ট্রাইব্যুনালে পুলিশ কর্মকর্তা ও জিয়াউলের অপরাধের বর্ণনা
জুলাই-আগস্ট গণহত্যার অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা আসামিদের বিরুদ্ধে গণহত্যা, গুম, খুনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। সাবেক আইজিপিসহ পুলিশের সাত কর্মকর্তা ও সাবেক সেনাবাহিনী কর্মকর্তা মেজর জিয়াউল আহসানের অপরাদের প্রাথমিক বর্ণনা পড়ে শোনানো হয়। পিনপতন নীরবতার মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া ট্রাইব্যুনালে ব্যতিক্রম আচরণ করেন মেজর (অব.) জিয়াউল আহসান। আর অপরাধের বর্ণনা শুনে কাঠগড়ায় ভেঙে পড়েন সাবেক ওসি মাজহারুল ইসলাম। অন্য আসামিরা কিছুটা শান্তভাবে বসা ছিলেন।
সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ও সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসানসহ আটজনের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য ১৯ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এ সময়ের মধ্যে আসামিদের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
আজ বুধবার (২০ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন। এর আগে জুলাই-আগস্টের ঘটনায় আসামিদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ট্রাইব্যুনালে আজ রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম। তবে যথাযথ আবেদন না থাকায় আসামিদের পক্ষে শুনানি করতে পারেননি কোনো আইনজীবী। বেলা সাড়ে ১১টায় শুনানি শুরু হয়। শুনানির শুরুতে আইনজীবী নাজনীন নাহার আসামি জিয়াউল আহসানের পক্ষে ওকালতনামা দাখিলের অনুমতি চান। আদালত অনুমতি প্রদান করার পর চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম শুনানি শুরু করেন।
শুনানির শুরুতে তাজুল ইসলাম বলেন, বিজ্ঞ আদালত, ইতোপূর্বে জুলাই-আগস্ট গণহত্যার মামলায় পটভূমি আমি আদালতে উপস্থাপন করেছি। তাই আজকে পুনরাবৃত্তি করতে চাই না। আজকে উপস্থিত আট আসামির মধ্যে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন পুলিশ, ডিবি, র্যাবসহ এসবির প্রধান ছিলেন। তার নেতৃত্বে সারাদেশে জুলাই-আগস্ট হত্যাযজ্ঞে মেতে ওঠে পুলিশ বাহিনী। দুই হাজার ছাত্র-জনতাকে হত্যা, ২০ হাজার ছাত্র-জনতাকে সারাজীবনের জন্য পঙ্গুত্ব অন্ধত্ব করে দেওয়া হয়। বাহিনী প্রধান হিসেবে সুপিরিয়র ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন। সাবেক স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে দেশের ৫৬ হাজার বর্গমাইলে নারী-পুরুষ শিশু হত্যায় মেতে উঠেন। সুপ্রিম কমান্ডার হিসেবে তার দায় রয়েছে। আমরা তথ্য প্রমাণাদি সংগ্রহ করেছি।
অপর আসামি মেজর (অব.) জিয়াউল আহসান। যিনি ১৯৯১ সালে সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন। র্যাবের দায়িত্ব নেওয়ার পর স্বৈরাচার শেখ হাসিনার দোসর হিসেবে কাজ শুরু করেন। বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীকে গুম হত্যার অন্যতম নায়ক ছিলেন এই মেজর জিয়াউল আহসান। তার অপরাধের মাত্রা এত বেশি বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। আয়নাঘর তৈরি করে গুম, খুন, বিরোধীমতের ফোনে আড়িপাতার কাজ করতেন তিনি।
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ‘ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সাবেক মহাপরিচালক জিয়াউল আহসান ছিল বাংলাদেশের বসনিয়া-হার্জেগোভেনিয়ার ‘কসাই’ রাদোভান কারাদজিচের মতো।
তিনি র্যাবের বিভিন্ন পদে ছিলেন, সর্বশেষ এনটিএমসির মহাপরিচালক ছিলেন। তিনি বাংলাদেশের গুম, গুমের পরে নিয়ে গিয়ে পৈশাচিক নির্যাতন, হত্যার পরে লাশ ডিসপোজাল করা, এসব কালচারের জনক। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় যারা বিরোধী দলে থেকে বিভিন্ন সময় কথা বলার চেষ্টা করেছে, তাদের তিনি একের পর এক পরিকল্পিতভাবে অপহরণ করেছেন, গুম করেছেন, বছরের পর বছর আটকে রেখেছেন। তাদের মধ্যে বহু মানুষ আজও ফিরে আসেনি।’
দেশে নিষিদ্ধ জিনিস আমদানি করে প্রত্যেক মানুষের মোবাইলফোনে আড়িপাতা হতো। জুলাইতে ইন্টারনেট বন্ধ করে জাতিকে অন্ধকারে রেখে হাজার হাজার ছাত্র জনতাকে হত্যা করা হয়। প্রথম দফায় ৫ দিন পরে আরও ১৩ দিন ইন্টারনেট বন্ধ করে রেখেছিল।
তাজুল ইসলাম আরও বলেন, জিয়াউল আহসানের নেতৃত্বে বিএনপিনেতা ইলিয়াসকে গুম করে হত্যা করা হয় বলে আমরা জানতে পেরেছি। এ ছাড়াও নাম জানা-না জানা অনেক মানুষকে অপহরণের পর নির্যাতন করা হয়েছে। তার পৈশাচিকতা ৯০-এর দশকে বসনিয়া-হার্জেগোভেনিয়ার সারফিয়ান বাহিনী যে গণহত্যা চালিয়েছিল, যে ধরনের অত্যাচার করত, তার সঙ্গে আমরা তুলনা করেছি। বলকানের কসাইয়ের মতো বাংলাদেশের কসাই হিসেবে এই জিয়াউল আহসান হত্যাকাণ্ড থেকে শুরু করে, গুম নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি গুম-খুন ইন্টারনেট ব্যবহার বন্ধ করে অন্ধকারে রেখে হত্যার আলামত নষ্ট করেছেন। তার বিরুদ্ধে যথেষ্ট প্রমাণাদি রয়েছে। আমরা তার বিরুদ্ধে আরও তথ্য সংগ্রহ করছি।
প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম আদালতে বলেন, ঢাকা জেলার সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আব্দুল্লাহ আল কাফি, মিরপুরের সাবেক ডিসি মো. জসিম উদ্দিন মোল্লা, সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) মো. শাহিদুল ইসলাম, ঢাকা উত্তরের সাবেক পরিদর্শক মো. আরাফাত হোসেন সাবেক স্বৈরাশাসক ও ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালায়। ছাত্র আসহাবুল ইয়ামিনকে গুলি করে হাসপাতালে চিকিৎসা করতে দেয়নি। রিকশাযোগে নেওয়ার পথে তাকে আবারও গুলি করা হয়। পরে ইয়ামিন হাসপাতালের গেটে শহীদ হয়ে যান। তাবে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করতে দেওয়া হয়নি। সাভার এলাকায় ৫ আগস্ট এসব পুলিশ অফিসার খুন করে লাশের স্তূপ তৈরি করে। পরে একটি পুলিশ ভ্যানে উঠিয়ে পেট্রোল দিয়ে আগুনে লাশ পুড়িয়ে মেরে নৃশংস হতাযজ্ঞ চালায়।
গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম। ছাত্রদের ওপর গুলি বর্ষণ, হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে নারকীয় তাণ্ডব চালায়। তার বিরুদ্ধেও অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। সোহাগ, ওয়াসিমসহ অসংখ্য ছাত্র-জনতাকে হত্যা ও নারকীয়ভাবে গুলি করে আহত করেছে। প্রসিকিউটর তাজুল ইসলামের মুখে তাঁর অপরাধের বর্ণনা শুনে ওসি মাজহারুল ইসলাম কাঠগড়ায় কান্নাকাটি শুরু করেন।
কাঠগড়ায় কান্নায় ভেঙে পড়েন সাবেক ওসি মাজহারুল
জুলাই-আগস্টে গণহত্যার অভিযোগের মামলার শুনানিকালে আদালতে কাঠগড়ায় কান্নায় ভেঙে পড়েন গুলশান থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম। এ সময় তিনি বলেন, ‘আমি ছাত্রদের পক্ষে ছিলাম, আমি কোনো হত্যাকাণ্ড ঘটাইনি।’
শুনানিতে চিফ প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম জুলাই-আগস্টের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার প্রত্যেক আসামির বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পড়ে শুনান। এ সময় মাজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে সাভারের আশুলিয়া থানায় করা হত্যা ও লাশ পোড়ানোর কথা উল্লেখ করেন চিফ প্রসিকিউটর। এ সময় আসামি মাজহারুল ইসলাম কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে বলেন, ‘বিজ্ঞ আদালত আমি কখনো আশুলিয়া ছিলাম না।’ এ সময় তিনি মাথায় হাত দিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এরপর তিনি বলেন, ‘আমি কোনো হত্যাকাণ্ডে ছিলাম না। আমি ছাত্রদের পক্ষে ছিলাম। আমি ছাত্রদের সহযোগিতা করেছি।’
পরে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আশুলিয়ায় হত্যা ও লাশ পোড়ানোর ঘটনায় মাজহারুল ইসলাম নয়, আরাফাত, কাফি ও শাহিদুল জড়িত ছিল। তবে মাজহারুল ইসলাম গুলশানে ছয় ছাত্র হত্যায় সরাসরি জড়িত ছিল।’ এ সময় মাজহারুল ইসলাম কান্নাকাটি করতে থাকেন।
পুলিশকে ধমক দিয়ে জিয়াউল- ‘তোমরা মার খেয়েছ, আরও খাবে‘
মামলার শুনানিকালে ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন। বিচারপতিরা এজলাস ছাড়ার পর দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা আসামিদের কাঠগড়া থেকে হাজতখানায় নেওয়ার জন্য যান। এ সময় জিয়াউল আহসান তাদের উদ্দেশে বলেন, ‘কেউ আমাকে ধরবে না, কাছে আসবে না। তোমরা মার খেয়েছ, ভবিষ্যতে আরও খাবে। আমাকে জেলখানায় কাগজ-কলম দেওয়া হয় না। আমি লিখবো। আমাকে কাগজ-কলম দিতে হবে। আমার বিরুদ্ধে যা বলেছে, তা আমাকে দাও। আমি দেখব।’
এ সময় জিয়াউল আহসানকে বেশ উত্তেজিত দেখা যায়। তবে তার আইনজীবী নাজনীন নাহার বলেন, পরে সবই দেওয়া হবে।
এরপর আদালত থেকে কারাগারে নিতে প্রিজনভ্যানে নেওয়ার জন্য কয়েকজন পুলিশ সদস্য জিয়াউল আহসানের দুই হাত ধরে রাখেন। এ সময়ও তিনি তাদেরকে হাত ছেড়ে দিতে বলেন।
এর আগে আদালতে শুনানি চলাকালে শেষের দিকে বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন জিয়াউল আহসান। ওই সময় তাকে বসাতে গেলে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যকে ধমক দিয়ে সরিয়ে দেন তিনি। একপর্যায়ে জিয়াউল আহসানের আইনজীবী নাজনীন নাহার বিচারপতিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, জিয়াউল আহসান কথা বলতে চান। এ সময় কাঠগড়া থেকে জিয়াউল আহসান বলেন, ‘আমি আয়নাঘরে কখনো চাকরি করিনি। আমি টেকনিক্যাল দায়িত্বে ছিলাম।’
এ সময় আদালত বলেন, ‘তদন্ত চলছে। আপনার আইনজীবী আছে। আইনজীবী বলার পর প্রয়োজনে আপনি যোগ করবেন।’ এরপরও তিনি বলতে থাকেন। তখন আদালত বলেন, ‘মি. জিয়াউল আহসান আপনি একজন রেসপন্সিবল পারসন। আপনি আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে জানাবেন। কোন মিসিং থাকলে সেটা বলার জন্য আমরা সুযোগ দেবো।’
বসনিয়ার কসাই কারাদজিচের মতো জিয়াউল
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শুনানিতে জিয়াউল আহসানের কর্মকাণ্ডকে রাদোভান কারাদজিচের কাজের সঙ্গে তুলনা করেছেন বলে শুনানি শেষে তাজুল ইসলাম জানান সাংবাদিকদের। তিনি বলেন, ‘জিয়াউল আহসান বিভিন্ন সময় র্যাবের বিভিন্ন পদে ছিলেন। সর্বশেষ তিনি ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) মহাপরিচালক ছিলেন। তিনি বাংলাদেশের গুম, গুমের পরে নিয়ে গিয়ে পৈশাচিক নির্যাতন, হত্যার পরে লাশ ডিসপোজাল করা, এসব কালচারের জনক ছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় যারা বিরোধী দলে থেকে বিভিন্ন সময় কথা বলার চেষ্টা করেছে তাদের তিনি একের পর এক পরিকল্পিতভাবে অপহরণ করেছেন, গুম করেছেন, বছরের পর বছর আটকে রেখেছেন। তাদের মধ্যে বহু মানুষ আজও ফিরে আসেনি।’
