মুক্তিপণে মুক্ত ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালের চিকিৎসক
প্রাইভেট চেম্বার শেষে ঢাকায় ফেরার পথে অপহরণকারীদের হাতে জিম্মি হয়ে এক লাখ ৩০ হাজার টাকা মুক্তিপণে মুক্তি মিলেছে এক চিকিৎসকের। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক আমিনুর রহমান (৪০)।
গতকাল শনিবার (১১ জানুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে অপহরণের শিকার হন চিকিৎসক আমিনুর রহমান। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক এবং টাঙ্গাইল জেলার কালিহাতী উপজেলার কচুটি গ্রামের ইসমাইল হোসেনের ছেলে।
আজ রোববার সকাল ৯টায় এ তথ্য জানিয়েছেন চিকিৎসক আমিনুর রহমানের চাচাতো ভাই সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন মিল্টন।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে চিকিৎসকের ছোটবোনের স্বামী সৈয়দ ইসমাইল হোসেন বলেন, শ্রীপুরের মাওনা চৌরাস্তায় একটি ক্লিনিকে চিকিৎসা দিতে ঢাকা থেকে দুপুরে রওনা হয়েছিলেন আমিনুর রহমান। দিনশেষে ফেরার পথে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে তাঁকে মাওনা চৌরাস্তায় মহাসড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় একটি গাড়িতে করে অপহরণ করা হয়। তার ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বর থেকে জোর করে তাকে দিয়ে পরিবারের কাছে ফোন করিয়ে মুক্তিপণ দাবি করায় অপহরণকারীরা। কথা বলা অবস্থায় তাঁকে নির্যাতন করা হচ্ছিল।
অপহরণকারীরা পরিবারের কাছে ২ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। রাত ১১টা পর্যন্ত তিন দফায় মোট এক লাখ টাকা অপহরণকারীদের বিকাশসহ অন্যান্য মাধ্যমে পাঠানো হয়। এরপরও আমিনুর রহমানের মুঠোফোন থেকে অপহরণকারীরা বাকি টাকা পরিশোধে চাপ দেয়। এরপর রাত ৩টা নাগাদ আরও ৩০ হাজার টাকা পাঠানো হয়।
অপহৃত চিকিৎসকের চাচাতো ভাই মোয়াজ্জেম হোসেন মিল্টন আরও জানান
রাত ৩টা পর্যন্ত অপহরণকারীরা পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে কয়েক দফায় টাকা নেয়। এরপর ভোর রাত ৪টার দিকে আহত অবস্থায় তাঁকে গাজীপুরের হোতাপাড়া ও রাজেন্দ্রপুরের মাঝামাঝি একটি স্থানে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেয়। তাকে ছেড়ে দেওয়ার আগে তার কাছে থাকা ক্রেডিট কার্ড, দুটি স্মার্টফোন ও একটি ল্যাপটপ নিয়ে যায় অপহরণকারীরা।
চিকিৎসকের স্ত্রী মোসা. লুনা জানান, মারধর করে তাঁর স্বামীকে কয়েক দফা কথা বলিয়ে দেয় অপহরণকারীরা। বারবার কান্না শুনিয়ে মুক্তিপণের টাকা দিতে চাপ দেয় তারা। বিষয়টি গাজীপুরের শ্রীপুর থানা ও র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে জানালে তারা অভিযান শুরু করে।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জয়নাল আবেদীন মণ্ডল বলেন, ওই চিকিৎসক বাসায় ফিরেছেন বলে পরিবারের পক্ষ থেকে আমাকে জানানো হয়েছে। আমরা ঘটনার খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে তৎপরতা চালিয়েছিলাম।
ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কে শ্রীপুরের মাওনা ও আশপাশের এলাকায় ঢাকাসহ অন্যান্য এলাকায় যাওয়ার জন্য প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাস নিয়ে দাঁড়ানো থাকে একশ্রেণির ছিনতাইকারী ও অপহরণকারী। তাদের ফাঁদে পড়লেই গাড়িতে তুলে রাজেন্দ্রপুর ও আশপাশের বনাঞ্চলে তাদের আটকে রেখে মুক্তিপণ আদায় করে এবং তাদের সঙ্গে থাকা সবকিছু লুট করে নেয়।
বিগত এক মাসের মধ্যে এ ধরনের কয়েকটি ঘটনা ঘটলেও শ্রীপুর থানার ওসি জয়নাল আবেদীন মণ্ডল জানান তাদের তৎপরতা অব্যাহত আছে। তবে এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।