সারা দেশে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ‘শহীদী মার্চ’
স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকার পতনের এক মাস পূর্তিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সারা দেশে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ‘শহীদী মার্চ’ কর্মসূচি পালন করেছে। আজ বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে এই কর্মসূচি পালন করা হয়।
এই ‘শহীদী মার্চ’ কর্মসূচিতে স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার হাজার শিক্ষার্থীর সঙ্গে যোগ দিয়েছেন সর্বস্তরের মানুষ। মুখে স্লোগান, হাতে লাল-সবুজের পতাকা। কেউ কেউ মাথায় পতাকা বেঁধেছেন। অনেক শিশুও স্কুলের পোশাক পরে এতে যোগ দিয়েছে। কর্মসূচি চলাকালে আশপাশের দোকানি ও পথচারীরা হাত নাড়িয়ে তাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে। আজ বিকাল তিনটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু স্মৃতি ভাস্কর্যের পাদদেশ থেকে কেন্দ্রীয় পদযাত্রা শুরু হয়।
কেন্দ্রীয় ‘শহীদী মার্চ’ কর্মসূচি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে শুরু হয়ে নীলক্ষেত, সায়েন্স ল্যাব, কলাবাগান, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে যায়। এরপর এটি বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়।
কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সারা দেশে ‘শহীদী মার্চ’ পালনের খবর পাঠিয়েছেন এনটিভির প্রতিনিধিরা।
আরিচ আহমেদ শাহ, চট্টগ্রাম
স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনের এক মাস পূর্তিতে জুলাই বিপ্লবে শহীদদের স্মরণে ‘শহীদী মার্চ’ পালিত হয়েছে চট্টগ্রামে। এতে অংশ নেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী।
আজ দুপুরে নগরীর ষোলশহর স্টেশনে জড়ো হন তাঁরা। এরপর বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে মার্চ করে মুরাদপুর এলাকায় সমাবেশের মাধ্যমে শহীদদের স্মরণ করে ছাত্র-জনতা। গত মাসে আন্দোলন চলাকালে পুলিশ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের হামলায় ছয়জন ছাত্র-জনতা শহীদ হন।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, যেকোনো মূল্যে রক্তে কেনা স্বাধীনতা রক্ষা করবেন তাঁরা। পতিত স্বৈরাচারের নেতৃত্বে এখনও দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র চলমান রয়েছে। এসব ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বানও জানান ছাত্রনেতারা।
শ.ম সাজু, রাজশাহ
স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতন এবং ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের এক মাস পূর্তিতে আহত ও নিহতদের স্মরণে রাজশাহীতেও অনুষ্ঠিত হয়েছে শহীদী মার্চ। আজ বিকেল ৩টার পর থেকে পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে তালাইমারী মোড়ে জমায়েত হন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা।
সেখানে জুলাই অভ্যুত্থানে নিহত ও আহতদের স্মরণে কবিতা, গান ও স্মৃতিচারণামূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ সময় তাঁরা স্বৈরাচারবিরোধী নানা স্লোগান দিয়ে শহীদদের স্মরণ করেন।
সমাবেশে ছাত্র আন্দোলনের নেতারা বলেন, এই আন্দোলন ঘিরে সারা দেশে হাজারো ছাত্র-জনতা শহীদ হলেও রাজশাহীর শহীদ আলী রায়হান এবং সাকিব আনজুম আমাদের ঠিক পাশে থেকে আন্দেলন করে গেছেন।
এ সময় শহীদ আলী রায়হানের রক্তভেজা পোশাকটি সবার সামনে তুলে ধরা হয়। তারা জানান, আলী রায়হান ও সাকিব আনজুমের রক্ত বৃথা যেতে দেওয়া যাবে না। নতুন বাংলাদেশ গড়তে পারলেই তাদের আত্মা শান্তি পাবে।
শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে যে স্বৈরশাসকের পতন হয়েছে, তাদের দ্রুত বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে। একইসঙ্গে এই দেশে যেন আর স্বৈরশাসন ফিরে আসতে না পারে, এজন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে রাষ্ট্রের পুনর্গঠন করতে হবে। সব প্রতিষ্ঠান থেকে স্বৈরশাসন উপড়ে ফেলতে হবে।
আকতার ফারুক শাহিন, বরিশাল
বরিশালেও পালিত হয়েছে শহীদী মার্চ কর্মসূচি। ব্রজমোহন কলেজের জিরো পয়েন্ট থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা এই মিছিল বের করেন। এতে বিএম কলেজ ছাড়াও বেশ কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। বিএম কলেজ হয়ে মিছিলটি কলেজ রোড, নতুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল এলাকা, সিএন্ডবি রোডসহ গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে। মিছিলের সম্মুখে ছিলেন গুলিবিদ্ধ হয়ে চোখ হারানো এক যুবক।
এ সময় ছাত্রনেতারা বলেন, হাজারো ছাত্র-জনতার জীবনের বিনিময়ে পাওয়া নতুন বাংলাদেশে সব ধরনের বৈষম্য প্রতিরোধে তাঁরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
আইয়ুব আলী, ময়মনসিংহ
ময়মনসিংহেও জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণে ‘শহীদী মার্চ’ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। আজ বিকেলে টাউন হল এলাকার সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্কয়ারে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে শিক্ষার্থীরা ‘শহীদী মার্চ’ বের করেন। মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক ঘুরে সারদা ঘোষ রোডে আন্দোলনে নিহত রেদুয়ান আহমেদ সাগরের নামে স্থাপিত ‘শহীদ সাগর’ চত্বরে গিয়ে শেষ হয়।
এতে অংশ গ্রহণ করেন সমন্বয়ক গকুল সূত্রধর মানিক, আশিকুর রহমান, আলী হোসেন, তাহমিদ রেদোয়ান ও আনোয়ার হোসেন মঞ্জু।
‘শহীদী মার্চ’ কর্মসূচিতে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ছাড়াও বিপুল সংখ্যক সাধারণ মানুষ অংশগ্রহণ করেন।