মোটরসাইকেল আটক ক্যাম্প ইনচার্জের, ঘুষ নিয়ে ছেড়ে দিলেন কনস্টেবল
মোটরসাইকেল আটক করলেন ক্যাম্প ইনচার্জ। হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে ছেড়ে দিলেন দুই পুলিশ কনস্টেবল। ঘটনাটি ঘটেছে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বাণিজ্যিক এলাকা ডাকবাংলা পুলিশ ফাঁড়িতে। আজ বৃহস্পতিবার (১৬ মে) ঘুষ লেনদেনের একটি অডিও ক্লিপ ফাঁস হলে তোলপাড় শুরু হয় শহরজুরে।
খবর নিশ্চিত করেছেন সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীন উদ্দিন।
ওসি জানান, ঘুষ লেনদের সঙ্গে জড়িত দুই কনস্টেবলের বিরুদ্ধে বিভাগীয় জিডি করা হয়েছে। তদন্ত করে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অনুসন্ধানকালে ভুক্তভোগী ডাকবাংলা বাজারের নারায়ণপুর ত্রিমোহনী এলাকার সাহবুদ্দিনের ছেলে আশরাফুল ইসলাম রিপন অভিযোগ করে জানান, গত ১৪ মে বিকেল অনুমান সাড়ে ৪টার দিকে তেল ভরতে মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন তিনি। পাম্প থেকে তেল নিয়ে ফেরার পথে ডাকবাংলা পুলিশ ক্যাম্পের সামনে থামানো হয় তাঁকে। সেখানে উপস্থিত উপপরিদর্শক (এসআই) হেলমেট না থাকায় ‘ইয়ামাহা ভার্সন-২’ মোটরসাইকেলটি আটক করে ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেন। অনুনয়-বিনয় করার পরও আইনের অজুহাতে মোটরসাইকেলটি তিনি ছাড়েননি। কিছু সময় পর ফোনে তাঁকে জানানো হয় এক হাজার টাকা দিলে মোটরসাইকেলটি ছেড়ে দেওয়া হবে। ৫০০ টাকা দিতে রাজি হন তিনি। কিন্তু না, এক হাজার টাকাই দিতে হবে।
রিপনের করা অভিযোগ একজন কনস্টেবল টাকা নিতে চলে আসেন তাঁর কাছে। ওই দিন সন্ধ্যা অনুমান পৌনে ৭টার দিকে এক হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে ক্যাম্প থেকে মোটরসাইকেলটি ছেড়ে দেওয়া হয়।
রিপনের সঙ্গে পুলিশ কনস্টেবলের ঘুষ লেনদেনের কথোপকথনের কল রেকর্ডের অডিওটি ফাঁস হয়ে গেলে তোলপাড় শুরু হয় শহরজুড়ে।
জানা যায়, ডাকবাংলা পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই সোহাগ হুসাইন। ঘটনার দিন তিনি নিজে ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গা সড়কে (ডাক বাংলা পুলিশ ক্যাম্পের সামনে) চেকপোস্টের নেতৃত্বে ছিলেন। হেলমেট না থাকায় রিপনের মোটরসাইকেলটি আটক করে ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেন তিনি। বিধি মোতাবেক কেস স্লিপ দেওয়া হয়নি তাঁকে। কিছু সময় পর ওই ক্যাম্পের জিপচালক কনস্টেবল আল-আসমাউল হুসাইন মোবাইল ফোনে রিপনের কাছে ফোন দিয়ে এক হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। এক হাজার টাকা নিয়ে (ফোন রেকর্ড মোতাবেক) রিপনকে আসতে বলেন তিনি। রিপন এক হাজার টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। ৫০০ টাকা দিতে রাজি হন তিনি। কিন্তু না, এক হাজার টাকাই দিতে হবে। আইসি সাহেবের নির্দেশ-এক হাজার টাকা না দিলে মোটরসাইকেল ছাড়া হবে না। অডিওর সূত্র ধরে বেরিয়ে আসে জিপচালক আল-আসমাউল হুসাইন ছাড়াও টাকা দাবি করে রিপনের সঙ্গে কথা বলা আরও একজন। তিনি হলেন ওই ক্যাম্পের কনস্টেবল মোজাফ্ফর।
এ বিষয়ে এসআই সোহাগ হুসাইন নিজেকে নির্দোষ দাবি করে জানান, মোটরসাইকেল ছেড়ে দিতে ঘুষ লেনদেন করেছেন কনস্টেবল আল-আসমাউল হুসাইন ও মোজাফ্ফর। ইতোমধ্যে বিষয়টি পদস্থদের অবগত করা হয়েছে।
তবে জিপচালক কনস্টেবল আল-আসমাউল হুসাইন এসআই সোহাগ হুসাইনের বিষয়ে বলেন, ‘ওনি সঠিক কথা বলেননি। নিজের লেনদেন ভালো বোঝেন, এখন গরিবের পেটে লাথি মারা হচ্ছে।’