সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনের আশায় এখনও হাসপাতালে ইয়াসিন-সাকিবরা
আজ থেকে ঠিক পাঁচ মাস আগের এই দিনে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্বৈরাচার মুক্ত হয় বাংলাদেশ। তবে এ বিজয় সহজ ছিল না। এর জন্য রক্ত ঝড়াতে হয়েছে প্রায় হাজারো ছাত্র-জনতার। পঙ্গুত্ব বরণ করে এখনও হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরছেন অনেকেই। উন্নত চিকিৎসার প্রত্যাশা করছেন এসব আহতরা।
রোববার (৫ জানুয়ারি) শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সরেজমিনে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আহতদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয় এনটিভি অনলাইনের। তাদের একজন পিরোজপুরের ইয়াসিন। ২৪ বছরের এই যুবক কাজ করতেন মুরগি পরিবহণের গাড়িতে। কিন্তু এখন আগের মতো স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেতে হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
আহত ইয়াসিন জানান, ১৯ জুলাই থেকে তিনি আন্দোলনে যোগ দেন। ২০ জুলাই মোহাম্মদপুরে গুলিবিদ্ধ হন। একটি গুলি তার শরীরের পিছন থেকে ঢুকে সামনে দিয়ে বের হয়ে যায়। সেদিন আহত অবস্থায় সহযোদ্ধারা প্রথমে একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করালেও পরে ভর্তি হন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। দীর্ঘদিন চিকিৎসা নিয়ে ফিরেছিলেন বাড়িতে। তবে বেশিদিন আর বাসায় থাকতে পারেননি। আবার ফিরতে হয়েছে হাসপাতালে। ফলোআপ চিকিৎসার নিতে বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। সোমবার আবার এখান থেকে রিলিজ নিয়ে যাবেন সাভারের সিআরপিতে। সেখানেই বাকি চিকিৎসা হবে।
গল্পের ছলে ইয়াসিন বলেন, আমরা যে বাংলাদেশ চেয়েছি তা হয়তো এখনই পাব না। সময় লাগবে। রাষ্ট্র কাঠামোর প্রতিটি জায়গায় এখনো হাসিনা সরকারের দোসররা রয়ে গেছে। তাদের সরাতে হবে। নতুনভাবে সাজাতে হবে আমাদের এই দেশটাকে।
এসময় আক্ষেপের সুরে ইয়াসিন বলেন, আন্দোলনের সমন্বয়করা প্রথমদিকে অনেকেই খোঁজ নিতেন। এখন আর কেউ খোঁজ নেন না, কল দিলেও রিসিভ করেন না।
হাসপাতালে আহতদের কেমন চিকিৎসা হচ্ছে জানতে চাইলে ইয়াসিন বলেন, আহতদের ভালো চিকিৎসা হচ্ছে। তবে অনেকের বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করার প্রয়োজন। তাদের বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। নিহতের পরিবারদের সহযোগিতা আরও বাড়িয়ে দিতে হবে।
হাসপাতালের ৪২১ নম্বর ওয়ার্ডে ইয়াসিনের পাশের বেডে চিকিৎসা নিচ্ছেন রংপুরের সাকিব হোসেন। অনলাইনে মৌসুমী ফল ব্যবসায়ী এই যুবক বলেন, আবু সাঈদ ভাই নিহত হওয়ার পর নিজেকে আর ধরে রাখতে পারিনি। সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে ঘরে রেখে আন্দোলনে যোগ দিয়েছি। ১৭ তারিখ আমার শরীরে ছররা গুলি লাগে। সেই গুলিতে আহত হয়ে চিকিৎসা নিয়ে আবার অন্দোলনে যোগ দেই। ৩ আগস্ট ও ৫ আগস্ট সরাসরি আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলাম।
এখন কেনো হাসপাতালে আসছেন জানতে চাইলে সাকিব হোসেন বলেন, ২০১৮ সালে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আমার পা ভেঙে যায়। আগের সেই ক্ষতস্থানে ছররা গুলি লাগে। ফলে এখন চলাফেরা করতে সমস্যা হচ্ছে। এজন্য উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় এসেছি।
সমন্বয়কদের নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে সাকিব বলেন, সবাই এখন বড় নেতা হয়ে গেছেন। কেউ আমাদের খোঁজ রাখছেন না। যোগাযোগ করতে চাইলেও সমন্বয়কদের সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না। জেলা প্রশাসক ও জুলাই ফাউন্ডেশনে আবেদন করেছি। তবে এখনও কোনো অনুদান পাইনি। আমার উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করার দাবি জানাচ্ছি।
হাসপাতালের একই ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিচ্ছেন বরিশালের আল আমিন। তিনি এখনও পুরোপুরি সুস্থ নন।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিসংখ্যান ব্যুরোর দায়িত্বরত কর্মকর্তা কামরুজ্জামান এনটিভি অনলাইকে জানান, জুলাই আন্দোলনের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ইনডোরে চিকিৎসা নিয়েছেন ১১৪ জন। এরমধ্যে তিনজনের চিকিৎসা এখনও চলমান রয়েছে। একটি আলাদা ইউনিটে তাদেরকে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।