বরগুনায় ভারী বর্ষণ, সব হারিয়ে দিশেহারা কৃষকরা
বর্ষা পেরিয়ে এসেছে শরৎ। বছরের এই সময়ে কৃষকরা আমনের বীজ রোপণ করছিলেন। কেউ কেউ প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন আউশের পাকা ধান কাটার। ঠিক এমন সময়ে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে কয়েক দিনের টানা ভারী বর্ষণে ফসলের খেতে পানি জমেছে। ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আমনের বীজতলা। ভেসে গেছে আউশের পাকা ধান। নষ্ট হয়েছে শীতকালীন সবজির আগাম আবাদ। সব হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা।
বর্ষার পানিতে বারবার বীজতলা নষ্ট হওয়ায় আমন ধানের চারা সংকটেও পড়েছে এ অঞ্চলের অনেক কৃষক। ক্ষতিগ্রস্ত এসব কৃষকদের ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পরামর্শের পাশাপাশি সরকারি সহায়তা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বরগুনার কৃষি বিভাগ।
বরগুনার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর জেলায় ৩৫ হাজার ১৯৪ হেক্টর জমিতে আউশ ধানের আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে ভারী বর্ষণের আগে অতিবৃষ্টিতে ক্ষতি হয়েছে তিন হাজার ১০৮ হেক্টর জমির ধান। এ ছাড়া বরগুনায় আমনের বীজতলা রয়েছে আট হাজার ৭০৭ হেক্টর জমিতে। যার মধ্যে প্রায় দুই হাজর ৯০ হেক্টর বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে নিম্নচাপের পর টানা ভারী বর্ষণে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা এখনও নিরূপণ করা যায়নি।
সরেজমিনে বরগুনায় দেখা গেছে, তলিয়ে গেছে বিভিন্ন এলাকার কৃষকের আউশ ধানের খেত। অনেকের আবার নষ্ট হয়েছে আমন ধানের বীজতলা।
ক্ষতিগ্রস্ত বরগুনা সদর উপজেলার বাঁশবুনিয়া এলাকার কৃষক মো. কালাম জানান, এ বছর অতিবৃষ্টির কারণে ইরি ধান চাষ করতে পারেননি। আমন ধানের যে বীজ তৈরি করছেন তা-ও নষ্ট হয়েছে। ধানের খেতে শুধু পানি আর পানি।
মো. আল আমিন নামের আরেক কৃষক জানান, পানিতে ডুবে আমনের বীজতলা নষ্ট হয়েছে। আউশ ধানেরও ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক। এবার তারা কোনো আর্থিক সহায়তা না পেলে কীভাবে বেঁচে থাকবেন তা অজানা।
বুড়িরচর গ্রামের একজন কৃষক মোশাররফ হোসেন জানান, শীতকালীন আগাম সবজি যেমন করল্লা, লাউ, টমেটো, পেঁপে, সিম, বরবটি চাষ করেছিলেন তিনি। অতিবৃষ্টির কারণে তার সবই প্রায় শেষ হয়ে গেছে।
বরগুনার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. আবু সৈয়দ মো. জোবায়দুল আলম বলেন, ‘আশা করি আমনের জন্য নির্ধারিত প্রায় এক লাখ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হবে। এ অঞ্চলের কৃষকরা শতভাগ আমন ধানের চাষাবাদ করেন। তবে ভারী বর্ষণে আউশ ধানেরও ব্যপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতি পোষানোর জন্য আশা করি আগামীতে কৃষকদের সহায়তার পরিমাণ বাড়িয়ে দ্বিগুণ করতে সক্ষম হব।’