রাজধানীর সায়েন্সল্যাব ও মিরপুর-১০ রণক্ষেত্র
একদফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সর্বাত্মক অসহযোগ কর্মসূচিকে ঘিরে রাজধানীর সায়েন্সল্যাবরেটরি এলাকা ও মিরপুর-১০ নম্বরের পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের দফায় দফায় সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে মিরপুর-১০ এলাকা।
আজ রোববার (৪ আগস্ট) দুপুর ১২টার দিকে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ শুরু হয়।
জানা গেছে, মিরপুর গার্লস আইডিয়াল কলেজের সামনে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। পরে মিরপুর-১০ নম্বর থেকে ছাত্রলীগ-যুবলীগ ধাওয়া দিলে আন্দোলনকারীরা মিরপুর-১৪ নম্বরের দিকে চলে যান। এ সময় ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়। এরপর দুপুর ১টার দিকে শুরু হয় গোলাগুলি। এতে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় গোটা এলাকা।
প্রত্যক্ষদর্শী মিরপুরের এক বাসিন্দা জানান, মিরপুর-২, মিরপুর-১১-১২, মিরপুর ১৪ ও কাজীপাড়া এলাকা আন্দোলনকারীদের দখলে রয়েছে। তারা চেষ্টা চালাচ্ছে মিরপুর-১০-এর গোলচত্বর নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার।
এর আগে, সকাল ১০টার পর থেকে মিরপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকেন। এরপর মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বরে অবস্থান নেন ছাত্রলীগ-যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। যার নেতৃত্বে রয়েছেন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা-১৪ আসনের সংসদ সদস্য মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিল।
সায়েন্সল্যাব মোড়ে দফায় দফায় সংঘর্ষ
অপরদিকে রাজধানীর সায়েন্সল্যাব এলাকায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষের সময় গুলির শব্দ শোনা গেছে। এতে কেউ হতাহত হয়েছে কিনা তা জানা যায়নি।
আজ রোববার (৪ আগস্ট) বেলা দেড়টার আগে থেকে সায়েন্সল্যাব এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ শুরু হয়।
আওয়ামী লীগের কর্মীরা লাঠি হাতে অবস্থান নিয়েছেন সীমান্ত মার্কেট এলাকায়। তারা স্টার কাবাব এলাকায় আসার চেষ্টা করলে আন্দোলনকারীদের ধাওয়া খেয়ে পিছু হটে। আন্দোলনকারীরা ধানমণ্ডি এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন। তারা সরকারের পদত্যাগের দাবিতে নানা ধরনের স্লোগান দিচ্ছেন। আন্দোলনকারীরা লাঠিসোটা নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ধাওয়া দিচ্ছে। এ সময় গুলির শব্দ শোনা গেছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেছে পুলিশ। সংঘর্ষের ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ হতাহত হয়েছেন কিনা তা জানা যায়নি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার সময় কয়েকবার গুলির শব্দ শোনা গেছে। সায়েন্সল্যাব এলাকায় ছাত্রলীগের একজন কর্মীকে একা পেয়ে বেধড়ক পিটিয়েছে আন্দোলনকারীরা। এতে তিনি গুরুতর আহত হয়েছেন। পিটুনিতে ছাত্রলীগের ওই কর্মীর কয়েকটা দাঁত ভেঙে গেছে। তার চোখে- মুখে, হাতে ও মাথায় আঘাত করা হয়েছে।
বেলা আড়াইটায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সায়েন্সল্যাব এবং ধানমণ্ডি এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। প্রধান সড়কে কোনো যানবাহন চলাচল করছে না। ধানমণ্ডি ও মোহাম্মদপুরগামী সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। বেশিরভাগ বাসাবাড়ির গেট লাগিয়ে লোকজন ভেতরে অবস্থান করছেন।
ধানমণ্ডি লেক হয়ে জিগাতলাগামী সাধারণ মানুষদের দেখলেই সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা তাদের মোবাইলফোন তল্লাশি করছেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের প্রধান কার্যালয়ের সামনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা লাঠিসোটা নিয়ে অবস্থান করছেন।
উল্লেখ্য, গতকাল শনিবার (৩ আগস্ট) বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার মন্ত্রিসভার পদত্যাগের এক দফা দাবি ঘোষণা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মো. নাহিদ ইসলাম।