শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
বাংলাদেশে অভূতপূর্ব ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলন অল্প সময়ের মধ্যেই ব্যাপক আকার ধারণ করে এবং সরকারের বিরুদ্ধে গণবিক্ষোভে রূপ নেয়। আন্দোলন দমনে নিরাপত্তা বাহিনী কঠোর অবস্থান নিলেও শেষ পর্যন্ত সরকার পতনের মাধ্যমে পরিস্থিতি নতুন মোড় নেয়। এই রাজনৈতিক পরিবর্তনের ফলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গভীরভাবে বাংলাদেশ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া
৫ আগস্টের পর যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা করে এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের আহ্বান জানায়। হোয়াইট হাউসের একজন মুখপাত্র সে সময় বলেন, “সামরিক বাহিনী যে ধৈর্য প্রদর্শন করেছে এবং সংকট মোকাবিলায় সংযম দেখিয়েছে, তা প্রশংসনীয়। আমরা আশা করি, বাংলাদেশ একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক পথ অনুসরণ করবে এবং দ্রুত অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে।”
ওয়াশিংটন বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ও কূটনৈতিক সহায়তা দিতে প্রস্তুত রয়েছে বলেও সে সময় জানানো হয়। পাশাপাশি, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নের ওপর জোর দেয় এবং অবাধ নির্বাচনের জন্য একটি নিরপেক্ষ প্রশাসন গঠনের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে।
যুক্তরাজ্যের উদ্বেগ
বাংলাদেশে সহিংসতা ও প্রাণহানির ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে যুক্তরাজ্য। দেশটির ফরেন কমনওয়েলথ ও ডেভেলপমেন্ট অফিস (এফসিডিও) এক বিবৃতিতে জানায়, “সহিংসতার অবসান ঘটাতে এবং শান্তি পুনরুদ্ধার করতে সব পক্ষকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। আমরা বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক রূপান্তর এবং মানবাধিকার রক্ষার প্রতি জোরালো সমর্থন জানাই।”
ব্রিটিশ সরকার বাংলাদেশের নতুন রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর গভীর নজর রাখছে বলে জানায় এবং সংলাপ ও কূটনৈতিক সমাধানের মাধ্যমে সংকট নিরসনের আহ্বান জানায়।
চীনের অবস্থান
বাংলাদেশের চলমান ঘটনাপ্রবাহকে ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছে চীন। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, “বাংলাদেশের বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী এবং কৌশলগত উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে চীন আন্তরিকভাবে আশা করে যে বাংলাদেশ দ্রুত সামাজিক স্থিতিশীলতা ফিরে পাবে এবং রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির ধারায় ফিরবে।”
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রতিক্রিয়া
সংকটের মধ্যে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে তাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে। এক বিবৃতিতে সংস্থাটি জানায়, “বাংলাদেশের জনগণের প্রতি আমাদের পূর্ণ সমর্থন থাকবে এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় আমরা সহায়তা অব্যাহত রাখব।”
পাকিস্তানের সংহতি প্রকাশ
বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে পাকিস্তানও। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, “পাকিস্তানের জনগণ ও সরকার বাংলাদেশে দ্রুত শান্তিপূর্ণ ও স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসার প্রত্যাশা করছে।”
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ
বাংলাদেশের এই রাজনৈতিক পরিবর্তন ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। দেশের জনগণ, রাজনীতিবিদ, সেনাবাহিনী এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকার ওপর নির্ভর করবে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন ও কূটনৈতিক প্রচেষ্টা বাংলাদেশকে স্থিতিশীলতার পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।