অর্থ সংকটে ব্যাহত ঋতুপর্ণার মায়ের চিকিৎসা

চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়কের মঘাছড়ি এলাকা থেকে পাহাড়ি আঁকাবাঁকা মেঠোপথ, পাহাড়, ছড়া পেরিয়ে প্রায় তিন কিলোমিটার হেঁটে যেতে হয় বাংলাদেশের নারী ফুটবলের অন্যতম উজ্জ্বল তারকা, এশিয়ার অন্যতম সেরা খেলোয়াড়, একুশে পদকপ্রাপ্ত ঋতুপর্ণা চাকমার গ্রামের বাড়িতে। দেশের ফুটবল জয়ের আনন্দ ছড়িয়ে দেওয়া এই কৃতি ক্রীড়াবিদের পরিবার আজ মায়ের চিকিৎসার অনিশ্চয়তায় দিশেহারা। নিয়মিত বেতন না পাওয়ায় মায়ের চিকিৎসা ব্যাহত হচ্ছে বলে জানালেন ঋতুপর্ণার মা।
গতকাল রোববার (৬ জুলাই) সরেজমিনে ঘুরে ঋতুপর্ণার পরিবারের সদস্য ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৫ সালে লিভার ক্যানসারে মারা যান ঋতুপর্ণার বাবা। ২০২২ সালে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটে মৃত্যু হয় একমাত্র ছোট ভাইয়ের। দেড় বছর আগে মায়ের শরীরেও ধরা পড়ে ক্যানসার। দেশের জন্য সাফ জয়ে গোল করে লাখো মানুষকে উল্লসিত করা ঋতু ও তার পরিবারে আজ বয়ে যাচ্ছে অর্থ সংকট আর অনিশ্চয়তা।
কাউখালীর ঘাগড়ার মঘাছড়ি গ্রামের মেয়ে ঋতুপর্ণা এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বে মিয়ানমারকে ২-১ এবং তুর্কমেনিস্তানকে ৭-০ গোলে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ম্যাচে জোড়া গোল করে দেশের জন্য গৌরব বয়ে এনেছিলেন। এছাড়া ২০২২ ও ২০২৪ সালে সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ের পর রাষ্ট্রীয় সংবর্ধনা আর নানা প্রতিশ্রুতি পেলেও সেগুলোর বাস্তবায়ন হয়নি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঘরের জন্য জমি নির্ধারণ করে ৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। রাস্তা নির্মাণের জন্যও বরাদ্দ রয়েছে।
ঋতুপর্ণার বোন পাম্পী চাকমা বলেন, ‘ঋতু দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনছে, আমরা চাই ও আরও ভালো খেলুক। তবে আমাদের মায়ের চিকিৎসার জন্য প্রতি মাসে অনেক টাকা লাগে। আমাদের কোনো আয় নেই। ঋতু যা পায়, তা দিয়েই চিকিৎসা চলছে। সরকারের কাছে আমাদের অনুরোধ, মায়ের চিকিৎসা, ঋতুপর্ণার নিরাপদ আবাসন এবং আমাদের কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করা হোক।’
ক্যানসারে আক্রান্ত ঋতুপর্ণার মা ভূজোপতি চাকমা বলেন, ‘খেলা শেষে ঋতু ফোন দেয়। স্বপ্ন দেখি, একদিন আমার মেয়ে বিশ্বকাপে খেলবে। এলাকার মানুষ ওর জন্য দোয়া করে। কিন্তু মেয়ের নিয়মিত বেতন না হওয়ায় চিকিৎসা চালানো কঠিন হয়ে পড়ছে। কষ্টের মধ্যেও মেয়ের সাফল্যে গর্ব হয়।’
স্থানীয় বাসিন্দা সূর্যমনি কার্বারী, ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক চন্দ্র দেওয়ানসহ আরও অনেকে জানান, ঋতুপর্ণার পরিবার একের পর এক দুর্ভোগের মুখোমুখি হয়েছে। এখন ক্যানসারে আক্রান্ত মায়ের চিকিৎসার জন্য আর্থিক সংকট মোকাবিলা করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তারা ঋতুর জন্য প্রতিশ্রুতি দেওয়া ঘর ও রাস্তা দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানান।
কাউখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাজী আতিকুর রহমান বলেন, ঋতুপর্ণার বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা তৈরির কাজ চলমান। ঘরের জমি নির্ধারণ সংক্রান্ত মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেতে কিছুটা সময় লাগছে। আশা করছি, এক সপ্তাহের মধ্যে অনুমোদন পাওয়া যাবে। ইতোমধ্যে ঘর নির্মাণের জন্য জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে এবং ইট, বালু কেনা হয়েছে। সরকার ঋতু ও তার পরিবারের পাশে রয়েছে।