স্বৈরাচার পালিয়েছে এখন দেশকে পুনর্গঠন করতে হবে : তারেক রহমান
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, স্বৈরাচার বিদায় নিয়েছে, এখন কাজ করার পালা। দেশকে পুনর্গঠন করতে হবে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে সেই প্রস্তুতি নিতে হবে। জনগণের আস্থা, আশা রক্ষা করাই এখন আমাদের বড় কাজ। আমাদের প্রতি নির্যাতনের জবাব হিংসায় নয়, ৩১ দফা বাস্তবায়নের মাধ্যমে দিতে হবে। জনগণের আস্থা ধরে রেখে তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
আজ সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) বিকেলে নীলফামারী সদর উপজেলার লক্ষ্মীচাপের দুবাছুরি দ্বিমুখি দাখিল মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে জনসভায় লন্ডন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান এসব কথা বলেন। এসময় তিনি ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর আয়োজনে ২০১৪ সালের ১৮ জানুয়ারি নীলফামারী সদর উপজেলার র্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত বিএনপির নেতা গোলাম রব্বানীর পরিবারকে নতুন বাড়ি হস্তান্তর করেন।
তারেক রহমান আরও বলেন, গত ১৬ বছরে বিএনপির বহু নেতাকর্মীর বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভেঙে দেওয়া হয়েছে। পালিয়ে যাওয়া স্বৈরাচারের হাতে নীলফামারীর বিএনপির নেতা গোলাম রব্বানীর মতো বহু সহকর্মী খুন হয়েছেন। জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে আমাদের পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী খুন হয়েছে। আমরা এই নির্যাতনের জবাব তাদের মতো করে দেব না। তারা অধম বলে আমরাও অধম হব না। আমরা সকল নির্যাতনের জবাব দেব ৩১ দফা সফল করার মাধ্যমে।
দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তারেক রহমান বলেন, আপনাদের মানুষের কাছে পৌঁছাতে হবে। জনগণের আস্থা ধরে রাখতে হবে। এই আস্থা ধরে রাখার দায়িত্ব আপনার। আমরা নিজেদের সংযত রাখব এবং আমাদের সহকর্মীদের সংযত রাখতে চেষ্টা করব। স্বৈরাচার যখন জনগণকে অধিকার বঞ্চিত করে অস্ত্রের মুখে ক্ষমতা ধরে রেখেছিল, তখন আমি বলেছিলাম টেক ব্যাক বাংলাদেশ। এর অর্থ হলো, জনগণের বাক স্বাধীনতা ও জনগণের অর্থনৈতিক অধিকার জনগণের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া। বাংলাদেশে কী হবে, তা বাংলাদেশের মানুষ ঠিক করবে। টেক ব্যাক বাংলাদেশের প্রথম লক্ষ্য অর্জনে দেশের মানুষের সহযোগিতায় দেশের গণতন্ত্রকামী দলগুলো স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়েছে। স্বৈরাচারের মাথা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। গত ১৬ বছর তারা নিজেদের আখের গোছাতে ভিনদেশে তাদের প্রভুকে খুশি করতে দেশের সবকিছু ধ্বংস করে দিয়ে গেছে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, দেশের জন্য আমরা দল থেকে কী করব, দলীয়ভাবে কী পদক্ষেপ নিতে পারি- এসব আমাদের পরিকল্পনার মধ্যে আছে। পরবর্তী নির্বাচনের আগে জনগণকে দেখাতে হবে আপনি কী কী করতে পেরেছেন। সবটা হয়তো আমরা পারব না, তবে যতটুকু করব তা জনগণের কাছে তুলে ধরবো। তখন জনগণ এর বিচার করবে।
তারেক রহমান বলেন, শক্তিশালী গণতন্ত্র গড়ে তুলতে বাংলাদেশকে এখনো অনেক দূর এগোতে হবে। ব্যক্তিগতভাবে আমি ও আমার দল বিশ্বাস করে, গণতন্ত্রের নীতিগুলো প্রচার ও সমুন্নত রাখার কোনো বিকল্প নেই। গণতন্ত্র হচ্ছে সর্বজনীন মূল্যবোধ, যা জনগণের স্বাধীন ভাব প্রকাশ ও বাধাহীন চিন্তা প্রকাশের স্বীকৃতি প্রদান করে। আমরা এ ধরনের একটি নিরাপদ, প্রগতিশীল এবং গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সংকল্পবদ্ধ, যা রাষ্ট্রীয় সীমানা অতিক্রম করে বৈশ্বিক গণতান্ত্রিক বিকাশে ভূমিকা রাখবে। গণআকাঙ্খায় প্রতিষ্ঠিত গণতান্ত্রিক বাংলাদেশকে বারবার হিংস্র আক্রমণে নিষ্ঠুর স্বৈরাচারী শাসকেরা বহুমাত্রিক গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার অপচেষ্টা চালিয়েছে। দেড় দশক ধরে খালেদা জিয়ার অবিরাম সংগ্রামের পটভূমির ওপরে গত জুলাই মাসে শিক্ষার্থী-জনতার দুনিয়া কাঁপানো গণঅভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট ইতিহাসের জঘন্যতম স্বৈরশাসকের পতন ঘটে।
তারেক রহমান বলেন, ঐক্যবদ্ধভাবে বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ। আমাদের রাষ্ট্র মেরামতের ভিত্তি হবে অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন; বিচার বিভাগ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্রের সকল মূলনীতির প্রাতিষ্ঠানিক প্রয়োগ। ইনশাআল্লাহ আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গড়ে তুলব, যেখানে নিশ্চিত হবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সমৃদ্ধি ও স্বনির্ভরতা, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও উদার রাজনৈতিক পরিবেশ এবং সামাজিক স্থিতি ও ন্যায়পরায়ণতা।
‘আমরা বিএনপি পরিবার’ এর আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সদস্য সচিব কৃষিবিদ মোখছেদুল মোমিন মৃদুল ও সদস্য মোস্তাকিম বিল্লাহ।
বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব ও ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর প্রধান উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী, সাবেক উপমন্ত্রী ও বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (রংপুর) আসাদুল হাবিব দুলু, ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর উপদেষ্টা ও দলের কেন্দ্রীয় কোষাধ্যক্ষ এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত, বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ও ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর উপদেষ্টা ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ উদ্দিন বকুল, নীলফামারী জেলা বিএনপির সভাপতি আ.খ. ম আলমগীর সরকার, সাধারণ সম্পাদক জহুরুল আলম প্রমুখ।