কোন দিকে যাচ্ছে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম?
জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জানুয়ারি থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ শুরু হওয়ার কথা। নির্বাচন কমিশনের রুটিন আছে ২ জানুয়ারি থেকে করার। যদিও এখন প্রতিদিনের হালনাগাদ চলছে। তবে, বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদের বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বলে অনেকের ধারণা। কেননা, এই কর্মসূচিটি হাতে নেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অনুমোদনের প্রয়োজন, যেটা বর্তমানে নেই।
আজ সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) নির্বাচন ভবনের সভাকক্ষে এক বৈঠকের আগে ব্রিফিংয়ে ইসি সচিব শফিউল আজিম সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান। এবার বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হবে কি না, জানতে চাইলে ইসি সচিব বলেন, ২০০৯ সালে ভোটার তালিকা আইন অনুযায়ী জানুয়ারিতে শুরু হবে। সে সময়টা এখনো আসেনি। আমাদের রুটিন আছে ২ জানুয়ারি থেকে করা। এখন প্রতিদিনের হালনাগাদ করছি।
কমিশনের অনুমোদন ছাড়া হালনাগাদের বিষয়টি ঘোষণা করবেন কি না, হবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, এটা কমিশনের কাজ। সুতারং, বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার সিদ্ধান্ত কমিশন নেবে। এখন তো আইনে আমার লিগ্যাল অথরিটি নেই। এতো দিন যেটা হয়ে গেছে, সেটা তো আসেনি।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার এক দফা দাবির মুখে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। পরে সংসদ ভেঙে দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি। সংসদ ভেঙে যাওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী সেই সময় শেষ হবে আগামী ৪ নভেম্বর। এদিকে, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েই নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার বিষয় কমিশন গঠনের ঘোষণা দেয়। এতে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন পদত্যাগ করে।
বর্তমানে কমিশনহীন ইসিতে আইনে নির্ধারিত রুটিন কাজগুলো করছেন ইসি সচিব শফিউল আজিম। আইন অনুযায়ী, কমিশনের অনুমোদনক্রমে প্রতিবছর দুই জানুয়ারি থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম পরিচালনার বিধান রয়েছে। এক্ষেত্রে তথ্য সংগ্রহের পর যাচাই-বাছাই, দাবি-আপত্তি নিষ্পত্তির পর চূড়ান্ত ভোটার তালিকা ২ মার্চ প্রকাশের বিধান রয়েছে। এক্ষেত্রে জানুয়ারিতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করতে হলে তার আগেই নতুন কমিশন নিয়োগ দিতে হবে।
জাতীয় পরিচয় পত্রের (এনআইডি) সেবা নিয়ে ইসি সচিব শফিউল আজিম বলেন, আমি যেটা বিশ্বাস করি, সমস্যাটাকে সামনে নিয়ে আসা। ভোগান্তি আছে, দুর্নীতি আছে, দুর্নীতিবাজ আছে; স্বীকার করতে হবে। আবার সব মানুষ আছে এটাও স্বীকার করতে হবে—সেবা দিচ্ছে , সেটা স্বীকার করতে হবে। আমরা প্রতিটা ওয়ার্কিং ডে’তে কাজ করছি, এটা স্বীকার করতে হবে। আমরা লাস্ট মিটিংয়ে সপ্তাহে প্রতিদিন ছবি তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা চেষ্টা করছি। সুতরাং গুণগত পার্থক্য সম্পর্কে যেন আমরা বলতে পারি, সে লক্ষ্যে কাজ করছি।
ইসি সচিব আরও বলেন, ভোটার তালিকা হালনাগাদে উপজাত হচ্ছে এনআইডি। আজকে পর্যন্ত ১২ কোটি ১৮ লাখ ৫৬০ জন ভোটার হয়েছে। ধারাবাহিকভাবে আমরা ভোটার করছি। মৃত মানুষ তালিকা থেকে বাদ যাচ্ছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সেবাগ্রহীতার দিক থেকে প্রতারণার আশ্রয় নেওয়া হচ্ছে। পাঁচ বছর, দশ বছর কি করে পার্থক্য হয়? এজন্য যখন আপনি ফরম পূরণ করবেন আপনার হাতে লেখা ফরম আপ করে দেব। এতে ইসমাইল হোসেনের জায়গায় ইসরাইল হোসেন হলে ভুলটা কার ছিল? আমরা ডাটা এন্ট্রি অপারেটরের, না কি আপনি নিজে লিখে দিয়েছেন? আমার লোক ভুল করলে তার কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। আর তিনি যদি নিজে ভুল করে থাকেন, তাহলে সে অনুযায়ী আমরা সমাধান করে দেব। কাজেই ফরম পূরণের সময় ১৯৭৮ লিখেছেন নাকি ১৯৮৭ লিখেছেন এগুলো আমরা সিস্টেম ডেভেলপ করব। তাহলে স্বচ্ছতা জবাবদিহিতা বাড়বে। দালাল শ্রেণির দৌরাত্ম্য কমবে। যাতে মানুষকে সহজে সেবা দেওয়া যায় সে ব্যবস্থা করছি।
ইসি সচিব বলেন, সেবা গ্রহীতাকেও রেসপনসিবল করার জন্য বলছি। একবার জন্ম তারিখ একটা বললেন আবার বললেন ১০ বছর কমাতে হবে। এখানে একটা দিক হলো অফিসকে বাড়তি কষ্ট দিচ্ছেন। আরেকটা হলো, কোনো খারাপ উদ্দেশ নিয়ে করছেন। তৃতীয় হলো, দুর্নীতির একটা সিস্টেম তৈরি করে দিচ্ছেন। যখন ১০ বছর কমানো জন্য বলবেন, দুর্নীতির একটা বিরাট জায়গা তৈরি হচ্ছে। এজন্য আমার সিস্টেম ডেভেলপ করছি। আমলাতন্ত্র বক্তৃতা নয়, সিস্টেমে কাজ করে। বয়স নিয়ে বিভিন্ন রকম করতে চায়, দুইটা আইডি করতে চায়। যদি আমাদের সিস্টেমে ধরা পড়ে, আমরা প্রযুক্তিগতভাবে এটাকে নিয়ে আসা, দোষ করলে শাস্তি দেওয়া, শাস্তি নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি। কোনো ধরণের অনিয়ম বা দুর্নীতি প্রশ্রয় দেব না।