অপরাধ ট্রাইব্যুনালে র্যাব-ডিবির বিরুদ্ধে অভিযোগ
১৭ বছর আগে ইসলামী ছাত্রশিবিরের ৬ কর্মীকে গুমের অভিযোগে র্যাব-ডিবির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দাখিল করেছে তাদের পরিবার। আজ সোমবার (২১ অক্টোবর) সকালে প্রসিকিউশন কার্যালয়ে অভিযোগটি দাখিল করা হয়। পরে ছাত্রশিবিরের আইন সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমান ও আইনজীবী আমানুল্লাহ আদিব সাংবাদিকদের কাছে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন।
আইনজীবীরা জানান, গত ১৭ বছর ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতনের স্টিম রোলার চালিয়েছে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকার। মামলা-হামলা, হত্যাসহ অসংখ্য নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৬ জন এখনও গুম আছেন। ওই ছয়জনকে খুঁজতে ৬ আগস্ট র্যাব সদর দপ্তরে গিয়েছিল পরিবারের সদস্যরা। কর্তৃপক্ষ তাদের সহযোগিতা করবে বলে জানালেও এখনও কোনো তথ্য দিতে পারেনি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গুম হওয়া ৬ নেতাকর্মীর সন্ধান ও র্যাব-ডিবির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দাখিল করেছে তাদের পরিবার।
গুমের শিকার শিবিরকর্মী রিজওয়ান হোসেনের ভাই জানান, ২০১৬ সালের আগস্টে আমার ভাইকে সবার সামনেই বাইকে করে তুলে নিয়ে যান এসআই নূর আলম ও তার একজন লোক। আমরা তৎক্ষণাৎ থানায় গেলে ওসি অপূর্ব হাসান আমাদের বলে ওকে (রিজওয়ানকে) খুঁজতে নিষেধ করেন এবং আমাদের পরিবারসহ গুম করে ফেলারও হুমকি দেন। পরে আমাদের কোনো মামলা নেয়নি, উলটো ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়েছে। একদিন জানালেন আমার ভাই তুরস্কে গিয়েছে আইএসে যোগ দিতে। আমাদের চার ভাইয়ের মধ্যে তিন ভাই লেখাপড়া করিনি, কষ্ট করে ওকে পড়ালেখা করিয়েছি। আমার ভাইয়ের সন্ধান চাই আমরা।
গুম হওয়া আরেক শিবিরকর্মী মো. ওয়ালিউল্লাহর বোনের জামাই জানান, ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকার কল্যাণপুর থেকে বাসে করে কুষ্টিয়া যাচ্ছিলেন ওয়ালি আর মোকাদ্দাস। সাভার নবীনগর এলাকায় বাস থামিয়ে র্যাব পরিচয়ে ওয়ালিকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর থেকে থানা আর র্যাব সদর দপ্তরে আমরা অনেক যোগাযোগ করেছি। তারা আমাদের কোনো তথ্যই দিতে পারেনি।
২০১৩ সালের ২ এপ্রিল দিনগত রাত ৪টায় সাদা পোশাকধারী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শ্যামলী রিং রোডের ১৯/৬ টিক্কাপাড়া বাসা থেকে হাফেজ জাকির হোসেনকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। ১১ বছর পেরিয়ে গেলেও তার কোনো সন্ধান দেয়নি পুলিশ।
একইভাবে ২০১৬ সালের ৪ আগস্ট দুপুর ১২টায় বেনাপোল পোর্টসংলগ্ন দুর্গাপুর বাজার থেকে বেনাপোল পোর্ট থানার এসআই নূর আলমের উপস্থিতিতে দোকান মালিক, কর্মচারীসহ অসংখ্য মানুষের সামনে থেকে গ্রেপ্তার করা হয় ছাত্রশিবির নেতা রিজওয়ান হোসেনকে। ৮ বছর পেরিয়ে গেছে; কিন্তু আজও তার কোনো সন্ধান দেয়নি পুলিশ।
একই বছরের অক্টোবর মাসের ২৩ তারিখ বান্দরবান সদরের ৩ নং ওয়ার্ড থেকে ছাত্রশিবিরের সদস্য জয়নাল হোসেনকে গুম করা হয়। পরের বছরের (২০১৭) ৭ এপ্রিল ঝিনাইদহের সিদ্দিকীয়া কামিল মাদ্রাসা মেধাবী ছাত্রশিবিরের কর্মী মু. কামরুজ্জামানকে ঝিনাইদহ সদরের লেবুতলা থেকে ডিবি পরিচয়ে নিয়ে যায়। দীর্ঘ সময় ধরে সংগঠন ও তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে তাদের সন্ধানে বিভিন্ন সরকারি ও মানবাধিকার সংস্থায় অভিযোগ জানিয়েও কোনো ফল পাচ্ছে না।