গাজা সিটিতে হতাহতের চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা

গাজা সিটির শেষ দিকের হাসপাতালগুলোর মধ্যে একটি আল-শিফা। চিকিৎসকরা হাসপাতালটিতে প্রতিদিন অগণিত আহত রোগীর চাপ সামলাতে গিয়ে চরম সংকটে পড়েছেন। নোংরা পরিবেশে অল্প কিংবা প্রায় বিনা অজ্ঞানেই অপারেশন করতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তারা।
একজন অস্ট্রেলিয়ান স্বেচ্ছাসেবী চিকিৎসক বিবিসিকে বলেন, প্রতিদিনই এখানে ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটছে। আরেকজন চিকিৎসক জানান, এক গর্ভবতী নারীর দেহ থেকে অপারেশনের মাধ্যমে তার শিশুকে জীবিত উদ্ধার করতে হয়েছে। খবর বিবিসির।
ইসরায়েলি সেনারা এখন হাসপাতাল থেকে মাত্র ৫০০ মিটার দূরে অবস্থান করছে। দক্ষিণ ও উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ট্যাংক নিয়ে শহরের কেন্দ্রে প্রবেশ করছে তারা। একইসঙ্গে অব্যাহত রয়েছে বিমান ও আর্টিলারি হামলা, ড্রোন আক্রমণ এবং বিস্ফোরকবাহী রিমোট নিয়ন্ত্রিত যান ব্যবহার। এতে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ গৃহহারা হচ্ছেন।
গাজার সবচেয়ে বড় চিকিৎসা কেন্দ্র ছিল আল-শিফা হাসপাতাল। টানা প্রায় দুই বছরের যুদ্ধে ভবনগুলো গর্ত আর গুলির চিহ্নে জর্জরিত, অনেক ওয়ার্ড পুড়ে গেছে। তবুও চিকিৎসকরা সীমাহীন চাপে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। অনেক বেডেই নেই গদি, ওষুধ সংকট প্রকট, আর রোগীর সংখ্যা অন্তহীন।
অস্ট্রেলিয়ান জরুরি বিশেষজ্ঞ ডা. নাদা আবু আলরুব বলেন, ‘আমরা মারাত্মকভাবে আহত রোগীদের প্রায় বিনা অজ্ঞানেই অস্ত্রোপচার করছি। ব্যথানাশকও নেই। অঙ্গ ঝুলছে, মস্তিষ্ক বের হয়ে গেছে, অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন—এ এক দুঃস্বপ্ন।’
অন্য একজন চিকিৎসক জানান, একজন ছয় বছরের শিশু হাত-পা ভেঙে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। কিন্তু মাত্র একজন অর্থোপেডিক সার্জন থাকায় জরুরি রোগীদের আগে সেবা দিতে হচ্ছে, ফলে ওই শিশুর অস্ত্রোপচার তিন দিন ধরে আটকে আছে।
হাসপাতালের বাইরে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। রিমাল এলাকায় হামিদ মোড় পর্যন্ত ট্যাংক ঢুকে পড়েছে, যা আল-শিফা হাসপাতাল থেকে মাত্র ৫০০ মিটার দূরে। দক্ষিণ দিক থেকেও অগ্রসর হচ্ছে সেনারা।

জাতিসংঘ জানিয়েছে, গাজা সিটি থেকে অন্তত তিন লাখ ২০ হাজার মানুষ দক্ষিণে পালিয়েছে। তবে ইসরায়েল বলছে এই সংখ্যা ছয় লাখ ৪০ হাজার। দক্ষিণের আল-মাওয়াসি এলাকাকে ‘মানবিক করিডর’ ঘোষণা করা হলেও সেখানে ভিড়, খাদ্য ও চিকিৎসা সংকট প্রকট।
এদিকে, আল-কুদস হাসপাতালের অক্সিজেন স্টেশন ইসরায়েলি গুলিতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তিন দিনের বেশি টিকবে না বলে সতর্ক করেছে ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট। আরও বেশ কয়েকটি হাসপাতাল, যেমন আল-রান্তিসি শিশু হাসপাতাল ও সেন্ট জন আই হাসপাতাল নিরাপত্তাজনিত কারণে বন্ধ হয়ে গেছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি অভিযানে এখন পর্যন্ত অন্তত ৬৫ হাজার ৩৮২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।