ঝিনাইদহ ত্রাণ ও পুনর্বাসন দপ্তরের গুদাম খালি, অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ
ঝিনাইদহ জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন দপ্তরে সংরক্ষিত চটের (মিনি বস্তায়) প্যাকেটগুলো খালি পড়ে আছে। গতকাল শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) সকালে জেলার কোটচাঁদপুর উপজেলার জন্য বরাদ্দ করা ৩০ বান্ডিল ঢেউটিন গুদাম থেকে বের করার সময় তোলপাড় শুরু হয়। অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার তথ্য।
জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ঝিনাইদহ জেলার ছয়টি উপজেলার জন্য প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়িঘর মেরামত বা নতুন করে নির্মাণের লক্ষ্যে মানবিক সহয়তা হিসেবে বিতরণ করতে ৩০০ বান্ডিল ঢেউটিন এবং বান্ডিল প্রতি তিন হাজার টাকা করে মজুরি দেয় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। ওই মজুরির উপবরাদ্দ পত্রে স্বাক্ষর করেছেন তৎকালীন জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) তারেক আজিজ। কিন্তু, টিন যথাসময়ে বিতরণ করা হয়নি।
গত ৫ আগস্ট স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার পতনের পর গতকাল শনিবার টিনের বিতরণ দেখানো হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, গুদামের ভেতর থেকে বান্ডিল বান্ডিল ঢেউটিন বের করা হচ্ছে। সেখানে উপস্থিত আছেন জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন দপ্তরের কর্মকর্তা জল্পনা রানী সরকার ও অফিস সহায়ক রবিউল এবং কোটচাঁদপুর পিআইও দপ্তরের অফিস সহায়ক মো. রবিউল ইসলাম। এই টিন কোথায় বিতরণ করা হচ্ছে, জানতে চাইলে তারা কেউ সদুত্তর দিতে পারেননি।
সূত্রমতে, হতদরিদ্র জনগোষ্ঠির মাঝে বিতরণের জন্য ২০২২-২৩ অর্থবছরে কেনা হয়েছিল আট পদের প্রয়োজনীয় পণ্য। যার টেন্ডার আইডি নম্বর ৭১৭৮১৮। একটি বেসরকারি কোম্পানি ২০২২ সালের ১৭ জুলাই পণ্যগুলো প্যাকেট (চটের মিনি বস্তা) ভর্তি করে খুলনা থেকে সরবরাহ করে। প্রতিটিতে (বস্তা) ছিল ১০ কেজি মিনিকেট চাল (৫ কেজি করে দুই প্যাকেট), দেশি মসুর ডাল এক কেজি, আয়ডিনযুক্ত লবণ এক কেজি, চিনি এক কেজি, ভোজ্যতেল এক কেজি, মরিচের গুঁড়া ১০০ গ্রাম, হলুদ ২০০ গ্রাম, ধনিয়ার গুড়া ১০০ গ্রাম। বস্তার (প্যাকেট) ওজন ১৪ কেজি ৪০ গ্রাম। বিতরণের কাজ দুই অর্থবছরেও (২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪) শেষ করা হয়নি।
শত শত বস্তা এসব পণ্য এখন কোথায়, প্রশ্নে জল্পনা রানী সরকার জানান, বন্যার্দুগতদের বিতরণ করা হয়েছে। অথচ, ঝিনাইদহ জেলার কোথাও এখনও বন্যা বা দুর্যোগের ঘটনা ঘটেনি।
অভিযোগ রয়েছে, ঝিনাইদহ জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন দপ্তরে ২০১৯ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ডিআরও পদে কোনো কর্মকর্তা নেই। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার ভারপ্রাপ্ত হয়ে দপ্তরটি পরিচালনা করছেন।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ১৪ আগস্ট তালা খুলে গুদামের দরজা বন্ধ করে শেখ হাসিনা লেখা চটের বস্তা (মিনি প্যাকেট) গোপনে সাদা রংয়ের প্লাস্টিকের বস্তায় ভর্তি করা হয়। পরবর্তী সময়ে ওই পণ্য ভর্তি শত শত বস্তা গুদাম থেকে সরিয়ে ফেলা হয়। অভিযোগ উঠেছে, এর আগে ভোজ্যতেল এবং কিছু কিছু প্যাকেট থেকে চিনি লুকিয়ে ফেলা হয়েছিল।
অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে বর্তমান জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. বনি আমিন বলেন, বন্ধের দিনে ত্রাণের গুদাম খোলা যাবে না এমন কোনো বিধান নেই।
ঝিনাইদহ জেলার ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. আতিকুল মামুন জানান, ‘গুদামের চাবি থাকে বড় বাবুর (ঝল্পনা সরকার) কাছে। পণ্য ও টিন বিতরণের কার্যক্রম শনিবার (৭ সেপ্টম্বর) বিকেল থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এমনও হতে পারে বরাদ্দ দিয়েছে, কিন্তু নিতে পারেনি। এখন নিচ্ছে, খবর নিয়ে আমি আপনাকে (প্রতিবেদক) জানাচ্ছি।’