চুরির অপবাদ দিয়ে শিশুগৃহকর্মী নির্যাতন, গ্রেপ্তার চিকিৎসক দম্পতি
সাভারে চুরির অপবাদ দিয়ে শিশুগৃহকর্মীকে ছুরি দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ এক চিকিৎসক দম্পতিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ শনিবার (১৩ জুলাই) বিকেলে সাভার পৌরসভার উত্তর রাজাশন এলাকার একটি বাড়ি থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
আটকরা হলেন বরগুনা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক গাজী ইসমাইল হোসেন ও তার স্ত্রী মাহমুদা খাতুন পরশ। স্ত্রীসহ সরকারি কর্মকর্তাকে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সাভার মডেল থানার পরিদর্শক নয়নকার কারকুন। এর আগে দুপুরে ভুক্তভোগী গৃহকর্মীকে চুরির অপবাদ দিয়ে তার মা-বাবার হাতে তুলে দেওয়ার পর নির্যাতনের বিষয়টি প্রকাশ পায়। ভুক্তভোগী শিশুটির নাম মিম (১০)। সে সাভারের রাজাশন এলাকার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেনের মেয়ে।
মিমের মা কুলসুম বেগম জানান, অভাবের তাড়নায় এক বছর আগে ওই চিকিৎসক দম্পতির বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে নিজের মেয়েকে পাঠানো হয়।
পান থেকে চুন খসলেই তাকে নির্যাতন করা হতো। ঠিকমতো বেতন দেওয়া হতো না। সর্বশেষ চুরির অপবাদ দিয়ে তার ওপর চালানো হয় নির্মম নির্যাতন।
মিম জানায়, একটি ছুরি দিয়ে তার সারা শরীরে খুঁচিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। এছাড়া ক্রিকেট ব্যাট দিয়ে পায়ে ও মাথায় আঘাত করা হয়।
মিম আরও জানান, চিকিৎসকের স্ত্রী পরশ ম্যাডাম আমাকে ডেকে বলেন, তিনি দুই হাজার টাকা খুঁজে পাচ্ছেন না। টাকাটা আমি চুরি করেছি এমন অপবাদ দিয়ে আমাকে নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে চিৎকার করলে আমার মুখে কাপড় গুঁজে দেওয়া হতো। শেষমেষ দুপুরে আমার বাবাকে ডেকে তার হাতে আমাকে তুলে দেওয়া হয়।
মিমের বাবা আনোয়ার হোসেন জানান, মেয়ের এমন অবস্থা দেখে আমি দিশেহারা হয়ে পড়ি। এ সময় স্যার ও ম্যাডাম আমাকে হুমকি দিয়ে বলেন, এ বিষয় নিয়ে কাউকে কিছু বললে বড় ধরনের ক্ষতি হবে। তবে মেয়ের এমন পরিস্থিতি দেখে স্থানীয়রাই মিমকে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যায়। বর্তমানে ওই হাসপাতালেই মিম চিকিৎসাধীন।
এ ব্যাপারে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সায়েমুল হুদা বলেন, ভুক্তভোগীর সারা শরীরে নতুন ও পুরাতন ভোতা এবং ধারালো অস্ত্রের ক্ষত রয়েছে। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত সে হাসপাতালে ভর্তি থাকবে।
সাভার মডেল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) নয়ন কারকুন বলেন, খবর পেয়ে আমরা হাসপাতালে শিশুটিকে দেখতে গিয়েছি। পরে আমার নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম ওই চিকিৎসক দম্পতিকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এর আগে মিমের মা বাদী হয়ে ওই চিকিৎসক দম্পতির বিরুদ্ধে সাভার মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহ জামান জানান, এ বিষয়ে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।