সংস্কারের পর দ্রুত নির্বাচন চায় গণফোরাম
রাষ্ট্র সংস্কারের পর দ্রুত সময়ের মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন চেয়েছে গণফোরাম। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সংলাপের পর এ কথা জানিয়েছেন দলটির সমন্বয় কমিটির চেয়ারম্যান মোস্তফা মহসীন মন্টু। সংবিধান, বিচার বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা নিয়ে সংলাপে গণফোরামের ইমেরিটাস সভাপতি ড. কামাল হোসেন একথা বলেছেন উল্লেখ করে মন্টু বলেন, বাজারে পরিস্থিতি নিয়ে জোর দিয়েছি। সিন্ডিকেট অবশ্যই ভাঙতে হবে।
আজ শনিবার (১৯ অক্টোবর) বিকেল পৌনে ৪টার দিকে প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনার সামনে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন মোস্তফা মহসীন মন্টু।
মোস্তফা মহসীন মন্টু আরও বলেন, পতিত স্বৈরাচার ও তাদের বিদেশি এজেন্টরা বাংলাদেশকে ধ্বংসের প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। তার থেকে উদ্ধারের জন্য আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
গণফোরাম অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন চায় জানিয়ে মোস্তফা মহসীন মন্টু বলেন, সবাইকে একমত হয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। এ সরকার জনগণের সরকার। এ সরকারকে রক্ষার স্বার্থে অর্থাৎ আমাদের নিজেদের রক্ষার স্বার্থে আগামীতে সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হবে।
মোস্তফা মহসীন মন্টু বলেন, আমরা সরকারকে সার্বিক সহযোগিতা করব। তিনি (প্রধান উপদেষ্টা) যেকোন বিষয়ে আমাদের সহযোগিতা চাইবেন। আমরা যেটা উপলব্ধি করবো সেটাই পরামর্শ দেব। জনগণের জন্য দরজা খোলা আছে বলে প্রধান উপদেষ্টা আমাদের বলেছেন।
মোস্তফা মহসীন মন্টু বলেন, পাচার হয়ে যাওয়া লাখ কোটি টাকা ফেরত আনতে হবে। দেশের অর্থনীতি বিপর্যস্ত অবস্থায় আছে। সেটা উত্তরণের জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। কোন দলীয় চিন্তা-চেতনা নয়, জাতীয় ঐকমত্যের চিন্তায় এগুতে হবে।
নির্বাচন নিয়ে কথা হয়েছে জানিয়ে মোস্তফা মহসীন মন্টু বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন কমিশন করতে হবে। এটার জন্য সার্চ কমিটি বা কিছু করার প্রয়োজন আছে। ভালো লোক নিয়োগ দেওয়ার দরকার আছে। যাতে অতীতের মতো কোনো সমস্যা না হয়।
রোডম্যাপ নিয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে মোস্তফা মহসীন মন্টু বলেন, আমরা কোন তারিখ উল্লেখ করিনি। বলেছি সংস্কার শেষ অতিদ্রুত নির্বাচন দেওয়ার জন্য। তবে সংস্কার শেষ না হলে সব একই হবে, নির্বাচনের আগে থাকে রাম, নির্বাচনের পরে হয় রাবণ। ওই ধরনের নির্বাচন কমিশন চাই না। অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন চাই।
সংবিধান সংশোধনের জন্য প্রস্তাব দিয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নে মোস্তফা মহসীন মন্টু বলেন, দুই একদিনের মধ্যে আলোচনা করে লিখিত আকারে দেব।
আটটি দিবস বাতিল করা হয়েছে, এ নিয়ে কোন আলোচনা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে মোস্তফা মহসীন মন্টু বলেন, জাতীয় দিবস ছাড়া কোন দিবসই রাখা উচিত না।
সংলাপ ফলপ্রসূ হয়েছে উল্লেখ করে গণফোরাম সমন্বয় কমিটির সদস্য সচিব মিজানুর রহমান বলেন, বৈঠকে নির্বাচন ব্যবস্থা, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও নিয়ন্ত্রণ, আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারসহ স্বাধীন নির্বাচন কমিশন সংস্কারসহ বেশ কিছু ব্যাপারে পরমার্শ দিয়েছি। সরকার সেটা ইতিবাচক হিসেবে গ্রহণ করেছে বলে জানান মিজানুর রহমান। সরকার গঠিত কমিশনের বিষয়ে লিখিত প্রস্তাব কয়েকদিনের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে দেওয়ার কথা জানান মিজানুর রহমান।
এদিন ধারাবাহিক সংলাপের অংশ হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে কয়েকটি রাজনৈতিক দল ও জোটের সংলাপে বসছেন। এতে প্রথমে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গণফোরামের নয় সদস্যের প্রতিনিধি দল সংলাপে অংশ নেন।
প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্যরা হলেন— গণফোরামের সমন্বয় কমিটির চেয়ারম্যান মোস্তফা মহসীন মন্টু, কো-চেয়ারম্যান এসএম আলতাফ হোসেন, সুব্রত চৌধুরী, সদস্য সচিব মিজানুর রহমান, সদস্য একেএম জগলুল হায়দার আফ্রিক, মহিউদ্দিন আবদুল কাদের, মোশতাক আহমেদ ও সুরাইয়া বেগম।
এ দফায় লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, জাতীয় পার্টি-বিজেপি (পার্থ), ১২ দলীয় জোট, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল, লেবার পার্টিসহ আরও কয়েকটি দলকে সংলাপে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
গত ৫ অক্টোবর বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, গণতন্ত্র মঞ্চ, হেফাজতে ইসলাম, বাম গণতান্ত্রিক জোট, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, এবি পার্টি, গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে সংলাপ করেন প্রধান উপদেষ্টা।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে গত ৫ আগস্ট। ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার সরকার এরইমধ্যে দুই দফা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করেছে।
তবে আগের দুই দফা ও আগামীতেও ‘ফ্যাসিবাদী শাসন’ ও ‘গণহত্যা’য় অভিযুক্ত আওয়ামী লীগকে সংলাপে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি এবং হবে না বলে আগেই জানিয়েছে সরকার। আর আওয়ামী লীগের সময়ের ‘গৃহপালিত’ বিরোধী দল জাতীয় পার্টিকে প্রথম দফায় সংলাপে ডাকা হলেও এবার বাদ পড়েছে।