সহিংসতা না ঘটলেও ৫ মামলায় বিএনপি-জামায়াতের ২৫০ নেতাকর্মী আসামি
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সুনামগঞ্জে এখন পর্যন্ত কোনো সহিংসতার ঘটনা না ঘটলেও গত এক সপ্তাহে পাঁচটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় জেলা বিএনপি ও জামায়াতের শীর্ষ নেতাসহ ২৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এসব মামলায় এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছেন ১৫ জন। তাই গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা
পুলিশ বলছে, কোটা সংস্কার আন্দোলেন যোগ দিতে কিছু লোক সুনামগঞ্জ থেকে ঢাকায় গিয়েছিল বলে তাদের কাছে তথ্য আছে। আবার জেলাতেও নাশকতার পরিকল্পনা ছিল। তাই যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে এবং যারা সন্দেহভাজন তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। কাউকেই ছাড়া হবে না। এ দিকে গত শনিবার থেকে জেলা বিএনপির দলীয় কার্যালয় বন্ধ আছে। কোনো নেতাকর্মীকে প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে না।
পুলিশ ও দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জের ছাতক থানায় নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে পুলিশ বাদী হয়ে বিশেষ ক্ষমতা আইনে যে মামলা করেছে সেটিতে প্রধান আসামি করা হয়েছে জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য কলিম উদ্দিন আহমদকে। এই মামলায় নামোল্লেখ করা হয়েছে ১৫ জনের, বাকি ৬০ থেকে ৭০ জন অজ্ঞাতপরিচয়।
পুলিশ জানিয়েছে, কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে সহিংসতা ও নাশকতার প্রস্তুতি নেওয়ার দায়ে জেলার পাঁচ থানায় পাঁচটি মামলা হয়েছে। এরমধ্যে সদর থানায় বুধবার দায়ের করা মামলায় ২১ জনের নাম উল্লেখ করে ৩৫ জন অজ্ঞাতপরিচয় আসামি রাখা হয়েছে।
দিরাই, ছাতক, জগন্নাথপুর ও ধর্মপাশা থানায় পৃথক পৃথকভাবে মামলা হয়েছে। ছাতকের মামলায় প্রধান আসামি জেলা বিএনপির সভাপতি কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন। সব মামলা মিলে ২৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
সদর থানায় করা মামলায় জেলা জামায়াতের আমির তোফায়েল আহমদ, সেক্রেটারি মোমতাজুল হাসান আবেদ, পৌর জামায়াতের সেক্রেটারি আব্দুস সাত্তার মামুন, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, সাধারণ সম্পাদক তারেক আহমদ, সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি ইব্রাহিম আলী, সাধারণ সম্পাদক সাদিকুর রহমান চৌধুরী, পৌর ছাত্রদলের সভাপতি সুজাত হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মমিনুর রহমান পীর শান্ত, কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক নাঈম আহমেদসহ ২১ জনের নাম উল্লেখ করে ৩৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।
পুলিশ সুনামগঞ্জ পৌর জামায়েতের সেক্রেটারিসহ আজ শুক্রবার (২৬ জুলাই) পর্যন্ত ১৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
ছাতকের মামলায় জেলা বিএনপির সভাপতি কেন্দ্রীয় বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন মিলনকে প্রধান আসামি করায় সেখানে নেতাকর্মীরাও প্রকাশ্যে বের হচ্ছেন না। জেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে পরিচিত কাউকেই শহরে দেখা যাচ্ছে না। তাঁরা নিজেদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানেও আসছেন না।
আজ জেলা বিএনপির পুরাতন বাস স্টেশনের কার্যালয়ের সামনে গিয়ে দেখা গেছে অফিস তালাবদ্ধ। আশপাশের দোকানিরা জানান, জাতীয় নির্বাচনের আগে একবার এই অফিস দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। এখন আবার কয়েক দিন ধরে বন্ধ। নেতাকর্মীদের কাউকে গত শনিবারের পর অফিসে আসতে দেখা যায়নি।
এদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সূত্র জানিয়েছে, নাশকতার কাজে যুক্ত হওয়ার জন্য সুনামগঞ্জ থেকে যারা গত শুক্রবার রাজধানী ঢাকায় গিয়েছিল, তাদের হন্যে হয়ে খুঁজছেন তাঁরা।
জেলা যুবদলের সভাপতি আবুল মুনসুর শওকত বলেন, ‘আমরা কেউ-ই বাসা বাড়িতে থাকতে পারছি না। সাদা পোশাকে পুলিশ খোঁজতে আসে বাসায়। গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের সংগ্রামে নামতে পারছে না মানুষ। রাজপথে না নামতে পারলে, অন্যভাবে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটানোর চেষ্টা হয়।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নুরুল বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করেছি। কেউ কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটায়নি। এর পরও নেতাকর্মীরা বাড়িতে থাকতে পারছে না।’
জেলা বিএনপির সভাপতি কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন বলেন, ছাতকের মামলায় আমি এক নম্বর আসামি। মামলায় বলা হয়েছে, আমার নির্দেশে গোবিন্দগঞ্জে টায়ার জ্বালানো ও সিএনজি পুড়ানো হয়েছে। অথচ এ ধরনের কোনো ঘটনাই ঘটেনি। তিনি দাবি করেন, নাশকতার কোনো ঘটনায় কোথাও বিএনপির কর্মীরা জড়িত নয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের তিনি অমানবিক আচরণ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান।
সদর থানার ওসি খালেদ চৌধুরী বলেন, ২১ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত ৩৫ জনকে আসামি করে সদর থানায় মামলা হয়েছে। কয়েকজন গ্রেপ্তার হয়েছে। অন্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা হচ্ছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) রাজন কুমার দাস জানান, পাঁচ মামলার আসামি ও রাজধানীতে নাশকতার সঙ্গে যুক্ত হতে যারা গিয়েছিল তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে পুলিশ।