‘প্রবাসী ভোট’ নিয়ে মতামত জানিয়েছে ১৭ দল, সময় চেয়েছে বিএনপি

অন্তর্বর্তী সরকারের পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনও (ইসি) চায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রবাসীদের ভোটের আওতায় আনতে। সে লক্ষ্যে ইসি প্রযুক্তিবিদসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। সেমিনার করেছে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও। সেমিনারে এ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত জানতে চেয়েছিল সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানটি।
শুধু তা-ই নয়, গত ২৯ এপ্রিল অনুষ্ঠিত ওই সেমিনারে আগামী ১৫ মের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোকে মতামত জানাতে অনুরোধ জানিয়েছিল ইসি। যদিও গতকাল বৃহস্পতিবার (২২ মে) পর্যন্ত মোট ১৭টি রাজনৈতিক দল ইসিকে মতামত জানিয়েছে। বিএনপি এ বিষয়ে মতামত দেওয়ার জন্য সময় চেয়েছে বলে জানিয়েছে ইসি।
ইসি সচিব আখতার আহমেদ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমরা ১৫ দিনের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে প্রবাসী ভোট নিয়ে মতামত চেয়েছিলাম। সেখানে অনেক দল মতামত দিয়েছে। তবে, বিএনপি এ মতামত দেওয়ার জন্য সময় চেয়েছে। অন্যান্য দলগুলো মতামত দিয়েছে। আমরা এ মতামত পর্যালোচনা করব। তারপর সেটা নিয়ে আরও আলোচনা হবে।’
আখতার আহমেদ জানান, প্রক্সি, অনলাইন ও পোস্টাল ভোট, এ তিন পদ্ধতি নিয়ে সেমিনারে আলোচনা হয়েছিল। রাজনৈতিক দলগুলো যখন মতামত দিল, তখন দেখা গেল তিনটি পদ্ধতির পক্ষে-বিপক্ষে মতামত এসেছে। কোনো কোনো দল দুটি পদ্ধতির কথা বলেছে। কোনো দল তিনটি পদ্ধতি ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে। আবার কোনো দল একেক দেশে একেক পদ্ধতি ব্যবহার করার কথা জানিয়েছে। সামনে বিএনপি তাদের মতামত জানাবে। সব মিলিয়ে ইসি সবার মতামত যাচাই করবে। তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে জানা গেছে, ২৯ এপিলের ওই সেমিনারে মোট ২৮টি রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করেছিল। তাদের মতামত দিতে বলা হয়েছিল। গত ১৫ মের মধ্যে এ মতামত জানাতে বলা হয়েছিল। কিন্তু, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মাত্র ১৩টি রাজনৈতিক দল তাদের মতামত দিয়েছিল। তখনও বিএনপি-জামায়াত ও এনসিপি মতামত দেয়নি। নির্ধারিত সময়ের পর জামায়াত ও এনসিপি তাদের মতামত জানিয়েছে। তবে, এখন পর্যন্ত বিএনপি তাদের মতামত জানায়নি। বরং, দলটি সময় চেয়েছে যথাযথ মতামত প্রদানরে জন্য।
তবে কোন কোন দল প্রবাসী ভোট নিয়ে মতামত জানিয়েছে, তার তালিকা ইসি সচিব ও অতিরিক্ত সচিব দেননি। শুধু তাই নয়, যে শাখা থেকে বিষয়টি দেখভাল করা হচ্ছে, সেখান থেকেও তালিকা প্রকাশ করা হয়নি।
ইসির অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী নেওয়াজ বলেন, ‘আমরা যে ১৭টি দলের মতামত পেয়েছি, সেগুলো পর্যালোচনা করব। বিএনপি মতামত জানাবে। এ ছাড়া আরও কোনো দল যদি মতামত জানায়, সেগুলোও কারিগরি টিমসহ সংশ্লিষ্টরা দেখবেন। পর্যালোচনা করবেন। প্রবাসীদের ভোটের ব্যবস্থা করতে গেলে নির্বাচন কমিশনের কী কী কাজ করতে হবে, বা কোন প্রক্রিয়াতে এগোলে এ কাজ সহজ হবে সেসব নিয়ে পরবর্তীতে বিস্তারিত আলাপ হবে।
গত ৯ এপ্রিল প্রবাসী ভোট সংক্রান্ত এক কর্মশালা থেকে বেরিয়ে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে কথা বলেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।
সেদিন আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, প্রধান উপদেষ্টা প্রথম তার ভাষণে প্রবাসীদের ভোটের অধিকার দেওয়ার কথা বলেছেন। এজন্য নির্বাচন কমিশনও এই প্রত্যাশা ধারণ করে। আমরা ১৭৮টি দেশে স্টাডি করে দেখেছি, ১১৫টি দেশ তাদের প্রবাসী নাগরিকদের জন্য ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা রেখেছে। সবচেয়ে অনুশ্রিত পদ্ধতি হচ্ছে দূতাবাসে, এরপর হচ্ছে পোস্টাল ব্যালট, এরপর হচ্ছে অনলাইন বা প্রক্সি ভোটিং। বাংলাদেশের প্রবাসীদের যে বিস্তৃতি তাতে দূতাবাসে সেটা সীমিত। এজন্য তিনটিকে শর্ট লিস্ট করেছি। পোস্টাল ব্যালট, অনলাইন ও প্রক্সি ভোটিং। তিনটিরই কিছু সীমাবদ্ধতা আছে, কিছু সুবিধাও আছে।
আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহর কাছে এনটিভি অনলাইন জানতে চেয়েছিলেন, তিন পদ্ধতিরই যদি সীমাবদ্ধতা থাকে, সেদিকে এগোনই ঠিক হবে কিনা। এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমরা যদি প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটের আওতায় আনতে চাই, তাহলে কোনো না কোনো পদ্ধতি আনতে হবে। সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও।’