দাঁড়িপাল্লাসহ নিবন্ধন ফিরে পাচ্ছে জামায়াত, বহাল থাকছে ইশরাকের প্রজ্ঞাপন : ইসি
দাঁড়িপাল্লাসহ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। একই সঙ্গে বিএনপিনেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে জারি করা প্রজ্ঞাপন বহাল থাকবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
আজ বুধবার (৪ জুন) ইসির ৬ষ্ঠ কমিশন সভা শেষে এসব সিদ্ধান্তর কথা জানান নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।
আদালতের সাম্প্রতিক আদেশ বা নির্দেশনার ওপর কার্যব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে পর্যালোচনার জন্য আজ বিকেল ৩টায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে সভায় বসে ইসি। সভায় সিইসি এএমএম নাসিরউদ্দিনের সঙ্গে চার কমিশনার উপস্থিত ছিলেন।
সভা শেষে ব্রিফিংয়ে কমিশনার মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘আপিল বিভাগ জামায়াতের নিবন্ধন পূর্বাপর অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার আদেশ দিয়েছে। অতিসত্ত্বর জামায়াতে ইসলামী তাদের নিবন্ধন ফিরে পাবে, সে ব্যবস্থা আমরা গ্রহণ করছি। পাশাপাশি দলটি তাদের প্রতিনিধি দলের মাধ্যমে আমাদের কাছে আবেদন করেছিল, যেন তাদের প্রতীক দাঁড়িপাল্লা ফেরত পান। আমরা বিশদভাবে তা পর্যালোচনা করেছি।’
জামায়াতে ইসলামীর প্রতীক ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ আরও বলেন, ২০১৩ সালে বাতিলের আগে দলটির নিবন্ধনের সঙ্গে প্রতীক কি ছিল তা আমরা বিবেচনায় নিয়েছি। দ্বিতীয়ত, ৫ নভেম্বর ২০০৮ সালে নিবন্ধন দেওয়ার সময় জামায়াতে ইসলামীর প্রতীক ছিল দাঁড়িপাল্লা। তৃতীয়ত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের চ (১) (খ) বিবেচনায় নিয়েছি।
আদালতের ফুল কোর্টের সভার প্রশাসনিক পত্রে জামায়াতের প্রতীক বাতিল প্রসঙ্গ উল্লেখ করে ইসি সানাউল্লাহ বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী তাদের আবেদনের সঙ্গে ২০০৬ সালের একটি রিট পিটিশন (৩৭৯৭/২০০৬) রেফারেন্স হিসেবে জমা দিয়েছেন। এটিতে দাঁড়িপাল্লা নির্বাচনী প্রতীক হিসেবে ব্যবহারে আদালতের মান ক্ষুণ্ন হবে না বলে রায় দেওয়া হয়েছে। এবং এটি এখনো বলবৎ আছে।’
আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, সবকিছু বিবেচনায় ইসি নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে জামায়াতে ইসলামকে তাদের প্রতীক ফিরিয়ে দেওয়া হবে। অর্থাৎ দলটি তাদের প্রতীক ও নিবন্ধন দুটোই ফিরে পাবে। তবে দলীয় প্রতীক যেহেতু গেজেটভুক্ত করতে হবে, দাপ্তরিক প্রক্রিয়া আছে, একটু সময় লাগবে।’
বহাল থাকছে ইশরাকের প্রজ্ঞাপন
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে আপিল বিভাগের রায় কমিশন বিশদভাবে পর্যালোচনা করেছে জানিয়ে আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘আপিল বিভাগ নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা এবং সুপ্রিমেসি অন ইলেকশন ম্যাটার্স আবারও প্রতিষ্ঠা করেছেন। পূর্ববর্তী পাঁচটি মামলার রেফারেন্স দিয়েছেন, আমরা সেগুলো দেখেছি। তফসিল ঘোষণা থেকে গেজেট প্রকাশ পর্যন্ত ইসির দায়িত্ব। আপিল বিভাগের রায়ে গেজেট বাতিল হয়নি। সুতরাং নির্বাচন কমিশন তার যথাযথ দায়িত্ব পালন করেছে।’
২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটির সবশেষ নির্বাচন হয়। তাতে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেনকে পৌনে ২ লাখ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে মেয়র হন আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপস। ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর গেল ২৭ মার্চ ঢাকার নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল সেই ফল বাতিল করে অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে।
এরপর ২৭ এপ্রিল ইশরাককে ডিএসসিসি মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু তাকে যেন শপথ পড়ানো না হয় সেজন্য গত ১৪ মে হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করা করা হয়। অন্যদিকে ইশরাককে শপথ পড়ানোর দাবিতে ওইদিনই আন্দোলন শুরু করেন তার সমর্থকরা। তাদের আন্দোলনে দুই সপ্তাহ ধরে কার্যত অচল হয়ে আছে নগর ভবন।
বর্তমান ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে গত ১ জুন। গত ২৭ এপ্রিল গেজেট প্রকাশের পর শপথের ইস্যুটি নির্বাচন কমিশন, স্থানীয় সরকার, আইন মন্ত্রণালয়, সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগ পর্যন্ত গড়ায়।