গৌর দাসের কষ্ট ঘোচাতে পাশে দাঁড়ালেন ইউএনও
 
‘আসমানীরে দেখতে যদি তোমরা সবে চাও,
রহিমদ্দির ছোট্ট বাড়ি রসুলপুরে যাও।
বাড়ি তো নয় পাখির বাসা ভেন্না পাতার ছানি,
একটুখানি বৃষ্টি হলেই গড়িয়ে পড়ে পানি।
একটুখানি হাওয়া দিলেই ঘর নড়বড় করে,
তারি তলে আসমানীরা থাকে বছর ভরে।
পেটটি ভরে পায় না খেতে, বুকের ক-খান হাড়,
সাক্ষী দিছে অনাহারে কদিন গেছে তার।’
পল্লীকবি জসীমউদ্দিনের ‘আসমানী’ কবিতার আসমানীর মতোই যেন জুঁই ও শংকরী মন্ডলদের অবস্থা। জং পড়া টিন, ঘুনে ধরা কাঠখুঁটি ও ভাঙাচোরা হোগলার বেড়ার জড়াজীর্ণ ঘরে স্ত্রী ও বিবাহযোগ্য দুই মেয়েকে নিয়ে বসবাস করছেন বৃদ্ধ গৌর দাস। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে অতিকষ্টে এই ঘরে তাদের দিন কাটছে। যে কোনো সময় ঘরটি ভেঙেচুড়ে যেতে পারে। তারপরও বাধ্য হয়ে আতঙ্ক নিয়ে এই ঘরে খেয়ে না খেয়ে তাদের বসবাস করতে হচ্ছে।
৭০ বছরের অসহায় গৌর দাস গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া উপজেলার ডুমুরিয়া ইউনিয়নের লেবুতলা গ্রামের বাসিন্দা। দীর্ঘ ১০ বছর ধরে প্যারালাইজড হয়ে বিছানায় পড়ে আছেন। তার বিবাহযোগ্য মেয়ে জুঁই মন্ডল (৩৫) ও শংকরী মন্ডল (৩০) অন্যের জমিতে কাজ করে ও কয়েকটি হাঁস পালন করেই চালাচ্ছেন সংসার। যা উপার্জন হয় তাই দিয়ে বাবার ওষুধের টাকাও জোগার হয় না। তাই অর্ধাহারে–অনাহারে তাদের দিন কাটছে।
স্থানীয় সাংবাদিকদের মাধ্যমে এই দুঃখ-দুর্দশার কথা জেনে অসহায় এই পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন টুঙ্গিপাড়া উপজেলার ইউএনও মো. মঈনুল হক।
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) হাঁস কিনতে নগদ ২০ হাজার টাকা, ৩০ কেজি চাল, একটি সেলাই মেশিন ও পাঁচটি কম্বল নিয়ে গৌর দাসের বাড়িতে ছুটে যান ইউএনও মো. মঈনুল হক। এসময় পরিবারটির দুরাবস্থা দেখে তিনি দ্রুত একটি ঘর তৈরি করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেন।
গৌর দাসের প্রতিবেশী বিথী ঘরামী বলেন, স্ত্রী ও ৭ মেয়েকে নিয়ে ছিল গৌর দাসের সংসার। হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে তিনি তার ৫ মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। বিয়ের বয়স পেরিয়ে গেলেও অর্থের অভাবে এখনো ২ মেয়েকে বিয়ে দিতে পারেননি। প্রায় ১০ বছর আগে তিনি স্ট্রোক করার কারণে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হন। গৌর দাস পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন। অসুস্থতার পর বন্ধ হয়ে যায় সমস্ত আয়ের পথ। নিজের জায়গায় একটি ঘর থাকলেও সেটি বসবাসের অযোগ্য। বৃষ্টির সময় পাশের বাড়িতে আশ্রয় নিতে হয়। তার দুই মেয়ে অন্যের জমিতে দিনমজুরি ও কয়েকটি হাঁস পালন করে কোনমতে খেয়ে না খেয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
প্রতিবেশি শ্যামল ঘরামী বলেন, দুই বোন জুঁই ও শংকরীর জীবনে পূজা-পার্বণসহ কোনো আনন্দের দিন নেই। তারা কখনোই একটা নতুন জামা কিনতে পারে না। বাবার ওষুধ কিনতেই সব টাকা চলে যায়। তাদের দুঃখের কথা শুনে ইউএনও স্যার নিজে বাড়ি এসে সাহায্য করেছেন।
আরেক প্রতিবেশী লক্ষ্মী মন্ডল বলেন, তারা নিজেরা ঠিকমতো খেতেই পারে না। বিবাহযোগ্য হওয়ার পরও তারা বিয়ের চিন্তা বাদ দিয়ে বাবার সেবা করে চলেছেন। ওরা কতদিন যে মাছ মাংস খায় না তার কোন ঠিক নেই। প্রতিদিন সকালে দেখি ভাতে পানি ও কাঁচামরিচ দিয়ে ভাত খায়। আর কোনো কোনোদিন দুপুরে ও রাতে হয় ভাতের সঙ্গে কাঁচামরিচ অথবা শাকসবজি দিয়ে খেতে পারে।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মঈনুল হক বলেন, স্থানীয় সাংবাদিকদের মাধ্যমে আমি গৌর দাসের দুঃখ দুর্দশার কথা জানতে পারি। পরবর্তীতে তার বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে এর সত্যতা পাই। অসহায় এই পরিবারটিকে সহায়তার জন্য নগদ ২০ হাজার টাকা, একটি সেলাই মেশিন, ৩০ কেজি চাল ও কয়েকটি কম্বল দিয়েছি। এছাড়া খুব শিগগিরই উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের একটি ঘর তৈরি করে দেওয়া হবে। আমরা সবসময় উপজেলার হতদরিদ্র মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাব।

 
                   মিজানুর রহমান, গোপালগঞ্জ (সদর-কোটালীপাড়া-টুঙ্গিপাড়া)
                                                  মিজানুর রহমান, গোপালগঞ্জ (সদর-কোটালীপাড়া-টুঙ্গিপাড়া)
               
 
 
 
