এক ব্যক্তি ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন, একমত সব দল

এক ব্যক্তি জীবনে ১০ বছর প্রধানমন্ত্রীর পদে থাকতে পারবেন বলে একমত হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। একইসঙ্গে তারা স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনেও একমত হয়েছে।
আজ রোববার (২৭ জুলাই) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে চলমান দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের ১৯তম দিনে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ এসব কথা জানান।
আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমরা একটা বিষয়ে একমত হয়েছিলাম, কিন্তু সেটা বলা হয়নি। সেটা হলো প্রধানমন্ত্রী ১০ বছর মেয়াদে দায়িত্ব পালন করবেন। সনদে প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ ১০ বছর উল্লেখ করব। এ বিষয়ে আমরা কি একমত হয়েছি?’ এ সময় আলী রীয়াজ বলেন, এ বিষয়ে সালাহউদ্দিন আহমেদ সাহেব একটি শর্ত দিয়েছিলেন, সেটা কি এখনও আছে?’
পরে কথা বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘আমরা একবার বলেছি তো বলেছি, ১০ বছরর বেশি কোনো ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী পদে বহাল থাকবেন না। আমি বলেছিলাম, সংবিধান ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের কমিটি থাকলে বিষয়টি মানব না। আমরা এ হাউজের মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন নিয়োগ সংক্রান্ত বিধান সংবিধানে যুক্ত করব। এর বাইরে এ বিষয়ে আলোচনা হলে আমাদের শর্ত বহাল থাকবে। আশা করি, সেটা বিবেচনা করবেন। এখন ১০ বছরের বিষয়ে আপনারা ঘোষণা দিতে পারেন, বরং এটা আমাদের প্রস্তাব।’
এর আগে, আলোচনার শুরুতে বাংলাদেশ পুলিশের পেশাদারিত্ব ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে ‘স্বাধীন পুলিশ কমিশন’ গঠনের প্রস্তাব রাজনৈতিক দলগুলোর সামনে উপস্থাপন করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। পরে দলগুলো আলোচনা করে স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনে একমত হয়। তবে আইনি কাঠামো নিয়ে আলোচনা হবে।
এ বিষয়ে আলী রীয়াজ বলেন, ‘পুলিশ কমিশনের বিষয়ে আমরা একমত। গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে আমরা আলোচনা করব। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো আলাপ-আলোচনায় একটি স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনে একমত হয়েছে। যা পুলিশের জবাবদিহিতা ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করবে, জনবান্ধবতা নিশ্চিত করবে।’
পুলিশ কমিশনের প্রস্তাবে বলা হয়, ‘পুলিশ বাহিনী যেন একটি শৃঙ্খলিত বাহিনী হিসেবে আইনসম্মত ও দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে, তা নিশ্চিত করা হবে কমিশনের অন্যতম লক্ষ্য। একইসঙ্গে পুলিশ সদস্য ও সাধারণ নাগরিক—উভয় পক্ষের অভিযোগ নিষ্পত্তির দায়িত্বও এই কমিশনের ওপর ন্যস্ত থাকবে।’
প্রস্তাব অনুযায়ী, ‘বাংলাদেশ পুলিশ কমিশন (যা ‘কমিশন’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে) গঠিত হবে আপিল বিভাগের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে, যিনি ৭২ বছরের কম বয়সী হবেন। কমিশনের সদস্য সচিব হবেন অবসরপ্রাপ্ত একজন অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (অ্যাডিশনাল আইজিপি) পদমর্যাদার পুলিশ কর্মকর্তা, যিনি ৬২ বছরের নিচে থাকবেন।’
কমিশনে সরকার ও বিরোধী দল উভয় পক্ষের প্রতিনিধিত্ব থাকবে। এদের মধ্যে থাকবেন—সংসদে সরকার দলের নেতা (লিডার অব দ্য হাউস), বিরোধীদলীয় নেতা, জাতীয় সংসদের স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার (যিনি বিরোধীদল থেকে হবেন) একজন করে প্রতিনিধি। এ ছাড়া একজন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, যিনি হাইকোর্ট বিভাগে অন্তর্ভুক্ত এবং কমপক্ষে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন; একজন মানবাধিকার কর্মী, যিনি কমপক্ষে ১০ বছরের বাস্তব অভিজ্ঞতা সম্পন্ন; এবং একজন অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত আইজিপি পদমর্যাদার পুলিশ কর্মকর্তা সদস্য হিসেবে থাকবেন।
খসড়ায় বলা হয়েছে, কমিশনের অন্তত দুজন সদস্য নারী হতে হবে। কিছু নির্ধারিত সদস্য বাছাইয়ের জন্য একটি বাছাই কমিটি গঠনের প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে, যার সদস্য থাকবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এবং ১০ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক।
কমিশনের চেয়ারপারসন ও সদস্য সচিব পূর্ণকালীন দায়িত্ব পালন করবেন, বাকি সাতজন সদস্য স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। তবে বৈঠকে উপস্থিতি ও অন্যান্য দাপ্তরিক দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী সম্মানী বা ভাতা গ্রহণ করতে পারবেন।
কমিশনের চেয়ারম্যান, সদস্য সচিব ও অন্যান্য সদস্যদের দায়িত্ব, ক্ষমতা, জবাবদিহিতা, পদত্যাগ ও অপসারণের পদ্ধতি একটি আইন দ্বারা নির্ধারিত হবে। প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, কমিশনের নীতিগত ও নির্বাহী সিদ্ধান্ত গ্রহণে সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে তা অনুমোদিত হবে।