৩১ দফা বাস্তবায়নেই হবে জুলুম-নির্যাতনের প্রতিশোধ : তারেক রহমান
৩১ দফা পরিপূর্ণ বাস্তবায়নের মাধ্যমেই সব জুলুম-নির্যাতনের প্রতিশোধ হবে বলে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
আজ বুধবার (২৯ জানুয়ারি) যশোর, ঝিনাইদহ ও নড়াইলে বিএনপির ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি’ শীর্ষক কর্মশালায় ভারচ্যুয়ালি যুক্ত হয় তারেক রহমান এ মন্তব্য করেন।
তারেক রহমান বলেন, ৩১ দফা শুধু বিএনপির না, গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলনে থাকা সব রাজনৈতিক দলের। দেশের মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী এই ৩১ দফার মাধ্যমে দেশের শুভ পরিবর্তন ঘটাতে হবে।
যশোরের কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয় শহরের হোটেল ওরিয়ন ইন্টারন্যাশ চত্বরে। দিনব্যাপী এ কর্মশালার সমাপনী অনুষ্ঠানে বিকেল ৪টা ০৯ মিনিটে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন তারেক রহমান। দীর্ঘসময় তিনি তিন জেলার নেতাদের নানা প্রশ্নের উত্তর দেন। পরে সমাপনী বক্তব্য দেন।
যশোরে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক নার্গিস ইসলাম।
কর্মশালায় প্রশিক্ষক হিসেবে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ, দলের প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক এ বি এম মোশারফ হোসেন, সহপ্রশিক্ষণ সম্পাদক রেহানা আক্তার রানু, কেন্দ্রীয় মিডিয়া সেলের সদস্য মাহমুদা হাবীবা, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ফজলুর রহমান খোকন, ইকবাল হোসেন শ্যামল, পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির সদস্য ইসরাফিল খসরু চৌধুরী, খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বক্তব্য দেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের নেতাদের সতর্ক করে দিয়ে বলেন, সামনের পথ মোটেও মসৃণ নয়। পলাতক স্বৈরাচার চুরি, দুর্নীতি, লুটপাট করে সব সাফ করে দিয়ে গেছে। বিচার ব্যবস্থা, প্রশাসন, পুলিশসহ রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠান ভেঙেচুরে ধ্বংস করে দিয়েছে। আগামীতে যে দল দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পাবে তাদের অনেক কষ্ট করতে হবে।
তারেক রহমান আরও বলেন, দেশের মানুষ যদি আমাদের দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দেয়, এই কষ্টকে আমরা হাসিমুখে সহজ করে নিতে পারব, যদি আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারি। বড় দল হিসেবে বিএনপির প্রতিটি নেতাকর্মীকে যেমন ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে, তেমনি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে একসাথে সংগ্রাম করা, নির্যাতন, জেল, জুলুম সহ্য করা রাজনৈতিক দলগুলোকেও ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
জনগণের বিপুল একটি অংশ বিশ্বাস করে, সামনের দিনে যদি ভালো কিছু হয়, সেটা বিএনপির নেতৃত্বেই হবে উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, দেশের মানুষের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠা ও বাকস্বাধীনতার জন্য বিএনপির নেতাকর্মীরা দীর্ঘ লড়াই সংগ্রাম করেছে। তাই আজ বিএনপির নেতাকর্মীদের দায়িত্ব অনেক বেশি।
৩১ দফার মাধ্যমে দেশের শুভ পরিবর্তন ঘটাতে হবে। কোনো জাদু বা ম্যাজিকের মাধ্যমে এই পরিবর্তন হবে না মন্তব্য করে তারেক রহমান বলেন, এই পরিবর্তনের জন্য বিএনপির প্রতিটি নেতাকর্মীকে প্রস্তুত হতে হবে, মন-মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে।
দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণে বিএনপি ও দলটির শীর্ষ নেতৃত্বে অর্ধশতাব্দীর ইতিহাস পর্যালোচনা করে তারেক রহমান বলেন, জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা যুদ্ধের ডাক দিয়েছেন কেউ এ সত্য অস্বীকার করতে পারবে না। শুধু যুদ্ধের ডাক দিয়েই তিনি বসে থাকেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করেছেন, অস্ত্র হাতে নিজে যুদ্ধ করেছেন। পরে মানুষ যখন দেশ গঠনের দায়িত্ব তাঁকে দিয়েছে, তিনি শ্রমিকের পাশে গেছেন, কোদাল হাতে খাল খনন করতে কৃষকের পাশে থেকেছেন, উৎপাদন বৃদ্ধি করেছেন।
তারেক রহমান আরও বলেন, দেশের মানুষের ওপর আবার যখন স্বৈরাচার চেপে বসেছে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া রাজপথে সক্রিয় থেকে সংগ্রাম করেছেন। ১৯৯১ সালে বিএনপিকে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দিলে তারও প্রতিদান দিয়েছেন তিনি।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, অপরপক্ষে আমরা দেখেছি, একটি রাজনৈতিক দল দেশের মানুষকে যুদ্ধে মুখে ঠেলে দিয়ে বর্ডার ক্রস করে অন্য জায়গায় চলে গেছে। আবার স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় কাউকে দেখেছি বাংলাদেশের মানুষের এ যাবৎকালের সবচাইতে বড় যে অর্জন স্বাধীনতা, সরাসরি তার বিরোধিতা করতে।
তারেক রহমান আরও বলেন, দেশের প্রতিটা সংকটকালীন মুহূর্তে বিএনপি দেশের মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। দেশের মানুষও বিএনপির ওপর আস্থা রেখেছে। যখনই একটা সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে, দেশের মানুষ বিএনপিকে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছে। বিএনপির প্রতি দেশের মানুষের এই যে আস্থা, তা ধরে রাখার দায়িত্ব বিএনপির লাখ লাখ নেতাকর্মীর।