স্বামী হত্যা মামলায় স্ত্রীর যাবজ্জীবন, তিনজনের আমৃত্যু দণ্ড
মুন্সীগঞ্জে স্বামী হত্যা মামলায় স্ত্রী রেশমা বেগমকে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডসহ এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের রায় দিয়েছে আদালত। রায়ে অপর আসামি মো. ফারুক মিয়া, মো. বেলায়েত হোসেন ও নাসির উদ্দিন মিঠুকে দোষী সাব্যস্ত করে প্রত্যেককে আমৃত্যু কারাদণ্ডসহ এক লাখ টাকা করে অর্থদণ্ডের রায় দিয়েছেন আদালত। আসািমরা জামিনে যাওয়ার পর পলাতক রয়েছেন।
আহ মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিচারক খালেদা ইয়াসমিন ঊর্মি এ রায় ঘোষণা করেন। আসামি রেশমা বেগম মুন্সীগঞ্জের সদর উপজেলার পাঁচ ঘরিয়াকান্দি গ্রামের হোসেন সরকারের মেয়ে এবং নিহত মোশারফ হোসেনের স্ত্রী। ফারুক মিয়া নারায়ণগঞ্জের শিদ্ধিরগঞ্জ থানার মিজমিজি চৌধুরীপাড়ার মৃত মনুমিয়ার ছেলে, নাছির উদ্দিন মিঠু কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার বন্ধনপুর এলাকার বদুরুজ্জামানের ছেলে এবং বেলায়েত হোসেন ঢাকার উত্তর যাত্রাবাড়ী এলাকার মৃত আমির হোসেনের ছেলে।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, ভিকটিম মোশারফ হোসেন দীর্ঘদিন ধরে গ্রিসে ব্যবসা করতেন। মাঝেমধ্যে দেশে আসতেন। ২০১০ সালের ৯ আগস্ট তিনি বাংলাদেশে আসেন। ১০ আগস্ট মুন্সীগঞ্জ সদরের পাঁচঘরিয়াকান্দি তাঁর শ্বশুরবাড়িতে আসেন। কাজ শেষ করে বিকেল ৬টার দিকে তিনি ঢাকার উদ্দেশে শ্বশুরবাড়ি থেকে বের হয়ে লিচুতলা বাসট্যান্ডে সীমান্ত পরিবহণের কাউন্টারের সামনে এলে অজ্ঞাতপরিচয় চার ব্যক্তি দুটি মোটরসাইকেলযোগে এসে তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি করলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তাৎক্ষণিক পুলিশ এসে তাঁকে চিকিৎসার জন্য মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। তাঁর অবস্থা খারাপ হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য পুলিশ অ্যাম্বুলেন্সযোগে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মোশারফকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত মোশারফের দুই সন্তান। তিনি গ্রিসে থাকা অবস্থায় স্ত্রী রেশমা বেগম আসামি বেলায়েত হোসেনের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়ান। তাঁরা ভাড়াটিয়া খুনিদের মাধ্যমে তাঁকে হত্যা করেন।
এ ঘটনায় মোশারফের মা হাজেরা বেগম বাদী হয়ে ২০১০ সালের ১১ আগস্ট মুন্সীগঞ্জ থানায় ছেলে হত্যার অভিযোগে মামলা করেন। মামলা হওয়ার পর পুলিশ কৌশলে সব আসামিদের গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করে। এ সময় আসামি বেলায়েত ও ফারুক মিয়া হত্যার বিষয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। দীর্ঘ ১৪ বছর মামলা চলাকলীন ২৫ সাক্ষীর জেরা ও জবানবন্দির ভিত্তিতে আদালত চার আসামিকে দোষী সাব্যস্ত করে এ রায় দেন।
বিষয়টি নিশ্চত করে ওই আদালতের অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম পল্টু জানান, ২০১০ সালের ১০ আগস্ট ভিকটিম মোশারফ হোসেনকে আসামিরা মিলে পরিকল্পিতভাবে গুলি করে হত্যা করেছেন। আজ আদালত আসামিদের দোষী সাব্যস্ত করে এ রায় দেন। রায়ে আমরা রাষ্ট্রপক্ষ সন্তুষ্ট।