ছাত্রশিবিরের ৬ জনসহ গুম হওয়াদের সন্ধানের দাবি
স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের আমলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাধ্যমে ইসলামী ছাত্রশিবিরের ছয়জন দায়িত্বশীলসহ গুম হওয়া সবার সন্ধানে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার দাবিতে বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। আজ শুক্রবার (৩০ আগস্ট) আন্তর্জাতিক গুম দিবসে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম ও সেক্রেটারি জেনারেল জাহিদুল ইসলাম যৌথ বিবৃতি দেন।
নেতারা বলেন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই মেধাবী ছাত্রনেতা ওয়ালীউল্লাহ ও আল মুকাদ্দাস, রাজধানীর আদাবরের হাফেজ জাকির হোসেন, বেনাপোলের রেজওয়ান হুসাইন, বান্দরবানের জয়নাল হোসেন এবং ঝিনাদহের মু. কামরুজ্জামান—এই ছয়জন ছাত্রশিবির নেতাসহ অনেক মানুষকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেপ্তার করার পর গুম করেছে। বিভিন্ন সংগঠন ও পরিবারের পক্ষ থেকে অব্যাহত উদ্বেগ ও সন্ধানের দাবি জানানো হলেও প্রশাসন তাদের সন্ধানে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। এমনকি, অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর কিছু ব্যক্তি ফিরলেও আসেনি আমাদের প্রিয় ভাইগুলো। আমরা এ নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন!
২০১২ সালের ফেব্রুয়ারির ৪ তারিখ ব্যক্তিগত কাজ শেষে ঢাকা থেকে কুষ্টিয়াগামী হানিফ এন্টারপ্রাইজের ৩৭৫০ নম্বর গাড়িতে ক্যাম্পাসে যাওয়ার পথে মধ্যরাতে গাড়ি থেকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দাওয়াহ অ্যান্ড ইসলামী স্টাডিজ বিভাগের মেধাবী ছাত্র ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ছাত্রশিবিরের সাবেক অর্থ সম্পাদক মো. ওয়ালীউল্লাহ এবং ফিকাহ বিভাগের মেধাবী ছাত্র ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ছাত্রশিবিরের সাবেক সাংস্কৃতিক সম্পাদক আল মুকাদ্দাসকে আশুলিয়ার নবীনগর থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিচয়ে গ্রেপ্তার করে। অথচ, আজ পর্যন্ত তাদের গ্রেপ্তারের কথা স্বীকার করেনি পুলিশ।
অন্যদিকে, ২০১৩ সালের ২ এপ্রিল দিবাগত রাত ৪টায় সাদা পোশাকধারী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শ্যামলী রিং রোডের ১৯/৬ টিক্কাপাড়া বাসা থেকে হাফেজ জাকির হোসেনকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। ১১ বছর পেরিয়ে গেলেও তার কোনো সন্ধান দেয়নি পুলিশ। একইভাবে ২০১৬ সালের ৪ আগস্ট দুপুর ১২টায় বেনাপোল পোর্টসংলগ্ন দুর্গাপুর বাজার থেকে বেনাপোল পোর্ট থানার এসআই নূর আলমের উপস্থিতিতে দোকান মালিক, কর্মচারীসহ অসংখ্য মানুষের সামনে থেকে গ্রেপ্তার করা হয় ছাত্রশিবির নেতা রেজওয়ানকে। আট বছর পেরিয়ে গেছে; কিন্তু আজও তার কোনো সন্ধান দেয়নি পুলিশ। একই বছরের অক্টোবর মাসের ২৩ তারিখ বান্দরবান সদরের ৩নং ওয়ার্ড থেকে ছাত্রশিবিরের সদস্য জয়নাল হোসেনকে গুম করা হয়। পরের বছর (২০১৭) ৭ এপ্রিল ঝিনাইদহের সিদ্দিকীয়া কামিল মাদ্রাসা মেধাবী ছাত্রশিবিরের কর্মী মু. কামরুজ্জামানকে ঝিনাইদহ সদরের লেবু তলা থেকে ডিবি পরিচয়ে নিয়ে যায়, দীর্ঘ সময় ধরে সংগঠন ও তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে তাদের সন্ধানে বিভিন্ন সরকারি ও মানবাধিকার সংস্থায় অভিযোগ জানিয়েও কোনো ফল পাচ্ছে না।
নেতারা আরও বলেন, এই অমানবিক ও গর্হিত আচরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠন ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। তবে, স্বৈর-সরকারের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এসব গুমের ঘটনা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে বিবেচিত। এমনকি অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের ২০ দিন অতিবাহিত হলেও তাদের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যায়নি। আমরা এ নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন!