পিরোজপুরের নাজিরপুরে চাঁদা চাওয়া ও সরকারি খাস জমি ডিসিআর নেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফিল্মি স্টাইলে অস্ত্রের মহড়া ও বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে ১১ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। গুরুতর আহত একজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ সময় দুটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়।

সোমবার (১৪ এপ্রিল) রাতে উপজেলার শেখমাটিয়া ইউনিয়নের বাবুরহাট বাজারে এ ঘটনা ঘটে। ওই বাজারে থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, ফিল্ম স্টাইলে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিতে থাকে একটি গ্রুপ। অস্ত্রের ওই মহড়ার নেতৃত্ব দেন ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য সচিব জহিরুল ইসলাম জহিরের ছোট ভাই ছাত্রদলনেতা সোহেল শেখ।

স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ওই ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য সচিব মো. জহিরুল ইসলাম শেখ ও ইউনিয়ন যুবদলের দপ্তর সম্পাদক মো. বদিউজ্জামান ভুইয়া  গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে যুবদল নেতা মো. বদিউজ্জামান গ্রুপের বদিউজ্জামান (৪০), ইউনিয়ন ছাত্রদলের সহ-সভাপতি মো. শরিফুল ইসলাম (২৪), ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য মো. সবুর সরদার (৪৫), মো. মাহবুব ভুইয়া (৬৫), স্বেচ্ছাসেবক দলনেতা মো. আল মামুন সরদার আজমীর (৪২), জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক মো. তায়জুল ইসলাম (৩৩), স্বেচ্ছাসেবক দলের এনাম ভুইয়া (২৫), যুবদলের রুহুল আমীন ভুইয়া (৩৫) এবং ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য সচিব জহিুরুল ইসলাম শেখ ও পলাশ শেখ (২৮)। আহতরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তবে বিএনপি নেতা জহিরুল ইসলাম ও পলাশ শেখ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি থাকলেও তাদের পাওয়া যায়নি।

এ ঘটনায় দুই গ্রুপের অভিযোগ আওয়ামী লীগের লোকজন নিয়ে এক গ্রুপ অন্য গ্রুপের ওপরে হামলা চালায়।

জানা যায়, ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য সচিব জহিরুল ইসলাম জহিরের বড় ভাই বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাহিদ শেখ শেখমাঠিয়া ইউনিয়ন পরিষদের আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান আতিয়ার রহমান (চৌধুরী) নান্নুর ঘনিষ্ঠজন ও তার ছোট ভাই রুবেল শেখ ছাত্রলীগ নেতা তারা দুজনে সংঘর্ষে জড়ায়।

তবে এসব তথ্য অস্বীকার করে ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য সচিব বলেন, যুবদল নেতা মো. বদিউজ্জামান ৫ আগস্টের পরে আওয়ামী লীগ পোষা দায়িত্ব নিয়েছেন। বদিউজ্জামান ইউনিয়ন যুবলীগের নেতা মাহফুজ ভূইয়া, উপজেলা কৃষকলীগ সদস্য মাহাবুব ভূইয়া, ৪নং ওয়ার্ড যুবলীগের সহ-সভাপতি তৌহিদুল ব্যাপারী, ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের সহ-সভাপতি এরশাদুল ব্যাপারী, ওয়ার্ড যুবলীগের সদস্য ইমাম ভূইয়া, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য মোশাররফ ভূইয়াকে নিয়ে আমাদের ওপরে হামলা চালায়।

সংঘর্ষে আহত উপজেলা যুবদলের সহ-স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক মো. বদিউজ্জামান বলেন, ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আজমীর হোসেনকে গত সোমবার (১৪ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৭টার দিকে ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য সচিব ও তার ভাই যুবলীগ কর্মী জাহিদ সহ ৪-৫ জনে চাঁদার দাবিতে বাজারের একটি দোকানের সামনে আটক করে। এর আগে গত প্রায় দুই মাস ধরে তারা আজমীরের কাছে চাঁদা দাবি করে আসছেন। এ ঘটনা শুনে সেখানে গেলে বিএনপিনেতা জহিরের নেতৃত্বে তার ভাই ও তার গ্রুপের লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আমার ওপর হামলাসহ দুটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। পরে এ খবর শুনে আমার আত্মীয় স্বজনরা সেখানে গেলে জহিরের লোকজন তাদের ওপর হামলা করে।

উল্লেখ্য, গত ২২ আগস্ট শেখমাটিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য সচিব জহিরুল ইসলাম শেখকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে তার দলীয় পদ স্থগিত করা হয়েছিল এবং পরবর্তীতে ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ পুনরায় তাকে স্বপদে বহাল করা হয়।

ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য সচিব জহিরুল ইসলাম শেখ বলেন, যুবদলনেতা বদিউজ্জামানের চাচা মাহাবুব ভুইয়া তাকে গালাগালি করেন। এ নিয়ে সংঘর্ষে কে কাকে মেরেছে তা জানি না। তবে আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ ভিত্তিহীন।

ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক সফিকুল ইসলাম সফিক বলেন, আমি ঘটনাটি রাতে শুনেছি এবং এও শুনেছি ঘটনার সাথে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জড়িত রয়েছে। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করতে উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের অবহিত করবো। আমি আশা করি দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব আবু হাসান খান জানান, ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক, নিন্দনীয়। আমার জানা মতে পারিবারিক সমস্যা নিয়ে ঘটনাটি ঘটেছে। আমার দলে দুর্নীতি ও চাঁদাবাজ, অশান্তি সৃষ্টিকারী, মাদক ও দখলদারের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স। আমার দলীয় কোনো নেতাকর্মী এ ঘটনায় জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাক্তার অশেষ প্রতীম রায় বলেন, গুরুতর আহতদের উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনায় পাঠানো হয়েছে। চার জন হাসপাতালে ভর্তি আছে। বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছে।

নাজিরপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শেখ হিলাল উদ্দিন বলেন, ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়েছিল। স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। এ ঘটনায় একটি মামলা দায়ের প্রস্তুতি চলছে।