শাহরিয়ার কবির বললেন অসুস্থ, পিপি বললেন টালবাহানা!
রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে রফিকুল ইসলাম হত্যা মামলায় একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের দুই দিনের রিমান্ড দিয়েছেন আদালত। আজ রোববার (১৯ অক্টোবর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আলী হায়দার এই আদেশ দেন। এর আগে গৃহকর্মী হত্যা মামলায় তাকে সাত দিন রিমান্ডে পাঠানো হয়েছিল।
ঢাকার সিএমএম আদালতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা যাত্রাবাড়ী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মাহাবুল ইসলাম হাজির করে পাঁচ দিন রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক রিমান্ডের এই আদেশ দেন।
এদিন আদালতে কারাগারে চিকিৎসা নিয়ে অভিযোগ করেছেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির। তার এ বক্তব্যের বিরোধিতা করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী। আদালতের বিচারক আলী হায়দারের আদালতে শাহরিয়ার কবিরের রিমান্ড শুনানিতে এ ঘটনা ঘটে।
আদালত বিচারকের অনুমতি নিয়ে শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘আমি এর আগে রিমান্ডে গিয়েছি। হুইলচেয়ার ছাড়া হাঁটতে পারি না। আমার পায়ে সমস্যা রয়েছে। মামলার বিষয়ে আমি কিছুই বলতে চাই না। তবে সঠিকভাবে আমার চিকিৎসার প্রয়োজন। গত চার মাস ধরে আমি অসুস্থ। আমি এখনও চিকিৎসার জন্য কারা হাসপাতালে রয়েছি। কাশিমপুর কারাগারে আমার ট্রিটমেন্ট হচ্ছে না। আমি সর্দি, কাশি, জ্বরসহ নানা রোগে আক্রান্ত। আমার ভালো ট্রিটমেন্টের জন্য একটু পুলিশ সুপারকে বলে দিতেন, তাহলে ভালো হতো। যদিও আইনজীবী এই বিষয়ে বলেছেন।’এসময় এক আইনজীবী চিৎকার করে বলেন, ‘অনেক বলেছেন, আর না। থামেন এবার থামেন।’
এরপর রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, ‘যখন বাইরে কোনও মিছিলে তাকে দেখি, তখন তিনি সুস্থ থাকেন। আদালতে এলে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এগুলো সব টালবাহানা।’
এসময় শাহরিয়ার কবির রাষ্ট্রপক্ষের এই আইনজীবীকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘গত চার মাস আমাকে বাইরে কোথায় দেখেছেন। কোনও ছবি বা ভিডিও দেখাতে পারবেন?’ এই প্রশ্নে জবাব দেননি রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী। এরপর বিচারক দুই দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন এবং কারাবিধি অনুযায়ী জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা বলেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকী শুনানিতে বলেন, ‘শাহরিয়ার কবির এজাহারভুক্ত ৩৯ নম্বর আসামি। আসামিদের নির্দেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গুলি চালানো হয়৷ এতে অনেক শিক্ষার্থী আহত হন। নিহত হন যাত্রাবাড়ীতে রফিকুল ইসলাম নামে ওই ব্যক্তি। এই আসামি একজন নাস্তিক। মুসলমানদের বিরুদ্ধে উনি অনেক কথা বলেছেন। নাস্তিকরা আবার আওয়ামী লীগ সরকারকে পছন্দ করতেন। আওয়ামী লীগ সরকারও নাস্তিকদের ভরণ-পোষণ করে। তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে তারা আবার রুখে দাঁড়াতেন। এই হত্যা মামলার সঙ্গে আসামি জড়িত রয়েছেন। মামলার তদন্তের স্বার্থে প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের জন্য আসামির পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করছি।’
এরপর আসামিপক্ষের আইনজীবী শ্রী প্রাণনাথ রিমান্ড বাতিল শুনানিতে বলেন, ‘আসামির বিরুদ্ধে মামলায় সুনির্দিষ্ট কোনও অভিযোগ নেই। তিনি একজন শিক্ষক, কলামিস্ট। তিনি সারাজীবন শিক্ষকতা করেছেন। আসামির ভাগ্য খারাপ। তিনি এর আগেও জেল খেটেছেন। এখন আবার যেতে হলো। আসামির হার্টের সমস্যা, ডায়াবেটিস, পায়ে রড লাগানো, অসুস্থ ব্যক্তি। যেহেতু তিনি অসুস্থ, তাই এই মামলার জিজ্ঞাসাবাদ করার প্রয়োজন হলে তাকে জেল গেটে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে।’
গত ১৭ সেপ্টেম্বর দিনগত রাত ১২টার দিকে রাজধানীর মহাখালীর বাসা থেকে শাহরিয়ার কবিরকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে ছাত্র আন্দোলনের সময় গৃহকর্মী লিজা আক্তারকে হত্যার অভিযোগে রমনা মডেল থানার মামলায় তাকে সাতদিন রিমান্ডে পাঠানো হয়।
এজাহার থেকে জানা গেছে, গত ১৮ জুলাই যাত্রাবাড়ী থানাধীন মনোয়ারা হাসপাতালের সামনে রফিকুল ইসলাম গুলিবিদ্ধ হন। পরদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।