বৃষ্টি নেই, দুশ্চিন্তায় নওগাঁর আমচাষিরা

দেশের অন্যতম আম উৎপাদকারী জেলা নওগাঁয় গত কয়েক বছরের মধ্যে এবার আমের মুকুল সবচেয়ে বেশি এসেছে। গুটি গুটি আমের মৌ মৌ ঘ্রাণ এখন নওগাঁর বাতাসে। মার্চ মাসের বেশিরভাগ সময় আবহাওয়া আমের অনুকূলে ছিল। কিন্তু এপ্রিলের এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও বৃষ্টি না হওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন আম চাষিরা। তবে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস বলছে, চলতি মাসেও বৃষ্টি না হলে আমের উৎপাদনের ক্ষেত্রে কোনো ব্যাঘাত ঘটবে না।
কৃষিবিদরা বলছেন, এখন পর্যন্ত আবহাওয়া আম চাষের অনুকূলে রয়েছে। কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এ বছর আমের বাম্পার ফলন হবে। এবার গত বছরের চেয়ে ২০০ হেক্টর জমিতে আমের বাগান বেড়েছে। আশা করা হচ্ছে, গত বছরের চেয়ে এবার ২৫ হাজার মেট্রিক টন ফলন বাড়তে পারে।
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, এবার জেলায় ৩০ হাজার ৫০০ হেক্টর জমির বাগানে আম চাষ করা হয়েছে। গত বছর এই পরিমাণ ছিল ৩০ হাজার ৩০০ হেক্টর। গত বছর আমের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল চার লাখ ৩১ হাজার মেট্রিক টন। উৎপাদন হয়েছিল চার লাখ ২৫ হাজার মেট্রিক টন। এবার চার লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে।
নওগাঁর সাপাহার ও পোরশা উপজেলায় সবচেয়ে বেশি আম চাষ হয়। এ ছাড়াও নিয়ামতপুর, পত্নীতলা, ধামইরহাট, বদলগাছি উপজেলা আম উৎপাদনের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, নওগাঁয় নাগ ফজলি, ল্যাংড়া, আম রুপালি, গোপালভোগ, আশ্বিনা, কাটিমন, বারি আম-৪, বারি আম-১১, গুটি আম ও ফজলি জাতের সুস্বাদু আমের উৎপাদন বেশি।
সাপাহার উপজেলার গোডাউনপাড়া এলাকাসহ ২০০ বিঘা জমির ওপর তিনটি আমবাগান রয়েছে তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা সোহেল রানার। তিনি স্থানীয় বাজারে আম বিক্রি ছাড়াও বিদেশেও আম রপ্তানি করে থাকেন।
সোহেল রানা জানান, গত বছর তার বাগানে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ গাছে মুকুল এসেছিল। এবার এখন পর্যন্ত তাঁর বাগানে ৮০ শতাংশ গাছে মুকুল এসেছে। তাপমাত্রা বেশি থাকায় আমের ছোট গুটিগুলো ঝুঁকির মধ্যে আছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নওগাঁর উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘গত বছর মার্চ মাসে বৃষ্টি ছিল না। এপ্রিল মাসে মাত্র ১১ দশমিক ৭২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল। মার্চ মাসে যে আবহাওয়া ছিল তাতে আমের গুটির সেট হয়ে গেছে। চলতি বছর যে পরিমাণ আমের গুটি ধরেছে তা থেকে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ গুটি এমনিতেই ঝরে পড়বে। এতে আমের উৎপাদন ঘাটতি হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। বৃষ্টি দেরিতে হলেও আমের ফলন যেটা ধার্য করা হয়েছে সেটাই উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বৃষ্টি না হওয়ায় মাটির আর্দ্রতা কমে গেলে আমরা আমচাষিদের সেচ প্রদান, গাছে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি স্প্রে করা, মালচিং পদ্ধতি ব্যবহার করার পরামর্শ দিচ্ছি।’