অন্তর্বর্তী সরকারকে নির্বাচনের যৌক্তিক সময় দেওয়া হবে : মির্জা ফখরুল
দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ পুনঃস্থাপনের জন্য বর্তমান অর্ন্তবর্তী সরকারকে যৌক্তিক সময় দিতে হবে বলে গণমাধ্যমকর্মীদের জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ রোববার (২৫ আগস্ট) বিকেলে সিলেট নগরীর একটি অভিজাত হোটেলের কনফারেন্স রুমে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বিএনপির মহাসচিব এ কথা বলেন। সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপি এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘ছাত্র-জনতার অংশগ্রহণে ফ্যাসিবাদকে সরিয়ে নতুন দেশ গঠনের যে অভূতপূর্ব সুযোগ আমরা পেয়েছি, তা নস্যাৎ করতে এখনও ষড়যন্ত্র চলছে। আওয়ামী লীগের দুর্বৃত্তায়ন এত গভীরে গেছে যে, অল্প সময়ে তার সংস্কার হবে না। বর্তমান সরকারকে নির্বাচন কমিশন, পুলিশসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানকে সংস্কারে সময় দিতে হবে। এ জন্য রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি সরকারকে সমর্থন দিয়ে যাবে। তবে আওয়ামী লীগের ধ্বংস করা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে সংস্কারে নেওয়া সময় যেন অনির্দিষ্টকালের না হয়। যেটা ওয়ান ইলেভেনে হয়েছে। বর্তমান সরকারকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করতে হবে। তাদের সঙ্গে নিতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে আস্থার মধ্যে আনতে হবে।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে প্রয়োজনীয় সংস্কারে বর্তমান সরকাকে সহযোগিতা করবে বিএনপি। তবে সেটা একটা যৌক্তিক সময়ের মধ্যে হতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ একদলীয় শাসন ব্যবস্থা চালু করে রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে। মিডিয়াকে দলীয়করণ করেছে। অর্থনীতিকে পুরোপুরি নষ্ট করে দিয়েছে। এখনও শেখ হাসিনা ভারতে বসে দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে, বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করছে।
বিএনপির মহাসচিব আরও বলেন, ফ্যাসিবাদী সরকারকে উৎখাতের পর মুক্তিযুদ্ধে চেতনায় নতুন দেশ নির্মাণের সুযোগ এসেছে। যেখানে পূর্ণ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা থাকবে। মানুষ মুক্তভাবে কথা বলতে পারবে। আর এই আন্দোলন শুরু হয়েছিল ২০১২ সাল থেকে, যখন আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে একাই ক্ষমতায় টিকে থাকতে চেয়েছিল।
ক্ষমতার লোভ, দুর্নীতি, একগুঁয়েমি আর ভিন্নমতকে দমন করার মানসিকতার কারণে শেখ হাসিনা এখন দেশের সবচেয়ে ঘৃণিত ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, তার বাবা শেখ মুজিবুর রহমানকেও কলঙ্কিত করেছেন তিনি।
নানান দাবি নিয়ে অনেকেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ করছে—এতে অস্থিরতা আরও বাড়ছে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এটা স্বার্থপরতা। এত দিন তাঁরা কোথায় ছিলেন? স্বাভাবিকভাবেই দাবি দাওয়া উঠবে, যৌক্তিক সেই দাবি পূরণ করবে গণতান্ত্রিক সরকার। সেই সময়টুকু দিতে হবে। একটি নির্বাচিত সরকার আসা পর্যন্ত আওয়ামী লীগের জঞ্জাল দূর করার জন্য বর্তমান সরকারকে সময় দিতে হবে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজ দেশে বন্যা আক্রান্ত মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে সারা দেশের মানুষ এক হয়েছে। আমরা এমনই বাংলাদেশই দেখতে চাই। বন্যার্তদের সহায়তায় সবাই এগিয়ে এসেছে। এটাই জাতীয়তাবোধ।
জাতিসংঘ থেকে প্রতিনিধি দল এসে আওয়ামী লীগ আমলে গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলা শুরু করেছে জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা আশা করি তাদের ফিরে পাব। আমরা এই চাপ অব্যাহত রেখেছি। ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করায় বিএনপির নেতাকর্মীদের উপর এক লাখ ৪৫ হাজার গায়েবি মামলা হয়েছে। আসামি করা হয়েছে ৬০ লাখের বেশি মানুষকে। ক্ষমতায় টিকে থাকতে তারা দুই হাজারের বেশি বিএনপির নেতাকর্মীকে গুম-খুন করেছে। জনপ্রিয় নেতা ইলিয়াস আলীসহ অসংখ্য গুম হওয়ার ব্যক্তির পরিবার জানে না, কবে তারা ফিরে আসবেন।’
‘ফেরাউন-নমরুদের সমতুল্য শেখ হাসিনার হাত থেকে দেশকে মুক্ত করা হয়েছে। নতুন বাংলাদেশে আর প্রতিহিংসা বা নিপীড়নের রাজনীতি হবে না’উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা ভালোবাসা ও সম্প্রীতির রাজনীতি করব। ছাত্র-জনতার সম্মিলিত আন্দোলনে আওয়ামী লীগ দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া মুক্ত হয়েছেন। তিনি কখনও অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেননি।’
এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহানসচিব বলেন, ‘ভাটির দেশ হওয়ায় ভারত থেকে পানি নেমে আসা স্বাভাবিক হলেও তারা এটা দিয়ে বাংলাদেশকে কাবু করে রাখার চেষ্টা করে। ভারতের সঙ্গে ৫৪টি অভিন্ন নদীর পানির অধিকার নিয়েও এখন তৎপর হতে হবে। বারবার বিভিন্ন সরকার পানির অধিকারের দাবি নিয়ে কথা বলেছে কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের সেই দাবি এখনও পূরণ হয়নি।’
এ সময় বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী, তাহসিনা রুশদীর লুনা, বিএনপির কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক ও মহানগর শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মিফতাহ সিদ্দিকী, সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী, জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ূম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরীসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে আজ দুপুর ১২টায় বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে সিলেটে পৌঁছান বিএনপির মহাসচিব। তিনি শাহজালাল (র.) ও হযরত শাহপরাণ (র.)-এর মাজার জিয়ারত করেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে তাঁর সহধর্মিণী রাহাত আরা বেগম এবং পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর এই প্রথম সিলেট সফর করলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।