পৌনে ৬ কোটির রাবার ড্যাম এখন কৃষকের গলার কাঁটা!
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2025/02/15/pirojpur.jpg)
পিরোজপুরের নাজিরপুরে আজ থেকে বছর তিনেক আগে নির্মাণ করা হয় রাবার ড্যাম। এটি থেকে পানি যাওয়ার কথা কৃষকের ক্ষেতে। তাতে ২০০ হেক্টর মাঠজুড়ে ফলবে ফসল। কৃষকের আলোকিত স্বপ্নের হবে বাস্তবায়ন। অথচ, সেই ড্যামই এখন ‘মরার উপর খাঁড়ার ঘা’। পাঁচ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ব্যয়ে টাকার ১২০ ফুট দীর্ঘ রাবার ড্যামটি ধরে রাখতে পারে না পানি। তাতেই ভেসে যায় কৃষকের স্বপ্ন। ভেঙে যাচ্ছে গ্রামের আশপাশের বসতি ও রাস্তা ঘাট। এমন পরিস্থিতির জন্য কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) অসাধু কর্মকর্তা ও প্রভাবশালী ঠিকাদারকে দুষছেন স্থানীয়রা।
জানা গেছে, ২০২২ সালে কর্নখালি খালের ওপরে ক্ষুদ্র সেচ প্রকল্পের (বিএডিসি) আওতায় তৈরি হয় রাবার ড্যাম। সরেজমিন দেখা গেছে, ফসলের মাঠে এখন বোরো ধান চাষের সময়। শুধু ধান নয়, মৌসুমী শাকসবজি আবাদে ব্যস্ত রয়েছে দেউলবাড়ী ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রামের কৃষক। কিন্তু কৃষকের কাঙ্খিত ফলনের স্বপ্নে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে পানি। নষ্ট হওয়ার শঙ্কায় ফসল।
তিন বছর আগে দুটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে রাবার ড্যাম নির্মাণের কাজ করেন মঠবাড়িয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বাইজিদ আহমেদ খান। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে নিম্নমানের কাজ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
স্থানীয় কৃষক মো. গাফফার, মো. জুয়েল, মো. জাহাঙ্গির হোসেনের অভিযোগ, রাবার ড্যামটির নিচ থেকে পানি এসে মাঠ তলিয়ে যায়। পানি ধরে রাখতে পারছে না ড্যামে। তাই পানির চাপে মাঠে কাজ করা যায় না। এক ঘণ্টা কাজ করে চলে যেতে হয়। পানি আটকানোর জন্য, ফসল রক্ষায় অস্থায়ী বাধ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, স্রোতে তা ভেঙে গেছে।
কর্নখালী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা নাসিমা বেগম জানান, রাবার ড্যাম নষ্ট হওয়ায় সারাদিন ট্রলার আসা-যাওয়া করে। চলাচলের রাস্তা ভেঙে খালে বিলীন হয়ে গেছে। আমাদের পারিবারিক কবরস্থানও ভেঙে খালে পড়েছে।
খালে বিলীন হওয়া বসত বাড়ির মালিক শেলিনা বেগম বলেন, রাবার ড্যাম বানানের সময় আমার খালের পাড়ে বড় একটি ঘর ছিল, ওই ঘরটি তারা কাজের সময় ভেঙে ফেলে। আর আমাকে বলে, একটা নতুন ঘর করে দেবে। কিন্তু কাজ শেষে তারা আমাকে ঘর করে দেয়নি। এখন আমি অন্যের ঘরে বাস করি।
এ বিষয়ে ঠিকাদার বায়জিদ খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, রাবার ড্যাম প্রকল্পটি আমার পরিচিত ইসলাম ব্রাদার্সের। জমি অধিগ্রহণ না করেই ডিপার্টমেন্ট টেন্ডার করেছে। এ নিয়ে স্থানীয় জনগণের সঙ্গে ঝামেলা হয়েছে। আমার বাড়ি পিরোজপুর হওয়ায় আমাকে দেখতে বলেছে ওই ইসলাম ব্রাদার্স। কাজ শুরুর সময় জমির মালিকদের ঠিকাদার টাকা-পয়সা দিয়ে ম্যানেজ করেছে। তারপরেও মামলা করেছে স্থানীয় জমির মালিক বাসুদেব হালদার। তৎকালীন প্রায়ত উপজেলা চেয়ারম্যান অমূল্য রঞ্জন হালদারের মিমাংসায় আবার পাঁচ লাখ টাকা দিয়েছে জমির মালিককে। এখনও প্রকল্পে ৪০ লাখ টাকা বাকি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের। আর রাবারটি মূলত ঠিকাদার দেয়নি। ওটা বিএডিসি দিয়েছে, ঠিকাদার ইনপুট করেনি। ঠিকাদার নির্মাণের কাজ করেছে, এতে তাদের ত্রুটি নেই।
বিএডিসি নির্বাহী প্রকৌশলী মুরাদ হোসেন বলেন, রাবার ড্যামটি ত্রুটিপূর্ণ, এটি সংস্কারে অর্ধ কোটি টাকার একটি প্রস্তাব জমা দেওয়া হয়েছে। ওটা যদি আমরা বরাদ্দ পাই, তখন ওটাকে মেরামত করা হলে, কৃষকরা কিছুটা সুফল পাবে। অনিয়মের বিষয়ে কথা বললে তিনি ব্যস্ততা দেখিয়ে ফোন কেটে দেন।