দেশের সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে : সেলিমা রহমান
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান ভারতের সঙ্গে শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক চুক্তিকে একপাক্ষিক দাবি করে বলছেন, ‘বাংলাদেশকে দীর্ঘমেয়াদে ভারতের গোলামি চুক্তির ফাঁদে ফেলার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আওয়ামী লীগ। এর ফলে বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়বে।’
আজ শনিবার (১৩ জুলাই) জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ ইয়ূথ ফোরাম আয়োজিত ‘ভারতের সাথে অসম চুক্তি- বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের উপর হুমকি’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় সেলিমা রহমান একথা বলেন।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন এস এম নাজমুল হাসান। সাইদুর রহমানের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব ও বিএফইউজে মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী, সাবেক সংসদ সদস্য বিলকিস ইসলাম ও ফরিদা ইয়াসমিন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম, প্রফেসর ড. দেওয়ান সাজ্জাদ হোসেন, অ্যাডভোকেট হেলাল উদ্দিন, অ্যাডভোকেট পারভেজ হোসেন, অধ্যক্ষ এম এ মোনায়েম, অ্যাডভোকেট ইউসুফ আলী, শাহজান মিয়া সম্রাট প্রমুখ আলোচনায় অংশ নেন।
সেলিমা রহমান বলেন, ভারতের সাথে যত চুক্তি হচ্ছে সব গোপনে। জনগণতো জানেই না সংসদেও আলোচনা হয় না। এসব অসম চুক্তি ও সমঝোতার নামে এদেশের প্রতিরক্ষা ও জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়টিকে ভারতের জাতীয় প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তার অংশে পরিণত করা হচ্ছে, যা বাংলাদেশের জন্য খুবই বিপজ্জনক। স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বকে জলাঞ্জলি দিয়ে শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে দীর্ঘমেয়াদে ভারতের গোলামি চুক্তির গভীর ফাঁদে ফেলার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে।”
‘সরকার তিস্তা প্রকল্প নিয়ে ভারত ও চীন উভয়ের সাথেই লুকোচুরি খেলছে’ দাবি করে সেলিমা রহমান বলেন, “যাদের বিমাতাসুলভ আচরণে তিস্তার ন্যায্য পানি থেকে বাংলাদেশ বঞ্চিত হচ্ছে, তাদেরকেই তিস্তার পানি ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত করলে তা হবে আত্মঘাতী। বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহার করে ভারতকে ট্রেন চলাচলের সুযোগ করে দিলে বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মারাত্মক হুমকির মুখে পড়তে পারে।”
কাদের গনি চৌধুরী চুক্তির সমালোচনা করে বলেন, ভারতকে সব প্রকার সুবিধা প্রদানের বিনিময়ে ভারতের কাছ থেকে বাংলাদেশের কোনো স্বার্থ আদায় করতে পারেনি। আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসানোর নজরানা হিসেবে ভারতের কাছে সব কিছু সঁপে দিচ্ছে সেবাদাস সরকার। শুধু ক্ষমতায় থাকার জন্য এই অবৈধ সরকার পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশকে ভারতের ওপর নির্ভরশীল করে ফেলছে। সাম্প্রতিক ১০ সমঝোতা ও নথি সইয়ের মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করে তুলছে।
কাদের গনি চৌধুরী আরও বলেন, ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত সমঝোতা স্বাক্ষর দেশের স্বার্থবিরোধী। অভিন্ন নদীগুলোর পানির হিস্যা না পেয়ে সমঝোতা সই করছেন। ফারাক্কার পানি আগে দরকার। ফারাক্কা চুক্তি অনুযায়ী ভারত পানি দিচ্ছে না। সরকার পানি চায় না, তিস্তা প্রকল্পের কাজ করতে চায়। কারণ, প্রকল্প হলে অনেক টাকা। মিলেমিশে লুটপাট করতে পারবে। সেই টাকাই তাদের আসল উদ্দেশ্য। এসব চুক্তিতে কোথাও এই হিস্যা নিয়ে একটা কথাও নেই। এ থেকে বোঝা যায়, আসলে এই সরকার দেশপ্রেমিক সরকার নয়, দেশবিরোধী সরকার।
কাদের গনি চৌধুরী বলেন, বঙ্গোপসাগরে আমাদের মালিকানা কেড়ে নিতে চায় আগ্রাসী ভারত। ২০১৪ সালে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধ মীমাংসায় আন্তর্জাতিক সালিশ আদালতের এক রায়ে বাংলাদেশ নতুন প্রায় সাড়ে ১৯ হাজার বর্গকিলোমিটার সমুদ্র এলাকা পেয়েছে। এর মধ্য দিয়ে নিজস্ব সমুদ্রসীমার বাইরে মহীসোপানে এক বিরাট এলাকার ওপর বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। এই এলাকায় মৎস্য আহরণ ও সমুদ্রের তলদেশে প্রাকৃতিক সম্পদ অনুসন্ধান ও উত্তোলনে বাংলাদেশের অধিকার নিশ্চিত হয়।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজের সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, জনগণকে অন্ধকারে রেখে চুক্তি ও সমঝোতা করছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার। আপনারা জানেন বিশ্বব্যাপী যারা গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে তারাই রাষ্ট্রকে শাসন করতে পারে। গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে দেশকে শাসন করে চলছে। দৈনিক আমার দেশ ও দিগন্ত টেলিভিশনকে বন্ধ করে গণমাধ্যমকে ভারত বিরোধিতার কারণে শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। দেশের বুক চিরে রেল করিডোরের নামে ভারতকে আমাদের ভূখণ্ড ব্যবহারে বাধা দিতে বুকে রক্ত ঢেলে দিতে হবে।