সাভারে নাশকতা মামলায় আসামি আ.লীগের ৩০ নেতাকর্মী, বিব্রত নেতারা
বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে সাভারে নাশকতার ঘটনার মামলায় বিএনপি-জামায়াত নেতাদের পাশাপাশি আসামি করা হয়েছে আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদেরও। সাভার ও আশুলিয়ায় থানায় করা ২১ মামলার নথি পর্যালোচনা করে আসামিদের তালিকা থেকে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের নামও পাওয়া গেছে।
এ ঘটনায় দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরাজ করছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। অনেকেই এতে ক্ষুব্ধ। অনেকে আবার হতবাক। নাশকতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে কীভাবে তারা উল্টো নাশকতা মামলার আসামি হলেন? এ নিয়ে জ্যেষ্ঠ নেতারাও রয়েছেন ধোঁয়াশায়। শত্রুতা করে নাম ঢুকিয়ে দিলেও দলকে এর দায় নিতে হবে, দিন শেষে দলকেই মাসুল দিতে হবে, এমন শঙ্কার কথা জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতারা।
বাসে আগুন, সরকারি কার্যালয়ে আগুন, পুলিশের ওপর হামলাসহ জেলা (উত্তর) গোয়েন্দা কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় আওয়ামী লীগের নেতারাও কি তাহলে জড়িত ছিলেন? পুলিশের মামলায় অন্যদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের আসামি করায় এমন প্রশ্নই উঠেছে রাজনৈতিক মহলে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে ভর করে বিএনপি-জামায়াত নাশকতা চালিয়েছে দলীয়ভাবে শীর্ষ নেতাদের এমন বক্তব্যের বিপরীতে সাভারে নাশকতার মামলায় দলের নেতাকর্মীদের আসামি হিসেবে পুলিশ মামলা করায় বিব্রত ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।
সাভার মডেল থানায় পুলিশের করা বিভিন্ন মামলায় অন্তত ৩০ জন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী রয়েছেন। যাদের মধ্যে পদধারীই রয়েছেন আন্তত ১৬ জন। এদের মধ্যে আবার তিনজন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি।
মামলায় বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মী ছাড়াও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পথরোধ করে দাঙ্গা-হাঙ্গামা, পুলিশের দায়িত্ব পালনে বাধা, পুলিশকে আঘাত করে মারাত্মক জখম, ভাঙচুর, জনজীবন ও মালামালের ক্ষতি সাধন, ককটেল বিস্ফোরণে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে।
আসামিরা হচ্ছেন আশুলিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন মণ্ডল ও আওয়ামী লীগকর্মী মুলান্দি মণ্ডল। তাদের মধ্যে রুহুল আমিন মণ্ডল ছিলেন আগের কমিটির ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক। এ ছাড়া আওয়ামী পরিবারের ঘনিষ্ঠ অনেকেই আসামি হয়েছেন নাশতার বিভিন্ন মামলায়।
ঢাকা জেলা (উত্তর) গোয়েন্দা কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনার মামলায় বাদী হয়েছেন গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আনোয়ার হোসেন। গত ২২ জুলাই সাভার মডেল থানায় তিনি ৯৯ জনের নাম উল্লেখ করে এ মামলা করেছেন।
এই মামলার এজাহার পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, মামলায় বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের আসামি হিসেবে নামের তালিকার আগে রাখা রয়েছে এবং এরপরেই রয়েছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নাম। রয়েছে আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ জোট সঙ্গী জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের নামও। আসামি হিসেবে ঢাকা জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও সাভার উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কফিল উদ্দিন ও তার ছেলের নামের তালিকা যথাক্রমে ৯৫ ও ৯৬। আর সেই তালিকায় ৮৬ নম্বর আসামি হিসেবে রয়েছে আশুলিয়ার পাড়াগ্রামের নায়েব আলী মণ্ডলের ছেলে আওয়ামী লীগনেতা রুহুল আমিন মণ্ডল ও ৮৫ নম্বর আসামি মীরের চানগাঁও গ্রামের জুলমত মণ্ডলের ছেলে মুলান্দী মণ্ডল।
স্থানীয়রা বলছে, অসংখ্য নামের ভিড়ে এমন আরও অনেকেই রয়েছে, যারা আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক পরিবার ঘনিষ্ঠ। আসামিদের তালিকায় মিলেছে জেলা কৃষক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোন্তাজ মেম্বার ও আশুলিয়ার উজ্জ্বল মেম্বারের নামও।
আশুলিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন মণ্ডলের ফেসবুক অ্যাকাউন্টের টাইমলাইন ঘেঁটে দেখা গেছে, অতীতে বিএনপি-জামায়াতের নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে অংশগ্রহণের অসংখ্য ছবি। রয়েছে রাষ্ট্রপ্রতি থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমসহ দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের ছবিও।
এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে রুহুল আমিন মণ্ডল বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত নেতাদের সঙ্গে যদি আমাদের মামলার আসামি হতে হয়, তাহলে এর চেয়ে মরে যাওয়া ভালো।’
তাহলে আপনাকে কেন আসামি করা হলো, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে রুহুল আমিন বলেন ‘বলার ভাষা নেই। কেউ হয়তো শত্রুতা করে নাম ঢুকিয়েছে। এতে তো মামলাটিই প্রশ্নবিদ্ধ হলো। আমাদের ভূমিকাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করা হলো।’
সাভারে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে ব্যাপক নাশকতার মামলায় পুলিশ আসামি হিসেবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নাম যুক্ত করে এজাহার দায়ের করায় বিষয়টি পরিণত হয়েছ ‘টক অব দ্য টাউনে’।
এজাহারের সূত্র ধরে আওয়ামী লীগ নেতারাও নাশকতায় জড়িত ছিলেন কিনা, এমন প্রশ্ন করা হলে মামলার বাদী গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক আনোয়ার হোসেন কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এ বিষয়ে সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহ্ জামান বলেন, ‘কে আসামি আর কে বাদী এই মুহূর্তে না দেখে বলা সম্ভব নয়। বিষয়টি দেখে বলতে হবে।’
এ ব্যাপারে আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ এফ এম সায়েদ বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতেই জড়িত ও সন্দেহভাজনদের আসামি করা হয়েছে।’ তবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও যে আসামি সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি তিনি।