তাজুল ইসলাম বলেন, ‘জিয়াউল আহসানের নেতৃত্বে বিএনপিনেতা ইলিয়াসকে গুম করে হত্যা করা হয় বলে আমরা জানতে পেরেছি। এ ছাড়াও নাম জানা-না জানা অনেক মানুষকে অপহরণের পর নির্যাতন করা হয়েছে। তার পৈশাচিকতা... ৯০-এর দশকে বসনিয়া-হার্জেগোভিনায় সার্বিয়ান বাহিনী যে গণহত্যা চালিয়েছিল, যে ধরনের অত্যাচার করত, তার সঙ্গে আমরা তুলনা করেছি। বলকানের কসাইয়ের মতো বাংলাদেশের কসাই হিসেবে এই জিয়াউল আহসান হত্যাকাণ্ড থেকে শুরু করে, গুম নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।’
এদিকে জুলাই-আগস্টের গণহত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় সাবেক পুলিশ প্রধান ও এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালকসহ আট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এক মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। একইসঙ্গে তাদের ট্রাইব্যুনালের মামলায় কারাগারে রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এই মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ১৯ ডিসেম্বর দিন ধার্য করা হয়।
এরপর সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ও সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসানসহ আটজনের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগের মামলায় পরবর্তী শুনানির জন্য ১৯ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
’জুলাই-আগস্টের ঘটনার সময় সবচেয়ে বেশি হত্যাযজ্ঞ চালানো হয় যাত্রাবাড়ি এলাকায়। এ হত্যাকাণ্ডের নেতৃত্বে ছিলেন সাবেক এই ওসি আবুল হাসান সিদ্দিকী। হাজার হাজার ছাত্র-জনতাকে গুলি করে আহত করার পাশাপাশি শত শত ছাত্রজনতাকে হত্যা করা হয়। যেদিন শেখ হাসিনা পালিয়া যান সেদিনও তাকে থানার সামনে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করা হয়। অপরাধের মাত্রায় যাত্রাবাড়ি থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান জঘন্যতম কাজ করেছেন।’
এর আগে সকাল সোয়া ১০টার দিকে পৃথক দুটি প্রিজনভ্যানে করে আট আসামিকে হাজির করা হয়। চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ও জিয়াউল আহসানকে কেরানীগঞ্জ কারাগার থেকে একটি প্রিজনভ্যানে আনা হয়। অপর ছয়জনকে আরেকটি প্রিজনভ্যানে কাশিমপুর কারাগার থেকে আনা হয়েছে।
যাদের আজ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছে, তারা হলেন—সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসান, যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান, ঢাকা জেলার সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আব্দুল্লাহ আল কাফি, মিরপুরের সাবেক ডিসি মো. জসিম উদ্দিন মোল্লা, সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) মো. শাহিদুল ইসলাম, গুলশান থানার সাবেক ওসি মো. মাজহারুল হক ও গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ঢাকা উত্তরের সাবেক পরিদর্শক মো. আরাফাত হোসেন। গত ২৭ অক্টোবর এই সাবেক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল।
গত সোমবার (১৮ নভেম্বর) জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় প্রথমবারের মতো ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী, উপদেষ্টা, সচিব ও সাবেক একজন বিচারপতিসহ ১৩ জনকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।