পটুয়াখালীতে মাকে হত্যার দায়ে ছেলে গ্রেপ্তার, আদালতে স্বীকারোক্তি

পটুয়াখালী সদর উপজেলার বড়বিঘাই ইউনিয়নে মাকে নৃশংসভাবে হত্যার দায়ে মো. খোকন হাওলাদার ওরফে ইউসুফ (৩৭) নামের এক যুবককে (৩৭) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আদালতে তিনি হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ মার্চ সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৯টার মধ্যে দক্ষিণ বিঘাই গ্রামের নিজ বাড়িতে রিজিয়া বেগম (৫৫) হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। ঘটনার সময় তিনি স্বামীর ঘরে ইফতার শেষে তারাবির নামাজের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এ সময় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি বা ব্যক্তিরা তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে পালিয়ে যায়।
পরদিন নিহতের ভাই মো. শহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে পটুয়াখালী সদর থানায় একটি হত্যা মামলা (নং-১৫/১২৬, তারিখ: ১১-০৩-২০২৫) দায়ের করেন। এরপরই জেলা পুলিশের একাধিক টিম তদন্তে নামে এবং তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য উদঘাটন করে।
তদন্তে নিশ্চিত হওয়া যায়, নিহতের বড় ছেলে মো. খোকন হাওলাদার ওরফে ইউসুফ হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত। পরে গত ২৬ এপ্রিল রাত ১১টা ১০ মিনিটে গাজীপুরের টঙ্গী পূর্ব থানাধীন টিআইসি গেট এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি ভারী কাঠের তক্তা ও একটি লোহার দা উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তারের পর পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে খোকন হাওলাদার জানান, মায়ের বিরুদ্ধে অসামাজিক কার্যকলাপ, আপন বোনকে বিষ প্রয়োগে হত্যার অভিযোগ এবং বাবার ওপর শারীরিক-মানসিক নির্যাতনের কারণে তার মনে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষোভ জমে ছিল। সেই ক্ষোভ থেকেই পরিকল্পিতভাবে হত্যাকাণ্ড ঘটান খোকন হাওলাদার।
পুলিশ আরও জানায়, ঘটনার একদিন আগে গাজীপুর থেকে পটুয়াখালী আসেন। ইফতারের পর নিশ্চিত হয় যে তার বাবা বাড়িতে নেই, তিনি ঘরে ঢুকে প্রথমে কাঠের তক্তা দিয়ে মায়ের মাথায় আঘাত করেন। প্রতিরোধের চেষ্টা করলে মায়ের হাত ভেঙে যায়। পরে উপর্যুপরি আঘাতে হত্যা নিশ্চিত করেন এবং দা দিয়ে শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে একাধিক কোপ দেন। পরে তাকে আদালতে হাজির করা হলে তিনি ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
এ বিষয়ে পটুয়াখালীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মোহাম্মদ সাজেদুল ইসলাম সজল এনটিভি অনলাইন বলেন, ‘ঘটনার পরপরই তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে তদন্ত পরিচালনা করা হয়। অবশেষে মূল অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। এ ঘটনায় আরও কেউ জড়িত থাকলে তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে।’