সাভার থানার এসআই রাজীব পুলিশ লাইনে ক্লোজড
নিরপরাধ মানুষকে মামলায় ফাঁসানো অভিযোগে সাভার মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রাজিব শিকদারকে পুলিশ লাইনে ক্লোজড ক্লোজ করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার (অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) আহম্মদ মুঈদ।
রাজিব শিকদারের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ,আওয়ামী লীগের আমলে একের পর এক গায়েবি মামলায় গ্রেপ্তার করেছেন বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের। এবার পুরোনো স্টাইলেই ঢালাও মামলায় গণআসামি করে অর্থ বাণিজ্যে নামেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত শিক্ষার্থীরা জানান, জুলাই-আগস্ট বিপ্লব দমনে ছাত্র-জনতাকে উদ্দেশ করে সরাসরি গুলি চালিয়ে হত্যাকাণ্ডে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন এসআই রাজীব সিকদার।
গত ২০ জুলাই ছাত্র জনতার অহিংস আন্দোলন চলাকালে সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডে গুলিবিদ্ধ হন মুদি দোকানদার ইসরাফিল হোসেন। গুলিবিদ্ধ ইসরাফিলের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তাঁকে আদালতে মামলার পরামর্শ দেন এসআই রাজিব। বলেন, মামলা করলে সরকারের খাতায় একটি রেকর্ড থাকবে। আপনি দ্রুততম সময়ের মধ্যে ক্ষতিপূরণ পাবেন। পরে তিনি তাঁকে ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে নিয়ে যান। সেখানে দেড় শতাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মনগড়া মামলা সাজিয়ে তাঁকে স্বাক্ষর করতে বলেন। তাঁর মনোভাব বুঝতে পেরে কৌশলে ইসরাফিল আদালত থেকে বের হয়ে আসেন। এরপর একের পর এক টেলিফোনে মামলার বাদী হলে তাঁকে মোটা অঙ্কের অর্থের লোভ দেখান তিনি।
সম্প্রতি গুলিবিদ্ধ ব্যবসায়ী ইসরাফিল হোসেনের সঙ্গে রাজীব শিকদারের একটি কথোপকথন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে মামলা করতে অনিচ্ছুক মুদি দোকানদার ইসরাফিলকে তিনি বলেন, আমার কাছে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে গেছে। মামলা করলেই আপনি টাকা পাবেন। যাদের আসামি করা হয়েছে আমি তো তাদের কাউকে চিনি না। আর আমাকে গুলি করেছে পুলিশ। আমি কেন নিরীহ মানুষের নামে মামলা করব। ইসরাফিল হোসেনের অসহায় এমন কথার জবাবে রাজীবকে বলতে শোনা যায়, আরে কোন সমস্যা নাই। কোর্টে যাবেন। আসামি ধরে ধরে এফিডেভিট করে আপনি বলবেন ভুল করে আসামি দেওয়া হয়েছে। প্রতিটা আসামির কাছ থেকে এক লাখ টাকা করেও পাবেন।
এ বিষয়ে সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জুয়েল মিঞা বলেন, বিষয়টি আমাদের গোচরে এসেছে। একজন পুলিশ কর্মকর্তার এ ধরনের আচরণ আইনের পরিপন্থি। মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা করার বিষয়টি ফৌজদারি অপরাধ এমনটা জানিয়ে এ ধরনের মামলা না করতে গত ১৪ অক্টোবর বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সবাইকে সতর্ক করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়। তা সত্ত্বেও একজন পুলিশ কর্মকর্তা এমন আচরণ আমাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছে। বিষয়টি পুলিশ সুপার স্যারকে জানানোর পর তাঁকে পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।