‘হাতজোড় করে বলছি, গার্মেন্টস চালু রাখুন’
আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে তৈরি পোশাক কারখানা চালু রাখার আহ্বান জানিয়েছেন সাভারের দুইবারের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির কেন্দ্রীয় সহপরিবার পরিকল্পনা সম্পাদক ডা. দেওয়ান মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বাবু। দুই হাত তুলে সমবেত শ্রমিক-জনতার উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘হাতজোড় করে বলছি, আপনারা গার্মেন্টস চালু রাখেন।’
গতকাল বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) আশুলিয়ার নরসিংহপুরে এক সমাবেশে এসব কথা বলেন সাবেক এই সংসদ সদস্য।
বিএনপিনেতা ডা. দেওয়ান সালাউদ্দিন বাবু বলেন, ‘ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা দেশ থেকে বিতারিত হবার পর দেশের বিভিন্ন এলাকায় অনেকেই মামলা খেয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকেই পালিয়ে এসে আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে। গার্মেন্টসের এই অসন্তোষের পেছনে এই সমস্ত লোকেদের এক ধরনের হাত আছে এবং তারা নেপথ্যে কলকাঠি নারছে। তাই আমি ওয়ার্ড পর্যায়ের বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের বলবো, আপনারাও খেয়াল করেন যাদেরকে আপনারা চিনেন না তারা এলাকায় কী করে? তাদেরকে আপনারা প্রশ্ন করেন, তাদের পরিচয় নিশ্চিত করেন। আপনাদের এই এলাকার নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে হবে।’
সাবেক এমপি দেওয়ান সালাউদ্দিন বাবু বলেন, ‘অনেকেই বলছেন, গার্মেন্টস শিল্পের অস্থিরতার পেছনে নাকি বিএনপির নেতাকর্মীদের হাত রয়েছে। আমি ডা. দেওয়ান সালাউদ্দীন দুইবারের সংসদ সদস্য ও ঢাকা জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি হিসেবে বলতে চাই, যদি আমাদের ব্যাপারে কোনো অভিযোগ গোয়েন্দা সংস্থা, পুলিশ বা সেনাবাহিনীর কাছে থাকে, আপনারা যাকে ইচ্ছা তাকে গ্রেপ্তার করেন। এতে আমি কারও জন্য কোনো রিকোয়েস্ট (অনুরোধ) করব না।’
দেওয়ান সালাউদ্দিন বাবু আরও বলেন, ‘এ ছাড়া এখানে যারা বাড়ির মালিক আছেন, আমি তাদেরকে অনুরোধ করব, আপনাদের বাড়িতে অনেক গার্মেন্টস শ্রমিক বসবাস করে আপনারা আজকে রাতে তাদের সবাইকে নিয়ে বসবেন এবং তাদেরকে একটু বুঝিয়ে বলবেন, তারা যেন মালিকদের একটু সময় দেন। কারণ অনেক অর্ডার অন্যান্য দেশে চলে যাচ্ছে। এখানে দেশের বাইরেরও চক্রান্ত রয়েছে, আপনারাও দয়া করে দায়িত্ব নেন তাদেরকে কাজে ফেরান। যেকোনো মূল্যে গার্মেন্টস বাঁচাতে হবে, এটা রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি।’
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম প্রতিবেশী দেশের দিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, ‘যেসব দেশের বাংলাদেশ থেকে গার্মেন্টস ব্যবসা নিয়ে যাবার ইচ্ছে আছে, তারা আমাদেরকে শান্তিতে ব্যবসা করার খুব একটা সুযোগ দেবে না। অসন্তোষের অজুহাতে ইতোমধ্যে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ অর্ডার শিফট করেছে অন্য দেশে। এর প্রভাব মারাত্মক। আমাদের অধিকার আমাদেরকে রক্ষা করতে হবে। আমাদের সবাইকে হাতে হাত মিলিয়ে এই সাময়িক দুর্যোগের সময় ঐক্যবদ্ধভাবে পাশে দাঁড়াতে হবে।’
খন্দকার রফিকুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশের নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর সময়। আমি বিজিএমইএর সভাপতি হিসেবে মালিকদের পক্ষ থেকে আপনাদের কাছে আকুল আবেদন জানাই, আপনারা সবাই সহযোগিতা করেন। শ্রমিক ভাই ও বোনেরা যেন কাজে যোগ দেযন। এই ক্রান্তিকালে আমাদের যখন ঘুরে দাঁড়ানোর সময়, তখন গার্মেন্টস শিল্পকে ক্ষতিগ্রস্ত করে দেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করার ষড়যন্ত্র চলছে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তা রুখে দাঁড়াতে হবে।’
সাবেক সংসদ সদস্য ডা. দেওয়ান মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বাবুর সভাপতিত্বে শ্রমিক জনতার সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ, আল মুসলিম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল্লাহ, সাভার উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান দেওয়ান মঈনউদ্দিন বিপ্লব ও আশুলিয়া থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল গফুর মিয়াসহ অন্যান্যরা।
আশুলিয়ায় টানা অস্থিরতা চতুর্দশ দিনে গড়িয়েছে বৃহস্পতিবার। পুলিশ, আর্মড পুলিশ, শিল্প পুলিশ, র্যাব বিজিবি ও সেনাবাহিনীর মাঠে নামিয়েও যখন কার্যত তোমন কার্যকর ফল মেলেনি এখনও। জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে দেশের অর্থনীতিকে সোজা হয়ে দাঁড়াতে শ্রমিক ও মালিক উভয় পক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে শ্রমিকদের সমস্যার স্থায়ী সমাধান করার কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। একইসঙ্গে শ্রমিকদের কারখানা চালু রাখার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।
এমন প্রেক্ষাপটে আজ বৃহস্পতিবার খুলে দেওয়া হয়েছে আশুলিয়ায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষিত তৈরি পোশাক কারখানা।
শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারায় গতকাল বুধবার শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় বন্ধ করা হয় ৫৪টি কারখানা। ‘নো ওয়ার্ক নো পে’ অর্থাৎ ‘কাজ নেই তো মজুরিও নেই’ ধারায় বন্ধ হওয়া কারখানাগুলো যত দিন বন্ধ থাকবে ততদিনের মজুরি পাবেন না শ্রমিকরা।
আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সতর্ক অবস্থানের মধ্যে আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই বিভিন্ন কারখানায় প্রবেশ করতে দেখা গেছে শ্রমিকদের। শিল্পাঞ্চলজুড়ে বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি। উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় শ্রমিক-মালিক সম্পর্ককে জোরদার করার পাশাপাশি রাজনৈতিক নেতাদেরকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।