আমরা এমন একটি দেশে বাস করছি, সে দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তিনি এমন একটি সংস্কৃতি তৈরি করেছেন, মনে হয় তিনি ডামি সরকারের প্রধানমন্ত্রী নয়, একটি মাফিয়া সিন্ডিকেটের গডমাদার হিসেবে তিনি বাংলাদেশের দায়িত্ব পালন করছেন।’
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘প্রতিনিয়ত প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে এই আওয়ামী সরকারের চরিত্র-বৈশিষ্ট্য ক্রমাগত একটা মাফিয়া সিন্ডিকেটের মতো করে যাচ্ছে। আজকে আতিকুর রহমান রাসেল নেই আমাদের কাছে, সবাই জানে তাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাই ধরে নিয়ে গেছে। খবরের কাগজেও এসেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকেরাই তাকে ধরে নিয়ে গেছে, কিন্তু এখনও তাকে হাজির করছে না, না আদালতে না তার পরিবারের কাছে। মা-হারা একটি ছেলে কোথায় খাচ্ছে, কোথায় ঘুমাচ্ছে, কোন জায়গায় শুয়ে আছে, কোন আয়নাঘরে তাকে বন্দি করে রাখা হয়েছে, আমরা জানি না।’
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন, তার রাষ্ট্রীয় অপকর্ম ঢাকার জন্য একের পর এক অত্যন্ত সুকৌশলে তিনি একটার পর একটা ইস্যু তৈরি করছেন, মানুষ যেন ওই ইস্যুর দিকে ধাবিত হয়, ওইদিকে যেন তাদের চোখটা পড়ে থাকে। তিনি যে আজকে চারিদিক থেকে ব্যর্থ হয়েছেন, আজকে যে রাজকোষ শূন্য। ১৫ দিনের জন্য কোনো জিনিস যে আমদানি করতে পারবে না, সেই রকম একটি পরিস্থিতির মধ্যে তিনি দেশকে নিয়ে গেছেন। এখন তিনি ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন, আবার ফিরে আসছেন খালি হাতে। ২০ মিলিয়ন ডলার তিনি চাইলেন চীনের কাছ থেকে, প্রতিশ্রুতি পেয়েছেন মাত্র এক মিলিয়ন ডলারের। তিনি যাত্রা সংক্ষিপ্ত করে ফিরে এসেছেন, অজুহাত দিচ্ছেন অন্য কথার। কিন্তু, অন্তর্নিহিত যে বিষয়টি সেটি সবার জানা হয়ে গেছে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আপনি কি তাহলে এই ভয়ঙ্কর অর্থনৈতিক বিপর্যয় ঢাকার জন্য আতিকুর রহমান রাসেলদের গুম করছেন? আপনি কি বেনজীর কাণ্ড, আপনি কি আজিজ কাণ্ড, আপনি কি মতিউর কাণ্ড—এগুলোকে ঢাকার জন্য এসব করছেন? আমরা পৌরাণিক কাহিনী শুনেছি, আমরা যে গল্পকথা শুনেছি, সেগুলোকেও হার মানাচ্ছে। বেনজীরের টাকা কত? বেনজীর কত জমি দখল করেছে? আমরা গণমাধ্যমে যা শুনতে পাচ্ছি, তার চেয়ে এদের সম্পদ বেশি হতে পারে। যদি পিএসসির একজন ড্রাইভার চতুর্থ শ্রেণির চাকরিজীবী, তার যদি ৬০ থেকে ৭০ কোটি টাকার মতো সম্পদ পাওয়া যায়, তাহলে তাদের সম্পদ আরও কত বেশি।’
রিজভী বলেন, ‘আমরা প্রায়ই শুনি, অমুখ ডিসি অমুখ বিশ্ববিদ্যালয়ের অমুখ হলের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। অমুখ এসপি সে আরেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ করত। এত ছাত্রলীগ ডিসি, এসপি, ডেপুটি সেক্রেটারি, জয়েন্ট সেক্রেটারি হয় কী করে? এই প্রশ্নপত্র ফাঁসের মধ্য দিয়ে এই কাজগুলো করা হয়েছে।’
‘গুমের পার্মানেন্ট সংস্কৃতি তৈরি করেছে এই মাফিয়া সরকার’ মন্তব্য করে রিজভী আরও বলেন, ‘শুধু নিজের শ্বেত পাথরের সিংহাসনকে রক্ষা করার জন্যই আজকে তিনি গুম-খুনের পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন। কারণ অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন সবচেয়ে বড় আতঙ্ক শেখ হাসিনার জন্য। এই আতঙ্কে থেকে নিজেকে নিরাপদ করার জন্য জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ও গণতন্ত্রকামী নেতাদের তিনি গুম করাচ্ছেন।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব, সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক শ্যামল মালুম ও সাংগঠনিক সম্পাদক আমান উল্লাহ আমানসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।