আদালত প্রাঙ্গণে চিন্ময়ের ভক্তদের লঙ্কাকাণ্ড অত্যন্ত নিন্দনীয় : গোবিন্দ প্রামাণিক
বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ও চট্টগ্রামের পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময়কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেপ্তারের পর থেকে চট্টগ্রামের আদালতপাড়া থেকে শুরু করে রাজধানী ঢাকা হয়ে ওঠে উত্তপ্ত। এরইমধ্যে ষড়যন্ত্রের গন্ধ পৌঁছে যায় অনেকের কাছে। তারা সেই দাবি জানানোর মধ্যেই খবর আসে, চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের অনুসারীদের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (এপিপি) সাইফুল ইসলামকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আদালত প্রাঙ্গণে এমন ঘটনাকে ‘চিন্ময়ের ভক্তদের লঙ্কাকাণ্ড’ বলে অবিহিত করেছেন বাংলাদেশ হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ প্রামাণিক। তিনি বলেছেন, এমন কাজ ‘অত্যন্ত নিন্দনীয়।’ তিনি আরও বলেন, এ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা ও আইনের শাসনের জন্য অত্যন্ত জরুরি।
আজ বুধবার (২৭ নভেম্বর) এনটিভি অনলাইনকে দেওয়া এক বক্তব্যে গোবিন্দ প্রামাণিকএমন মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ইসকনের বহিস্কৃত নেতা চিন্ময় কৃষ্ণদাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেপ্তারের পর তার অনুসারীরা আদালত প্রাঙ্গণে হামলা চালিয়ে যে নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছে তা নজিরবিহীন। আদালত পাড়ায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর বিভিন্ন দাবি নিয়ে মাঠে নামে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। অনেকের দাবি, এর নেতৃত্বে ইসকনের নেতারা ছিলেন। চট্টগ্রামসহ কয়েকটি জেলায় সমাবেশও করেন তারা।
এ আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে আলোচনায় আসেন চিন্ময় কৃষ্ণদাস ব্রহ্মচারী। চিন্ময়ের এ আন্দোলনকে স্বাভাবিকভাবে দেখতে নারাজ হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ প্রামাণিক। তিনি বলেন, ইসকন থেকে বহিস্কৃত হয়ে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্রের পরিচয় দিয়ে চিন্ময় কৃষ্ণদাস ব্রহ্মচারীর নেতৃত্বে যে আন্দোলন হচ্ছে তার সঙ্গে দেশের সনাতন হিন্দু সম্প্রদায়ের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। পরিকল্পিতভাবে দেশকে অস্থিতিশীল করার হীন উদ্দেশে দেশি ও বিদেশি চক্রান্তের অংশ হিসেবে এ আন্দোলন চালানো হচ্ছে। ধর্ম, বর্ণ ও গোত্র নির্বিশেষে দেশের সব শ্রেণি-পেশার নাগরিকদের এসব দেশি ও বিদেশি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের বিরুদ্ধে সচেতন থেকে সোচ্চার ভূমিকা পালন করতে হবে।
গোবিন্দ প্রামাণিক বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে, এ দেশটিই আমাদের ঠিকানা। এ দেশ আমাদের সবার। এখানেই আমাদের সবার সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হবে।
চিন্ময় দাসের গ্রেপ্তারের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব বলেন, সরকারের কাছে পর্যাপ্ত তথ্যপ্রমাণ আছে বলেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এখন জামিন দেওয়া কিংবা না দেওয়া সম্পূর্ণই আদালতের এখতিয়ার। আদালতে চিন্ময় দাস আইনজীবী নিয়োগ করেছেন। আইনজীবীরা আইনগত বিষয় তুলে ধরে স্বাধীনভাবে শুনানি করেছেন। কিন্তু চিন্ময়ের ভক্তরা আদালতে যে লঙ্কাকাণ্ড ঘটালেন, তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। এটা আইনের শাসনের প্রতি অবজ্ঞাস্বরূপ। এ ধরণের কর্মকাণ্ডকে কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে গোবিন্দ প্রামাণিক বলেন, চিন্ময় দাসকে শিশু বলৎকারের ঘটনায় ইসকন থেকে বহিস্কার করা হয়েছে বলে জেনেছি। তাকে কেউ কেউ ইসকনের নেতা হিসেবে দেখিয়ে তার মুক্তি দাবি করছেন। মূলত তারাও (মুক্তি দাবিকারীরা) চক্রান্তের ফাঁদে পড়েছেন। এ ফাঁদ থেকে আমাদের সবাইকে সরে আসতে হবে।