ফরিদপুরে সরিষার বাম্পার ফলনে হাসি ফুটেছে চাষিদের মুখে
ফরিদপুরের পদ্মা ও আড়িয়াল খাঁ নদীর চরাঞ্চলের চরভদ্রাসন, সদর ও সদরপুর উপজেলাজুড়ে সরিষার বাম্পার ফলন হয়েছে। যা গত কয়েকবছরের তুলনায় অনেক বেশি। ফলে হলুদের দোলে হাসি ফুটে উঠেছে চাষিদের মুখে। কৃষি বিভাগ বলছে, এবার লক্ষ্যমাত্রা থেকে বেশি পরিমাণে সরিষার আবাদ হয়েছে।
ফরিদপুরের উপজেলার চর হরিরামপুর ইউনিয়নের হরিরামপুর চরে গিয়ে দেখা যায়, নদী পাড়ের মাঠভরা সরিষা ফুলের গন্ধ বাতাসে ভাসছে। দিগন্তজোড়া হলুদের বিস্তার। চরের ফসলি মাঠের চারপাশ ভরে উঠেছে হলুদের ঘ্রাণ আর সৌরভে। গাড়ো হলুদ বর্ণের এ ফুলে মৌমাছিরা মধু আহরণ করছে।
দূর থেকে সরিষার ক্ষেতগুলো দেখে মনে হয়, কে যেন হলুদ চাদর বিছিয়ে রেখেছে। রোদে ঝলমল করছে সরিষার ক্ষেত। হলুদের সমারোহে সজ্জিত সরিষার প্রতিটি ফুলে দুলছে কৃষকের রঙিন স্বপ্ন। সরিষার ব্যাপক ফলনে গ্রামীণ চরাঞ্চলের অর্থনীতিতে সম্ভাবনার হাতছানি দিচ্ছে। হলুদ সরিষার ফুলের অবারিত সৌন্দর্য এখন মাঠে মাঠে। শীতের কুয়াশা উপেক্ষা করে চাষিরা সরিষার ক্ষেতের যত্ন নিচ্ছেন।
কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, চরাঞ্চলের মাঠ জুড়ে এবার লাগানো হয়েছে বারি সরিষা ১৪, বারি সরিষা ১৫, বারি সরিষা ১৭ ও বিনা সরিষা ৯। এবারে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৩১৪৯ মেট্রিক টন। যেখানে জেলা জুড়ে আবাদ করা হয়েছে ১৩৬২৫ হেক্টর জমিতে।
আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সরিষা বীজ বুনে ভালো ফলনের আশা করছেন এবার চাষিরা। মাঠের পর মাঠ প্রকৃতিতে যেন অন্য এক মাত্রা এনে দিয়েছে। হলুদ সরিষা ফুলের মৃদু সৌরভ ছড়িয়ে পড়েছে গ্রামের এখানে সেখানে। যেকোনো মাঠে প্রবেশ করলেই চোখে পড়বে সোনাঝরা এ ফুলের সীমাহীন ফসলি জমির বাগান। সরিষার ফুল ও বাম্পার ফলন দেখার জন্য জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থীরা চরাঞ্চলে ঘুরতে যাচ্ছেন অনেকে।
চরের কৃষক রব শেখ জানান, চরের মাটি ঊর্বরতা ভালো হওয়ার কারণে সরিষার আবাদ ভালো হয়েছে। আগেরবারের তুলনায় এবার ফলন ভালো হয়েছে, দামও বাজারে বেশি আছে বলে জানতে পেরেছি। আমি প্রায় ১০ বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করেছি চরে। খুব ভালো পুষ্ট বীজ দেখতে পাচ্ছি এখন গাছে। আশা করছি খুব ভালো ফলন পাব এবার।
আতর আলী নামে এক কৃষক জানান, প্রতিবছর আমি সরিষার আবাদ করি। তবে এবার চাষে অনেক বেশি ফলন আসবে বলে মনে হচ্ছে। গত কয়েকবারের থেকে এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ভালো ফলন হয়েছে। তবে সরকার যদি আমাদের সার, বীজসহ ওষুধের দাম কম করে দিতে পারে তাহলে হয়ত আরও বেশি লাভবান আমরা হতে পারব।
চরে ঘুরতে যাওয়া লাভলী বেগম নামে এক নারী বলেন, এবার চরে ভালো সরিষা আবাদ হয়েছে। গত কয়েকবারের তুলনায় এবার ফলনও অনেক ভালো। আমরা সরিষা আবাদ দেখে অভিভূত হয়ে পড়েছি।
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. শাহাদুজ্জামান বলেন, চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা থেকে বেশি পরিমাণে সরিষার আবাদ হয়েছে জেলায়। গত বছর সরিষার ভালো দাম পাওয়ায় চলতি মৌসুমে চাষিরা সরিষা চাষে ঝুঁকছেন কৃষক। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে চাষিদের উন্নত জাতের বীজ, সারের সরবরাহ নিশ্চিত করতে কৃষি বিভাগ পাশে রয়েছে। সরকার সহজ শর্তে কৃষি ঋণ ও কৃষি উপকরণ কৃষকদের হাতে তুলে দেয়, তাহলে কৃষিতে চরাঞ্চল বিপ্লব ঘটাতে পারে।