কারাগারে ইডেনের সাবেক সেই শিক্ষার্থীকে বিয়ে করলেন নোবেল

ধর্ষণ মামলার বাদী ইডেন মহিলা কলেজের সাবেক সেই শিক্ষার্থীকে কারাগারে বিয়ে করেছেন গায়ক মাইনুল আহসান নোবেল। গতকাল বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) কারা কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রধান ফটকে তাঁদের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। এ সময় নোবেল ও সেই নারী এবং দুজনের পক্ষ থেকে চারজন সাক্ষী উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে ঢাকা বিভাগের কারা উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন্স) জাহাঙ্গীর কবির গণমাধ্যমকে বলেন, ধর্ষণ মামলায় গ্রেপ্তার গায়ক মাঈনুল আহসান নোবেলকে বিয়ে করার অনুমতি দেন আদালত। নোবেলের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট নাজমিন আক্তার গত বুধবার (১৮ জুন) বিয়ের আদেশ দেন।
নোবেলের আইনজীবী জসীম উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, আদালতে জামিন শুনানির সময় ধর্ষণ মামলার বাদী উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া আসামি নোবেলের পক্ষ থেকে আদালতে লিখিতভাবে বিয়ে করার জন্য অনুমতি চাওয়া হয়। বাদী ও আসামি উভয় পক্ষের সম্মতি সাপেক্ষে বিয়ের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন আদালত।
নথি থেকে জানা গেছে, গত ১৯ মে রাত ২টার দিকে ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টারের বাসা থেকে নোবেলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ইডেন মহিলা কলেজের সাবেক এক শিক্ষার্থীকে বাসায় আটকে রেখে জোর করে ধর্ষণের অভিযোগে রাজধানীর ডেমরা থানায় করা মামলায় তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরদিন ২০ মে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তাকে হাজির করে পুলিশ। এসময় মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। অপর দিকে নোবেলের আইনজীবী জামিনের আবেদন করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়া উদ্দিন আহমেদ তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
২০১৮ সালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নোবেলের সঙ্গে পরিচয় হয় ইডেন কলেজের ওই ছাত্রীর। এরপর তাদের মাঝে মাঝে যোগাযোগ হতো। গত বছরের ১২ নভেম্বর মোহাম্মদপুরে দেখা করার পর ওই ছাত্রীকে ‘স্টুডিও দেখানোর’ কথা বলে ডেমরার বাসায় নিয়ে যান নোবেল।
ওই বাসায় গিয়ে ছাত্রীকে আটকে রাখা হয়। তখন ছাত্রীটির ফোন ভেঙে ফেলা হয়, তাকে মারধর ও ধর্ষণ করা হয়, এমনকি ধর্ষণের ভিডিও মোবাইলে ধারণ করে ব্ল্যাকমেইল করা হচ্ছিল। পুলিশের দাবি, এসব কর্মকাণ্ডে নোবেলের ২-৩ জন সহযোগীও জড়িত ছিল।
সাত মাস ধরে ছাত্রীটি ওই বাসায় বন্দি ছিলেন। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নোবেলের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়, যেখানে তাকে একজন নারীকে সিঁড়ি দিয়ে টেনে হিঁচড়ে নামাতে দেখা যায়। ওই ভিডিও দেখে ছাত্রীর পরিবার তাকে চিনে ফেলেন এবং টাঙ্গাইল থেকে ঢাকায় এসে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন দেন।
পুলিশ ১৯ মে রাত সাড়ে ৯টার দিকে ওই বাসায় অভিযান চালিয়ে ছাত্রীটিকে উদ্ধার করে। অভিযানের সময় নোবেল পালিয়ে যান, তবে প্রযুক্তির সহায়তায় রাত ২টার দিকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশ আরও জানিয়েছে, নোবেল সীমান্ত পেরিয়ে দেশত্যাগের পরিকল্পনা করছিলেন। এজন্য একটি মাইক্রোবাসও ভাড়া করেছিলেন।