এত হত্যা মেনে নেওয়া যায় না : সাবেক সেনাপ্রধান ইকবাল করিম
সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) ইকবাল করিম ভূঁইয়া বলেছেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে যে ‘নৃশংস হত্যাকাণ্ড’ চলছে, তা মেনে নেওয়া যায় না। তার দাবি, শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের বিপরীতে দ্বিতীয় পক্ষ উপর্যুপুরি উসকানি দিয়েছে, গুলি করে শিশু-কিশোর, তরুণদের হত্যা করেছে। তিনি দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে ছাত্র-জনতার মুখোমুখি দাঁড় না করাতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
আজ রোববার (৪ আগস্ট) রাজধানীর মহাখালীতে রাওয়া ক্লাব আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ইকবাল করিম ভূঁইয়া। তিনি বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনের শুরুটা দেশবাসী দেখেছেন। সরকার গুণ্ডা-পাণ্ডা দিয়ে সন্ত্রাস চালালো এবং পুলিশ, র্যাব, আনসার ও বিজিবি নামিয়ে, আকাশে হেলিকপ্টার উড়িয়ে নির্বিচারে গুলি করে অগণিত শিশুকিশোর ও তরুণের তাজা প্রাণ হরণ করল, তা দেশবাসী কি এত সহজে এই অল্প সময়ের মধ্যেই ভুলে যাবে। এ নৃশংস হত্যাকাণ্ড মেনে নেওয়া যায় না।’
ইকবাল করিম ভূঁইয়া আরও বলেন, শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে তাদের আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। সারাদেশের শিশু কিশোর ও তরুণরা শত উসকানি, হামলা ও নির্যাতনের মধ্যেও ধৈর্য ধরে শৃঙ্খলার সঙ্গে আস্তে আস্তে আইন মেনে সামনে পা বাড়াচ্ছিল। বিপরীতে দ্বিতীয় পক্ষ যে উপর্যুপুরি উসকানি দিল, গুণ্ডাপাণ্ডা দিয়ে সন্ত্রাস চালালো এবং পুলিশ, র্যাব, আনসার ও বিজিবি নামিয়ে, আকাশে হেলিকপ্টার উড়িয়ে নির্বিচারে গুলি করে অগণিত শিশু কিশোর ও তরুণের তাজা প্রাণ হরণ করল, তা দেশবাসী কি এত সহজে এই অল্প সময়ের মধ্যেই ভুলে যাবে।’
দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে ছাত্র-জনতার মুখোমুখি দাঁড় না করাতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে সাবেক সেনাপ্রধান ইকবাল করিম ভূঁইয়া বলেন, দ্রুত বিজিবি ও সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিন। সেনা কর্মকর্তাদের উদ্দেশে সাবেক এই সেনাপ্রধান বলেন, বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী তিন দশক ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম ও ত্যাগের মাধ্যমে যে সম্মান মর্যাদা ও গৌরব অর্জন করেছে তা আজ কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে। সার্বজনীন মানবাধিকারের আন্তর্জাতিক সর্বোচ্চ মান রক্ষা করেই আপনাদের সকলকে নিজ দেশের জনগণের পক্ষে দাঁড়াতে হবে। চোখের সামনে আমরা নিজেদের মাতৃভূমিকে ধ্বংস হতে দিতে পারি না।
আন্দোলন দমনের প্রক্রিয়ার সমালোচনা করে ইকবাল করিম বলেন, ‘আক্রমণকারীরা গণঅভ্যুত্থানের প্রতিরোধের মধ্যে পিছপা হতে বাধ্য হলে পরবর্তী পর্যায়ে ব্যবহার করা হলো বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীকে। তাদেরকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে কখনও সম্মুখভাবে, কখনো পেছনে ও পাশে দাঁড় করিয়ে অন্যান্য বাহিনীগুলো এই গণ-আন্দোলনের ওপর তাদের জুলুম অত্যাচার নির্যাতন অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। কোনোভাবেই এমন পরিস্থিতির দায় দেশপ্রেমিক সশস্ত্র বাহিনীর নেওয়া উচিত নয়। বাংলাদেশের স্বশস্ত্র বাহিনী অতীতে কখনো দেশবাসী বা সাধারণ জনগণের মুখোমুখি দাঁড়ায়নি, তাদের মুখে বন্দুক তাক করেনি।
এ সময় সাবেক সেনাপ্রধান নূরুদ্দীন খান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনসহ সাবেক ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।